ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য মোটেই সুদিন নয়
১৮ মার্চ ২০১৫বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু পারলেন বটে৷ নির্বাচনি প্রচারের শেষ লগ্নে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী চাকার গতি ঘুরিয়ে লিকুদ পার্টির জন্য এক বিশাল জয় হাসিল করলেন৷ ভোটগ্রহণের একেবারে শেষ কয়েক ঘণ্টায় তিনি দক্ষিণপন্থি শিবিরের ভোটারদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছেন৷ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী তাঁর পিছিয়ে থাকার কথা ছিল৷ সেই ব্যবধান তিনি শুধু কমিয়ে আনেননি বা প্রতিপক্ষ ইৎশাক হ্যারৎসগ-এর সমান ভোটও জোগাড় করেন নি৷ মধ্যরাতেও হ্যারৎসগ ও তাঁর সহযোগী, প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিপি লিভনি নির্বাচনে জয়ের আনন্দ উৎসব শুরু করে দিয়েছিলেন এবং আগামী সরকার গড়ার তোড়জোড় করছিলেন৷ তারপর রাত গভীর হবার সঙ্গে সঙ্গে ফলাফলের গতি-প্রকৃতি বদলে যেতে থাকে৷ স্পষ্ট হতে থাকে, যে নেতানিয়াহু বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ ডাক নাম ‘ম্যাজিশিয়ান' যে সত্যি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, নেতানিয়াহু আবার তা প্রমাণ করে দিলেন৷
শেষ পর্যায়ে আতঙ্ক ছড়ানো
জনমত সমীক্ষায় খারাপ ফল সম্পর্কে জানার পর নেতানিয়াহু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ তখন তিনি কিছু নোংরা কৌশল কাজে লাগাতে ও নির্বাচনি আইন উপেক্ষা করতে পিছপা হননি৷ এমনকি আইন ভেঙে ভোটগ্রহণের দিনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেছিলেন, যে তাঁর নির্বাচনি জয় রুখতে ‘আরবরা' দলে দলে ভোট দিতে যাচ্ছে৷ নির্বাচনের দিন প্রকাশ্যে এমন বিবৃতি দেওয়া নিষিদ্ধ৷ তাই সংবাদমাধ্যমেও সে বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রচার করা হয়নি৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে যায়৷ সম্ভবত সেই কারণেই শেষ মুহূর্তে অসংখ্য ভোটার লিকুদ পার্টিকে ভোট দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কারণ ইসরায়েলি পাসপোর্টধারী ফিলিস্তিনিরা ভোটার হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্রের রাজনীতি প্রভাবিত করছে – এমন একটা চিত্র অনেক ইহুদি ইসরায়েলি কল্পনা করতে পারে না৷
বাস্তবে সংখ্যালঘু ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ এবং ভোটার তালিকার প্রায় ১৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে৷ তাদের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রবণতা সত্যি বেশি৷ এ কারণেই ‘সম্মিলিত আরব তালিকা' ১৪টি আসন পেয়ে ক্নেসেট বা সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম সংসদীয় দল হয়ে উঠেছে৷ এই সাফল্য সত্যি নজর কাড়ার মতো৷ তবে এই বাস্তব ইসরায়েলের চরম জাতীয়তাবাদী ভাবধারার শিকড়ে আঘাত করতে পারবে না৷ সেই ভাবধারায় অনুপ্রাণিতরা ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অথবা অধিকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সমানাধিকার দিতে প্রস্তুত নয়৷
দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্র থেকে বিদায়
এবারের নির্বাচনের ফলাফল আন্তর্জাতিক সমাজে ইসরায়েলের একঘরে হয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে চূড়ান্ত রূপ দিলো৷ ভোটাররা বর্তমান নীতির পক্ষে রায় দিয়েছেন৷ এ এমন এক নীতি, যার কোনো লক্ষ্য নেই৷ এই নীতি ইসরায়েল সহ গোটা অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও অস্তিত্বের প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না৷ ভোটের ঠিক আগে নেতানিয়াহু শুধু বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্ম বন্ধ করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন৷ আন্তর্জাতিক সমাজের অবস্থানকে অবজ্ঞা করে এমন স্পষ্ট ঘোষণা হয়তো তাঁর বিস্ময়কর সাফল্যে অবদান রেখেছে৷ কিন্তু নেতানিয়াহু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো বিকল্প তুলে ধরতে পারেননি৷ ভোটাররাও তাঁর কাছে এর সদুত্তর চাননি৷ অর্থাৎ ইসরায়েলের জনগণের সংখ্যাগুরু অংশ কার্যত অন্য একটি জাতির উপর কর্তৃত্ব চালিয়ে যেতে প্রস্তুত ও আগ্রহী৷ অধিকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও অস্বীকার করে যেতে চান তাঁরা৷ মোটকথা, আগামী ৫০ বছরেও অধিকৃত এলাকা থেকে প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনা নেই৷ ইসরায়েলের গণতন্ত্র ও গোটা অঞ্চলের জনগণের ভবিষ্যতের জন্য এই নির্বাচনের ফলাফল কোনো শুভ বার্তা বহন করছে না৷