ইনস্টাগ্রামের জীবনদর্শন
২৩ এপ্রিল ২০১৮স্যান ফ্রান্সিসকোয় গেলে ফটো না তুলে উপায় নেই, শহরটাই এমন সব দর্শনীয় বস্তুতে ভরা৷ আবার শুধু স্ন্যাপশটে চলবে না, কেননা ছবিগুলো ইনস্টাগ্রামে আপলোড করে লাইক সংগ্রহ করতে হবে৷ সেজন্য ছবিগুলো পার্ফেক্ট হওয়া চাই, বলে ক্রিস্টিন ট্র্যান-এর মতো৷ ক্রিস্টিন হলেন একজন তথাকথিত ‘ইনফ্লুয়েন্সার’, কাজেই তিনি আজ নিজে সেল্ফি না তুলে, একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়ে নিজের ছবি তোলান৷
পেশাদার ইনস্টাগ্রামার হিসেবে তাঁর প্রোফাইলের মধ্যে টার্গেট গ্রুপের উপযোগী বিজ্ঞাপন দেওয়া থাকে৷ বিশেষ বিশেষ জায়গায় ক্রিস্টিনের ছুটি কাটানোর ছবি যাতে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়, সেজন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলো রীতিমতো পয়সা দিয়ে থাকে৷
ট্র্যান বলেন, ‘‘কোনো কোনো ইনস্টাগ্রামার ছবি প্রতি হাজার-দু'হাজার ডলার চার্জ করে থাকে, বলে আমার ধারণা....আবার কেউ কেউ শুধু কয়েকশ’ ডলার নেয়, কাজেই রেঞ্জটা খুব বড়....তবে এ থেকে সহজেই মাসে হাজার দুয়েক ডলার কি তারও বেশি রোজগার করা যায়৷’’
ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপনের পুরো প্রক্রিয়াটা পরিচালিত হয় এখান থেকে, মেনলো পার্কে ইনস্টাগ্রামের হেডকোয়ার্টার্স থেকে৷ ফেসবুক সংস্থা ২০১২ সালে মোট ৭৬ কোটি ইউরো মূল্যে ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয়৷ আজ মেনলো পার্কে মোট ৫০০ কর্মী ইনস্টাগ্রামের ৮০ কোটি ইউজারের দেখাশোনা করেন৷
ইনস্টাগ্রামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক ক্রিগার বললেন, ‘‘মানুষজনের দুনিয়াটাকে দেখার ভঙ্গিই কিছুটা পালটে যায়৷ ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ আর তার ব্যবহারকারীরা সেটা নিয়ে কি করছে, এই দুই-এর পারস্পরিক প্রভাবটা খুবই কৌতূহলজনক৷ লোকে যখন বলে, ‘আজ আমি অনেক কিছু দেখি, অনেক কিছু খেয়াল করি’ – তখন আমার খুব ভালো লাগে৷ যেন তারা নতুন চোখ দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখছে৷’’
কি চোখে তোমায় দেখি
শুধু দুনিয়া দেখার ভঙ্গিই যে পালটে যায়, এমন নয়৷ পৃথিবীটাও ইনস্টাগ্রামের জন্য বদলে যাচ্ছে৷ যেমন এক ডিজাইনার একটি রেস্তোরাঁ অত্যন্ত ‘ফটোজিনিক’ করে গড়ে তুলেছেন৷ অনেক আলো, খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে৷ অতিথিরা মনের সুখে ছবি তুলতে পারেন৷ তাতে কাজ হয়েছে, ইনস্টাগ্রামে রেস্তোরাঁর ছবি ভরে গেছে৷
ডিজাইনার হানা কলিন্স-এর মতে, ‘‘জিনিসপত্রের নানা নকশা থাকে, টেক্সচার থাকে, যা তাদের নিজস্ব৷ তাই দেখে লোকে বলে, ‘ওয়াও, এটা তো আমি আগে দেখিনি৷ একটা ছবি তুলতে হবে৷’’
ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্য বিষয় অনুযায়ী ছবি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ইনস্টাগ্রামে খারাপ বা বেদনাদায়ক ছবির কোনো জায়গা নেই৷ জীবনের ছায়াময় দিকটা এখানে ফিল্টার করে বার করে দেওয়া হয়, বলে মনে করেন স্যান ফ্রান্সিস্কোর ফাইন আর্টস মিউজিয়ামের অধ্যক্ষ ম্যাক্স হলাইন৷
ফাইন আর্টস মিউজিয়ামের কর্মী ম্যাক্স হলাইন বললেন, ‘‘শুরুতে ফেসবুক অথবা অন্যত্র ‘লাইক’-এর যে অর্থ ছিল, তা ধীরে ধীরে খোয়াতে বসেছে, বলে আমার ধারণা৷ আজ ঐ ‘লাইক’ শুধুমাত্র একটা স্বীকৃতি যে, আমি তোমার পোস্টটা দেখেছি – যেটা এসেছে মার্কিন সংস্কৃতি থেকে, যেমন এখানে সকলেই বলে, ‘ইট'স গ্রেট’৷’’
ইনস্টাগ্রাম হবে হেট স্পিচ আর ফেক নিউজ বর্জিত একটি সহজ-সরল নেটওয়ার্ক – কিন্তু দ্বিধা থেকেই যায়: যেমন বিজ্ঞাপনের কী ও কেন এবং বাস্তবই বা কী৷
ইনস্টাগ্রাম বলে, অতো জেনে কি হবে, সুন্দর হলেই হলো৷
স্প্রেয়ে/হর্ন/এসি
২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...