বিশ্বজিতের মৃত্যু
১২ ডিসেম্বর ২০১২দর্জির দোকানে কাজ করতেন বিশ্বজিৎ৷ জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনের মতো রবিবার সকালেও সেখানেই যাচ্ছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেদিন আর দোকান অবধি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি৷ ঢাকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে ছাত্রদল কর্মী সন্দেহে জনসমক্ষে কোপায়৷ প্রাণপণ চেষ্টা করেও বাঁচতে পারেননি, হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান তিনি৷
রবিবার অবরোধের ডাক দিয়েছিল বিরোধী দল৷ অবরোধ চলার সময়ই ঘটে মর্মান্তিক এ ঘটনা৷ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের বিশ্বজিৎকে কোপানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন সাংবাদিকরা৷ সেখানে খুনিদের চেহারা স্পষ্ট৷ তাসত্ত্বেও পুলিশ শুরুতে সেসব চেহারা শনাক্তই করতে চায়নি৷ তাতে অবশ্য ঘৃণা, নিন্দা, ক্ষোভ প্রকাশ থেমে থাকেনি৷ ঘটনার প্রতিবাদে ব্লগ, ফেসবুকও সরব৷ কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে আশিস মন্ডল লিখেছেন, ‘আমিও একজন বিশ্বজিৎ৷' বিশ্বজিতের পরিচিত এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘কে জানে আগামীকাল বাইরে বের হলে আমি আর বাসায় ফেরত আসতে পারব কিনা৷ নাকি আমিও নতুন একজন বিশ্বজিৎ হব, টি ভি- পত্রিকার শিরোনাম হব! কেউ কেউ হয়ত গভীর মমতায় আমার জন্য দু'ফোটা চোখের জলও ফেলবে কিন্তু একসময় এসবই থেমে যাবে, থামবে (কমবে) না কেবল বিশ্বজিতদের সংখ্যা৷''
একই ব্লগ সাইটে আরেক ব্লগার কামাল আহমেদ বিশ্বজিতের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের এ হামলার কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম, ‘প্রাণভিক্ষা চেয়েও বাঁচতে পারেনি বিশ্বজিৎ৷' ব্লগার আবু সুফিয়ান জানান, বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রাজপথে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে তাঁকে (বিশ্বজিৎ) অত্যন্ত নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং বিশ্বজিৎ যখন পালিয়ে পাশের ন্যাশনাল হাসপাতালে ঢোকার চেষ্টা করছিল, সেখানে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ বাঁচার কোনো রকমের সুযোগই তাঁকে দেওয়া হয়নি৷''
সুফিয়ান বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত৷ ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক৷ একজন ব্লগার হিসেবে আমি ঘৃনা জানাই৷''
আমার ব্লগ ডটকমে ব্লগার রীতা রায় মিঠু'র নিবন্ধের শিরোনাম, ‘যে ছবি কথা বলছে, যে ছবি কথা বলবে৷' বিশ্বজিতের মায়ের উদ্দেশ্যে নিবন্ধের একাংশে মিঠু লিখেছেন, ‘‘আপনার ছেলেটিকে, আপনার তরতাজা ছেলেটিকে অহেতুক, বিনা কারণে, বিনা দোষে কিছু ‘বীরপুরুষ' দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে!! মাগো, আপনার বুকে যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে, যতক্ষণ তার তাপ আমাদের কারো গায়ে না লাগবে, ততদিন আমরা আপনার কষ্ট বুঝবো না৷''
আবু সুফিয়ান জানান, প্রতিটি কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সাইটেই বিশ্বজিৎকে নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন ব্লগাররা৷ এ সময় কিছু উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি, ‘‘এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের পাঁচজন খুনিকে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ব্লগাররা৷ পিপলসব্লগের ব্লগার মুন্না লিখেছেন, ‘শুধু অভিশাপ চাই, অভিশাপ দেও আমায়৷ ক্ষমা নয় বিশ্বজিৎ'৷ আরেকজন ব্লগার যিনি সৌদি আরবে থাকেন, লিখেছেন ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বলী বিশ্বজিৎ'৷ আরেক ব্লগার মেফতাউল ইসলাম লিখেছেন, ‘বিশ্বজিৎরাই মরবে'৷ এরকম অনেক লেখা বাংলা ব্লগে নিয়মিত আসছে৷''
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্লগে ব্লগার ওয়াসিফ এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রের ফল? বিশ্বজিৎ আমাদের তুমি ক্ষমা করে দিও…৷' আক্ষেপের সুরে ওয়াসিফের মন্তব্য, ‘‘আমাদের দেশে এমন ঘটনা সহজেই মানুষ ভুলে যায়৷ আইনের ফাঁক দিয়ে ঠিকই তাদের (খুনিদের) কর্তারা তাদের বের করে আনবে৷''