ইমনের মৃত্যুতে শোক
১১ জানুয়ারি ২০১৩‘বাংলা ব্লগিং জগতের অন্যতম নক্ষত্র, আমাদের প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাই আর আমাদের মাঝে নেই...', ব্লগার রেজওয়ানা ৪ঠা জানুয়ারি ঠিক এই শিরোনামেই জানিয়েছিলেন ইমনের চলে যাওয়ার সংবাদ৷ অথচ এই ব্লগার মৃত্যুর আগের দিনও লিখেছেন নিবন্ধ, প্রকাশ করেছেন তা সামহয়্যার ইন ব্লগে৷ কে জানতো, সেটাই তাঁর শেষ নিবন্ধ৷
সামহয়্যান ইন ব্লগে মাত্র চার বছর তিন মাস সময়ে ইমন জুবায়ের জয় করে নেন অসংখ্যা ব্লগারের মন৷ রেজওয়ানাও তাঁদের একজন৷ যদিও জীবিত ইমনের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি তাঁর৷ তবে চিরনিদ্রায় শায়িত ইমনকে দেখেছেন তিনি৷ এই ব্লগারের লেখনির শক্তি সম্পর্কে রেজওয়ানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁর অনেক লেখার কথাই আমার মনে আছে৷ তিনি আমার জন্মদিন নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন৷ আমার ভালো লেগেছিল কলকাতার ব্যান্ড দল ‘মহিনের ঘোড়াগুলি' নিয়ে লেখা তাঁর একটি পোস্ট৷ এছাড়া ওনার লেখা অনেকগুলো গল্পের কথাই মনে আছে৷ যেমন, ‘স্পর্শ' নামের একটা গল্প৷ তিনি ইতিহাস উপজীব্য গল্প লিখতেন৷''
ইন্টারনেট ক্লিকের বিচারে একটি ব্লগের জনপ্রিয়তা নির্ণয় করা কঠিন৷ বিভিন্ন কারণে একটি ওয়েবসাইটে প্রচুর সংখ্যক ক্লিক পড়তেই পারে৷ কিন্তু তারপরও যদি হিসেবটা করা হয়, তাহলে ইমন জুবায়েরের ব্লগটি ১০ই জানুয়ারি অবধি প্রদর্শিত হয়েছে প্রায় সাত লাখবার৷ সর্বশেষ তিনি লিখেছেন, ২রা জানুয়ারি৷ মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে৷ শিরোনাম, ‘অতিপ্রাকৃত গল্প: সতরই জুলাই'৷
রেজওয়ানা তাঁর নিবন্ধে জানিয়েছেন, ইমনের এই অকাল প্রয়াণের কারণ ‘শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা'৷ কতই বা বয়স হয়েছিল তাঁর? জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি৷ বেঁচে থাকলে ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বয়স হতো ৪৬ বছর৷ প্রাণবন্ত এই ব্লগাররে অকাল প্রয়াণে শোকে মুহ্যমান বাংলা ব্লগ সম্প্রদায়৷ সামহয়্যার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এত অল্প বয়সে এবং এত পরিচিত, এত আপন একজন ব্লগারের মৃত্যু গোটা ব্লগ সম্প্রদায়ে একটি শোক এনে দিয়েছে৷ উনি ব্লগে সবসময় সক্রিয় থাকতেন৷ তিনি শুধুই লিখতেনই না, কমেন্ট করতেন, আলোচনায় অংশ নিতেন তিনি৷ অসম্ভব জনপ্রিয় এবং একজন ভীষণ নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন তিনি৷''
ইমন জুবায়েরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসংখ্য নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন ব্লগররা৷ প্রিয় ব্লগে গালিব মেহেদী খান লিখেছেন, ‘‘ব্লগার ইমন জুবায়ের – একটি নক্ষত্র পতন৷'' পিপলস ব্লগের শিরোনাম, ‘জনপ্রিয় ব্লগার ইমন জুবায়ের আর নেই'৷ এই বিষয়ে সামহয়্যার ইন ব্লগে স্মৃতিচারণমূলক অনেক পোস্ট করেছেন কেউ কেউ৷ সায়মা লিখেছেন, ‘আমার ইমন জুবায়ের ভাইয়া'৷ শাহরিয়ার এম-এর শিরোনাম, ‘ঘুমান ইমন জুবায়ের'৷
ব্লগার ইমন জুবায়েরকে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভালোভাবে মনে রাখতে পারে, নতুন ব্লগাররা যেন তাঁর লেখা থেকে অনুপ্রেরণা পায়, সেজন্য এক প্রস্তাব দিলেন রেজওয়ানা৷ তিনি এবং তাঁর পরিচিত ব্লগাররা চান, সামহয়্যার ইন ব্লগের প্রথম পাতায় কোনো এক উপায়ে সবসময় ইমন জুবায়েরের ব্লগের লিংক রাখা হোক৷ রেজওয়ানা বলেন, ‘‘সামহয়্যার ইন ব্লগে তিনি লিখতেন৷ অন্য কোনো বাংলা ব্লগে তাঁর নিবন্ধন ছিল না৷ উনি একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন৷ এবং একজন ব্লগার কত ধরনের লেখা লিখতে পারে তা ওনার ব্লগ থেকে বোঝা যায়৷ নতুন ব্লগাররা যেন এসব বিষয় জানতে পারে, সেজন্য আমরা চাই ওনার ব্লগের লিংকটা যেন প্রথম পাতাতেই সবসময় রাখা হয়৷''
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জানা বলেন, ‘‘আমরা ইমন জুবায়েরের স্মরণে অবশ্যই উদ্যোগ নেবো৷ বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে৷''