ইশতাহারের ভালো কথা এবং ভোটের অধিকার
২৬ নভেম্বর ২০১৮‘দিন বদল' এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ' শব্দ দু'টি মানুষের চেতনা জগতকে নাড়াতে সক্ষম হয়েছিল৷ মানুষ সাড়াও দিয়েছিল, ভোট দিয়ে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছিল আওয়ামী লীগকে৷ ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি বা ইশতাহারের কতটা বাস্তবায়ন করেছে বা করার চেষ্টা করেছে? সব কিছু বাস্তবায়ন করেছে বা কিছুই করেনি,এমন সরলভাবে বলে দেওয়ার সুযোগ নেই৷ নির্বাচনি ইশতাহার প্রস্তুত করার সময়ই এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়, যার প্রেক্ষিতে সরকার বলে দিতে পারেন ‘সব বাস্তবায়ন' করেছি৷ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করলে হয়ত একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে৷
১. প্রথমেই ইতিবাচক একটি দিকের কথা উল্লেখ করছি৷ বলছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ এটা ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দুরদৃষ্টিসম্পন্ন বিচক্ষণতা৷ তরুণ ভোটার বা প্রথমবারের ভোটারদের প্রায় শতভাগ সমর্থন পেয়েছিল আওয়ামী লীগ৷ আনন্দের সংবাদ যে, আওয়ামী লীগ এই প্রতিশ্রুতিটি রেখেছে৷ বহু প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে৷
২. বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে৷ মাথাপিছু প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে৷ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে৷ সুতরাং দিন বদল হয়েছে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে– এ দাবি শেখ হাসিনা সরকার করছেও৷ প্রতি পরিবারে একজনের চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছিল, তা-ও নাকি বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷
আরো কিছু পরিসংখ্যান আবার এই চিত্রকে বড় রকমের প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে৷ আইএলও'র সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, তরুণ বেকারের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ ২০১০ সালে তরুণ বেকার ছিল ৬.৪%৷ ২০১৭ সালে তা হয়েছে ১২.৮%৷ সত্যি যদি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে, তবে বেকারের সংখ্যা বাড়ার কথা নয়, কমার কথা৷ আইএলও'র পরিসংখ্যান বলছে ২৭.৪% তরুণ নিষ্ক্রিয়, তাঁরা পড়ালেখা বা প্রশিক্ষন বা কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়৷ এর আগে সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে বের হয়ে এসেছিল, নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে, বেড়েছে বিত্তবানের আয়৷ ফলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানুষের দিন বদল হয়েছে, তা বলার সুযোগ নেই৷
৩. সরকারের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে৷ এ কথা সত্যি যে, এক্ষেত্রে অনেক কিছু হয়েছে৷ ডিজিটাল মাধ্যমে এখন অনেক তথ্য পাওয়া যায়৷ যদিও ইন্টার্নেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে৷ বিশেষ করে গ্রাহক পর্যায়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যয় অনেক বেশি৷ ভারতে ৩৯৯ রুপি, অর্থাৎ বাংলাদেশি ৪৮০ টাকায় প্রতিদিন দেড় জিবি ডাটা এবং সমগ্র ভারতে যে কোনো অপারেটরে কথা বলা যায়, বাড়তি কোনো টাকা না দিয়ে৷ এর মেয়াদ ৮৪ দিন৷ বাংলাদেশে ৫ জিবির মূল্য ৬২৫ টাকা, মেয়াদ ২৮ দিন, কলরেট আলাদা, ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে যা বেমানান৷ সফটওয়্যার তৈরি বা রপ্তানি বা দক্ষ মানবসম্পদ, কোনো ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি৷
৪. নির্বাচনি ইশতাহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল৷ বাস্তবে দুর্নীতি বহুগুণ বেড়েছে৷ দেশ থেকে অবাধে টাকা পাচার হয়েছে৷ রিজার্ভ চুরি বা আর্থিকখাতের ভয়ঙ্কর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি৷
প্রতিশ্রুত সুশাসন কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে৷ ইশতাহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়নি৷ উল্টো ‘আদিবাসী' নয় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' বলতে হবে,আইন করেছে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে৷ সেখানে রেন্টাল কুইক রেন্টালের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি হচ্ছে৷
সবচেয়ে বড়ভাবে ইশতাহারের ব্যতিক্রম ঘটেছে মানুষের ভোটের অধিকারের ক্ষেত্রে৷ ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে, ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচন হয়েছে৷
৫. ক্ষমতার বিএনপির নির্বাচনী ইশতাহার পর্যালোচনা করলেও, চিত্র ভিন্ন কিছু হবে না,খারাপ ছাড়া৷ আগামী নির্বাচন নিয়ে ভালো ভালো কথা লেখা থাকবে সব দলের ইশতাহারে৷ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসে কিনা, অপেক্ষা করতে হবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷