গ্রহণযোগ্য ‘সার্চ কমিটি’ করার প্রস্তাব
১৯ নভেম্বর ২০১৬আইন বিশারদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা মানলে এই বিরোধের অবসান ঘটবে৷ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে৷'' কিন্তু ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর গত ৪৪ বছরে কোনো সরকারই এই আইনটি করেনি৷ এত দিনেও আইনটি না করার কী কারণ থাকতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দলগুলো আইনটি করতে চায় না৷ তারা নির্বাচন কমিশনে পছন্দের লোক বসাতে চায়৷
সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শুধু প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতি তাঁর অন্য সব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না৷
সর্বশেষ বিদায় নেয়া নির্বাচন কমিশনের কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বিদায় নেয়ার আগেই ২০১১ সালে আইনটি করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম৷ কিন্তু সরকার সেটা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি৷ এমনকি বিএনপিও তখন এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি৷ তখন তারা সরকার ব্যবস্থা কী হবে সেদিকে মনোযোগ রেখেছিল৷ কিন্তু সরকার ব্যবস্থা কী হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন৷ এখন যে সময় আছে তাতে আইন করে কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না৷ তাই গ্রহণযোগ্য একটি সার্চ কমিটি করতে হবে৷ এখানে যারা থাকবেন তারা যেন অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হন৷ তাতেও একটা সমাধান আসতে পারে। যদিও এটা এডহক পদ্ধতি৷''
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা নেই৷ সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে৷ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি ছিল৷ এটা করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত৷ কিন্তু তারা সেটা এখনো করেনি৷ তাদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা নিয়ে যদি কমিশন গঠন করা যায়, সেটাও ভালো৷ আগের নির্বাচন কমিশন দুই দফায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে তাগিদ দেয়৷ ইসি আইনের খসড়াও তৈরি করে দেয়৷ প্রথম প্রস্তাবটি পাঠানো হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষের দিকে ২০০৮ সালে৷ সর্বশেষ প্রস্তাব পাঠানো হয় ২০১১ সালে৷
সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের নেতা বার্ন্ড লাঙ্গা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গঠিত হওয়া উচিৎ এবং আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আশ্বস্ত হয়েছি যে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবেই তৈরি করা হবে৷'' সাংবাদিকরা তাঁর কাছে জানতে চান, সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা৷ জবাবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির প্রধান জিন ল্যামবার্ট বলেন, ‘‘আমাদের সফরে বাণিজ্যিক বিষয় প্রাধান্য পেলেও আমরা একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছি৷ আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছি যার ওপর জনগণ আস্থা রাখতে পারে৷''
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এখনো যে সময় আছে তাতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব৷ এতে সরকারেরই বেশি লাভ৷ আর যদি আইনটি করা না যায় তাহলে উচিত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি করা৷ সেটা করলেও অন্তত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা কমিশন পাওয়া যাবে৷ সবকিছুই নির্ভর করতে সরকারের সদিচ্ছার উপর৷''