ইরানে ইন্টানেট
১৪ জানুয়ারি ২০১৩লক্ষ্য দৃশ্যত ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট৷ আবার ঠিক তা'ও না৷ দেশের জনগণ যা'তে সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত অ্যাক্সেস বা প্রবেশাধিকার পেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করাই এই নতুন সফ্টওয়্যারের উদ্দেশ্য৷ অন্তত ইরানি মিডিয়াকে তাই বলেছেন খোদ পুলিশ প্রধান এসমাইল আহমদি মোঘাদম৷
মোঘাদমের দাবি হল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলির ব্যবহারকারীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করলে ঐ নেটওয়ার্কগুলির ‘অসুবিধাকর' দিকগুলি বাদ দেওয়া যেতে পারে; যুগপৎ ইউজাররা সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলির ‘কার্যকর' কন্টেন্ট ঠিকই ব্যবহার করতে পারবেন৷ বলা দরকার, ইরানে পশ্চিমা সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলির প্রতি অ্যাক্সেস এমনতেই সীমিত ও ছাঁকাই করা৷
কাজেই এই নতুন ‘বুদ্ধিমান সফ্টওয়্যার'-ও সম্ভবত ইউজার কন্টেন্টের উপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার প্রচেষ্টার অঙ্গ, ইরান কয়েক দশক ধরে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে, যদিও তার নিজস্ব নেট স্পেস সৃষ্টির স্বপ্ন বোধহয় কোনোদিনই পূরণ হবে না৷ তবে ইরান যে ‘নেট'-এর গুরুত্ব বোঝে, তার প্রমাণ, সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই'এর প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি ফেসবুক পাতা দেশে-বিদেশে চাঞ্চল্য ও কৌতূহলের ঢেউ তুলেছে৷
ইন্টারনেট সেন্সরশিপ
ইন্টারনেট সেন্সর প্রথার পথিকৃৎ হল চীন৷ ইরান সেই চীনের সঙ্গে বহু বছরের সহযোগিতায় একটি আধুনিক ফিল্টারিং ও ট্রেসিং সিস্টেম গড়ে তুলেছে৷ কিন্তু ইরানের এই ছাঁকনি এবং খোঁজ পদ্ধতিতে বেশ কিছু গলদ রয়ে গেছে, কাজেই সেটা চীনের মতো অতোটা নিশ্ছিদ্র নয়, বলেন সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এক ইরানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, নিমা রশেদান৷ তাঁর মতে পুলিশ প্রধান আহমদি মোঘাদম নিজেই জানেন না, তিনি ঠিক কি নিয়ে কথা বলছেন৷ মোঘাদম যে ধরনের সফ্টওয়্যারের কথা বলছেন, তা সৃষ্টি করার মতো জ্ঞান বা অবকাঠামো ইরানের আছে বলে রশেদান মনে করেন না৷ যেখানে ইরান চীনের মডেলটাই ভালোভাবে কপি করে উঠতে পারেনি৷
নাগরিকদের পশ্চিমা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে যেতে না দিয়ে, বেইজিং সেগুলোর নানা চীনা সংস্করণ বাজারে ছাড়ে: যেমন ওয়াইবো, যা কিনা চীনের টুইটার; অথবা ইউকু, যা কিনা ইউটিউবের অনুরূপ৷ এবং এই নীতি সফলও হয়েছে: ওয়েবসাইটগুলি চীনে অবিশ্বাস্যরকম জনপ্রিয়৷ মজার কথা, ইরানও ফেসবুক এবং ইউটিউবের ইরানি সংস্করণ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যবহারকারীরা ত'তোদিনে আদত ওয়েবসাইটগুলিকে চিনে গেছে এবং ভালোবাসতে শিখেছে৷ কাজেই সম্প্রতি সরকার শুধু তাদেরই উচ্চগতির ইন্টারনেটে যেতে দিচ্ছেন, যারা ইরানি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলি ব্যবহার করবে৷
লক্ষ্যটা সহজ, কাজটা জটিল
ইরানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিকের মধ্যে আড়াই কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ সরকারের ইন্টারনেটের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকার ও যাবতীয় তথ্য পরখ করে দেখার অধিকার আছে৷ কিন্তু ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন, বাড়ছে তথ্যের পরিমাণ৷ ‘ডিপ প্যাকেট ইনস্পেকশন', এসএসএল অ্যাকসিলারেটর ডিভাইস, এ'সব পরীক্ষার পর ডাটা ট্র্যানস্ফারিং ব্লক কিংবা বন্ধ করা ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় থাকে না৷ আর তা'ও স্রেফ ওপরমহলের নেতাদের ইন্টারনেট-আতঙ্কের কারণে৷