1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইসলামের প্রভাব

১৬ এপ্রিল ২০১৯

ইন্দোনেশিয়ার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক ইসলাম' গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটারদের বড় অংশ তরুণরাই এখন রক্ষণশীল ইসলামের সমর্থক৷

https://p.dw.com/p/3Grlm
Indonesien Demonstrationen gegen das Anti-Porno-Gesetz in Jakarta
ছবি: picture alliance/dpa/EPA/A. Weda

১৭ এপ্রিল ভোটের মাধ্যমে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড়  মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া৷ ১৯৯৮ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরুর পর দেশটি ধর্ম আর রাষ্ট্রকে পৃথক হিসেবে রাখার শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে৷ কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলে গেছে৷  ‘‘ধর্মের ভূমিকাকে এখন ছোট করে দেখা উচিত হবে না৷ এটি রাজনীতিকে পরিচালনা করছে এবং সব পক্ষই তা ব্যবহার করছে,'' বলেন জার্মান গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ইসলামের পরিচালক সুজানে শ্র্যোটার৷

তাঁর কথার প্রমাণও মিলছে৷ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো লাড়ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ানদোর বিপক্ষে৷ যিনি জকোভিকে যথেষ্ট ‘ইসলাম ভাবাপন্ন নয়' বলে আক্রমণ করছেন৷ তিনি যথাযথ উচ্চারণে আরবি পড়তে পারেন না বলেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে সুবিয়ানদোর নির্বাচনি শিবির থেকে৷ জোকোভি যে মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন, সে বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে তা সামাল দিচ্ছেন তাঁর সমর্থকরা ৷

দেশটির রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব কতটা প্রকট হয়ে উঠছে সেটি পরিস্কার হয়ে ওঠে ২০১৭ সালে জাকার্তার গভর্নর নির্বাচনেই৷ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীর ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অমুসলিম গভর্নর ছিলেন বাসুকি জাহায়া পুর্নামা, যিনি আহোক নামেই বেশি পরিচিত৷  ২০১৬ সালে নির্বাচনি প্রচারের এক বক্তৃতার সূত্র ধরে তাঁকে কোরান নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জন্য অভিযুক্ত করা হয়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় উগ্র ইসলামিক সংগঠনগুলো ২০১৬ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাস্তায় নামে এবং বড় আকারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে৷ ২০১৭ সালের মে মাসে ব্লাসফেমি আইনে তাঁকে ২১ মাসের কারদণ্ড দেয়া হয়৷ 

ইন্দোনেশিয়া বিশেষজ্ঞ ব্যার্থল্ড ডামহয়জার বলেন, ‘‘এই রায় দেশটির জন্য একটি কলঙ্ক এবং ইন্দোনেশিয়ায় বেড়ে চলা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শক্তিশালী উদাহরণ৷'' তাঁর মতে, অনেক তরুণ ইন্দোনেশিয়ান এখন শরীয়া আইন বাস্তবায়নকে সমর্থন দিচ্ছেন৷ তাঁদের একটি অংশ এমনকি কথিত ‘ইসলামের শত্রুদের' বিরুদ্ধে সহিংস পদক্ষেপ নেয়ারও পক্ষপাতী৷ এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটির ভোটারদের ৮০ ভাগইক ছিল ১৭ থেকে ৩৪ বছর বয়সি৷ 

ইসলামী সংগঠনগুলোর ইতিহাস

দেশটির রাজনীতিতে ইসলামের প্রভাব দেশের ভেতর ও বাহির দুই দিক থেকেই এসেছে৷ সুজানে শ্র্যোটারের মতে, তাদের মূল শেকড়টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ইন্দোনেশয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার৷

স্বাধীনতার পরে এই গোষ্ঠীগুলো ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেনি৷  ধর্মীয় পরিচয়ের বদলে সাবেক প্রেসিডেন্ট সুকর্ন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদে ‘পঞ্চশীলকে' প্রাধান্য দেন, যা দেশটির সংবিধানের প্রাস্তবনাতেও উল্লেখ রয়েছে৷

পঞ্চশীলের মূল বিষয় ছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা৷ ৫টি নীতির মধ্যে প্রধান ছিল ধর্মীয় বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার৷ সুকর্নর পরে ক্ষমতায় আসেন কর্তৃত্বপরায়ন শাসক সুহার্তো৷ তিনিও উগ্র রক্ষণশীল মুসলিমদের রাজনীতিতে তেমন একটা প্রশ্রয় দেননি৷

সুজানে শ্র্যোটারের মতে, ১৯৯৮ সালে গণতন্ত্রের সংস্কারের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থিরা জনমনে একটি জায়গা করে নেয় এবং পরবর্তীতে সংগঠিত হওয়ারও সুযোগ পায়৷ এরপরে ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় সৌদি আরবের রক্ষণশীল ‘ওহাবিজম' মতাদর্শের প্রভাবও তৈরি হয়৷

সুজানে শ্র্যোটার বলেন, সে সময় শিক্ষা বৃত্তির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষার্থীরা সৌদি আরবে যেতো৷ পরে তাঁরা উগ্র রক্ষণশীল আদর্শ নিয়ে দেশে ফিরে তা ছড়িয়ে দিতে লাগল৷ 

ডামহয়জার বলেন, দেশটিতে বর্তমানে ‘পেসন্ত্রেন' নামে পরিচিত ধর্মীয় বিদ্যালয় অনেক বেড়েছে৷ বিদেশি অর্থে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে রক্ষণশীল ধারার ইসলামের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে৷ এ কারণেই   তরুণ ইন্দোনেশিয়ানরা  বেশি মাত্রায় মৌলবাদী হয়ে উঠছে৷

গণতন্ত্রীদের পতন

ইন্দোনেশিয়ার পরিবর্তীত এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির রাজনীতিবিদদেরও দায়ী করছেন সুজানে শ্র্যোটার৷ তাঁরা পঞ্চশীলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ইন্দোনেশিয়ার সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন তিনি৷ নিজের প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট জোকোভি মানবাধিকার কিংবা ধর্মীয় প্রভাব মোকাবেলায় তাঁকে নিয়ে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ‘‘ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক এলিটরা অনেক ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তার জন্য আদর্শের সাথে প্রতারণা করতে আগ্রহী,'' বলেন ডামহয়জার৷

তাঁর মতে, জোকোভিও তাঁর অবস্থান থেকে সরে এসে সমঝোতার পথেই হাঁটছেন৷ কোনো ধরণের অস্থিরতা তৈরি হোক এমন ঝুঁকি তিনি নিতে চাইবেন না৷

রোডিওন এবিগহাউজেন/এফএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান