ইরানে ডিপ্রেশন
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩‘‘আমার জীবনে যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তা হলে দেশ ছাড়তে হবে আমাকে৷ ভবিষ্যৎটা আমার অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে৷'' বলেন তেহরানের ২৩ বছর বয়সি ছাত্র কাভে ৷ কঠিন ডিপ্রেশনে ভুগছেন এই তরুণ৷
‘‘শুধু আমি একাই নই, আমার পরিচিত অনেকেই আজ এই সমস্যায় ভুগছেন'', জানান কাভে৷
আসল সংখ্যাটা অনুমান করা কঠিন
তাঁদের আসল সংখ্যাটা কত হবে, তা অনুমান করা খুব কঠিন৷ ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন কর্মী সংস্কারপন্থি আলি আকবর সায়ারির মতে, মানসিক সমস্যার কবলে পড়া মানুষদের সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ ইরানি মানসিক রোগে ভুগছেন৷
সরকারি তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা অবশ্য অনেক কম৷ সদ্য বিদায়ি আহমাদিনেজাদ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানসিক রোগীদের সংখ্যা অল্প কয়েক বছরের মধ্যে ১৯ থেকে ২৩ শতাংশ বেড়েছে৷ এঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্য ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মানসিক সমস্যায় ভোগেন৷
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের কঠোর আইন-কানুনও মানসিক অসুস্থতার একটা কারণ, বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ ইরানের শিশু কিশোর মনস্তত্ত্ববিদ ও থেরাপিস্ট মোজগান কাহেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘স্কুলে যৌনতাকে পাপজনক বিষয় বলে ধারণা দেওয়া হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তীতে তা নারী ও পুরুষের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷''
মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক পদ্ধতি দায়ী
ইরানের সমগ্র রাজনৈতিক ও সামাজিক পদ্ধতিই তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, বলেন থেরাপিস্ট কাহেন৷ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার অত্যন্ত সীমিত৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায় ভিন্নমতাবলম্বীদের নানা অজুহাতে বন্দি করা হচ্ছে৷ ধর্ম-পুলিশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখে মেয়েরা পর্দা মনে চলছেন কিনা বা হিজাব পড়ছেন কিনা৷
ডিসকো, পার্টি এসব নিষিদ্ধ৷ তরুণরা তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্খাকে দমন করে রাখতে বাধ্য হয়৷ এসবও ডিপ্রেশনের প্রধান কারণ, জানান মনস্তত্ত্ববিদ কাহেন৷ তরুণরা স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তরুণদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারেন৷
মনস্তত্ত্ববিদ ও থেরাপিস্ট রেজা কাজেমজাদে মনে করেন, ‘‘সমাজের ঐতিহ্যগত নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে আধুনিক জীবনধারার পার্থক্যটা তরুণ ইরানিরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন৷ তাঁরা অন্যান্য দেশের সমবয়সিদের মতো আচার আচরণ করতে পারেন না বা চলতে ফিরতে পারেন না৷ কেননা শাস্তির ভয় থাকে তাঁদের৷''
অনেক দ্বৈত জীবন যাপন করেন
তাই অনেকেই একটা দ্বৈত জীবন যাপন করতে বাধ্য হন৷ কাভে জানান, ‘‘আমাদের আশা আকাঙ্খা আমরা চার দেয়ালের মধ্যে পূরণ করতে চেষ্টা করি৷ কিন্তু যারা রক্ষণশীল পরিবারে বাস করেন, তাঁদের অবস্থা তো আরো করুণ৷''
তার ওপর অর্থনৈতিক সমস্যাটা বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সাথে অর্থনৈতিক সমস্যা যুক্ত হলে মানুষের মনের অবস্থা ভালো থাকাটা খুবই কঠিন, বলেন থেরাপিস্ট কাজেমজাদেহ৷ আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মানসিক অসুস্থতায় ভুগলেও থেরাপিস্টের কাছে যেতে পারেন না অনেকে৷
এছাড়া ডিপ্রেশন ইরানে একটি ট্যাবু বা নিষিদ্ধ বিষয়৷ অসুখটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ অনেক সময় শনাক্তও করা হয় না৷ অনেকেই থেরাপিস্টের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করেন৷ কাভে বলেন, ‘‘আশেপাশের মানুষের কাছে তো পাগল বলে গণ্য হতে পারি না আমি৷''