ইবোলার ওষুধ বানাচ্ছে চীন
২৬ অক্টোবর ২০১৪পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা আক্রান্তদের জন্য এটা টানেলের শেষপ্রান্তে আলোর দেখা পাওয়ার মতো ঘটনা হতে পারে৷ নতুন এক ওষুধের খবর আসছে, আর সেটা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে নয়, চীন থেকে৷ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানি সিহুয়ান ফার্মাসিউটিক্যালস সম্প্রতি জেকে-০৫ নামের একটি পরীক্ষামূলক ওষুধের কয়েক হাজার ডোজ আফ্রিকায় পাঠিয়েছে৷ ঐ অঞ্চলে থাকা চীনা সাহায্য কর্মীরা যদি ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাদের জন্যই এই ওষুধ পাঠানো হয়েছে৷ তবে চীনের ‘অ্যাকাডেমি অফ মিলিটারি মেডিক্যাল সায়েন্স' এর সঙ্গে মিলে ওষুধ কোম্পানিটি আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে যেন চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই আফ্রিকার রোগীরা ওষুধটি ব্যবহার করতে পারেন৷
গবেষণাগারে জেকে-০৫ উৎসাহমূলক কার্যকারিতা দেখিয়েছে৷ তবে মানবদেহে এখনো এই ওষুধের কোনো পরীক্ষা চালানো হয়নি৷ সে কারণে এখন পর্যন্ত শুধু জরুরি সামরিক প্রয়োজনে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ মানবদেহে পরীক্ষা সফল হলে চীনা এই ওষুধটি ইবোলা চিকিৎসায় বড় পরিসরে ব্যবহার করতে পারা প্রথম ওষুধ হতে পারে৷ কারণ সাধারণ রাসায়নিক কাঠামোর কারণে ওষুধটি সহজেই ব্যাপক হারে উৎপাদন করা সম্ভব৷ যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষামূলক ইবোলা ওষুধ জিম্যাপ এর চেয়ে এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে জেকে-০৫, কারণ পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকার পরও জিম্যাপ এর মজুদ কমে আসছে৷
ভাবমূর্তি-বাড়ানো ওষুধ
এক দশক আগে যখন সার্স ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল তখন চীনা সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল৷ তখন তারা খুব তাড়াতাড়ি সার্সের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছিল৷ এতে করে মহামারিটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল৷ এবারও দ্রুত ফল পেতে ব্যাপক রাজনৈতিক চাপ রয়েছে৷ এটা সম্ভব হলে বেশ ভালো হবে – এবং সেটা শুধু পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা আক্রান্ত এলাকায় থাকা হাজার হাজার চীনা নাগরিকের জন্য নয়৷
বেইজিং মনে করছে তাদের উদ্ভাবিত ওষুধটা রাজনৈতিকভাবেও বেশ কাজের হবে৷ এর ফলে পশ্চিমে ও আফ্রিকায় চীনের সমালোচকদের কাছে চীনের ভাবমূর্তি বাড়তে পারে৷ সে কারণে সরকার এমন এক খাতে অর্থ, সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করছে, যেটা চীনের নিজের জন্য অতটা জরুরি নয়৷ এছাড়া ওষুধ উদ্ভাবনের ব্যাপারটি দেশের ভিতরে ভাবমূর্তি বাড়াতে কাজে লাগাতে পারে সরকার৷ এক্ষেত্রে সরকার এটা বলতে পারে যে, ইবোলার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে চীনই বেশি সফলতা দেখিয়েছে৷
এখন পর্যন্ত সীমিত আর্থিক সহায়তা
আফ্রিকার জনগণের মানবাধিকার আর প্রয়োজনের দিকে নজর না দিয়ে ঐ মহাদেশ থেকে চীন শুধু মুনাফা বা লাভ খুঁজে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের৷ ইবোলার ক্ষেত্রেও চীন এখনও সেই পর্যায়েই আছে – অন্তত পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে৷ ইবোলা আক্রান্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা না দেয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বেইজিং৷ পরিসংখ্যান বলছে, ইবোলা মোকাবিলায় ইউরোপ ৫৭০ মিলিয়ন ডলার ও যুক্তরাষ্ট্র দেড়শো মিলিয়ন ডলার অঙ্গীকার করেছে৷ সেখানে চীন করেছে ৪০ মিলিয়ন ডলার৷ পরিসংখ্যান দেখে সবাই ধারণা করতে পারে যে, আফ্রিকার এই দুঃসময় নিয়ে চীন ততটা পরোয়া করছেনা৷ ব্যক্তিগতভাবে বিল গেটস তাঁর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫০ মিলিয়ন ডলার ও ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গ ২৫ মিলিয়ন ডলার অঙ্গীকার করেছেন৷
তবে বেইজিং যে ওষুধ বের করতে অর্থ বিনিয়োগ করছে সেটা এই হিসাবের মধ্যে নেই৷ বেইজিং অবশ্য এটা বলতে পছন্দ করে যে, তারা আফ্রিকার অবকাঠামো উন্নয়নে অন্যদের চেয়ে বেশিই বিনিয়োগ করেছে৷ সড়ক, বিদ্যুৎ, টেলিকম নেটওয়ার্ক সবকিছুই ইবোলার বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে৷ ফলে নিজের বিরুদ্ধে থাকা পুরনো অভিযোগ খণ্ডাতে পারে চীন৷ সম্প্রতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোরঁ ফাবিয়ুস ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যৌথভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাঁরা ইবোলার বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়বেন৷
যৌথ গবেষণার পরিমাণ বাড়ানো হবে এবং মহামারি প্রতিরোধের মতো বিষয়ে নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে৷ এই দুই দেশ পশ্চিম আফ্রিকার সঙ্গেও সহযোগিতা বাড়াতে চায়৷ ফ্রান্স চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চাইছে যেন নিজেদের দুর্বল অর্থনীতি বাঁচাতে ফ্রান্স কিছু চুক্তি পেতে পারে৷ ইবোলাকে বিভিন্ন দেশের প্রতিদিনকার রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ করাটা হয়ত নৈরাশ্যজনক মনে হতে পারে৷ তবে ভুক্তভোগীদের জন্য হয়ত সুবিধাই হবে৷