দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন৷ প্রশ্ন হল কেন? জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা৷ এর বাইরে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে৷ আছে ভোটের মাঠে হুমকি-চাপের অভিযোগ৷
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৬ জন জাপা প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ নির্বাচনে শুরুতে জাতীয় পার্টি ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দেয়৷ এর মধ্যে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হয়৷ সে আসনগুলো ছেড়ে দেয় ক্ষমতাসীন দল৷
কিন্তু এই আসনগুলোর কয়েকটিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়ান৷ অভিযোগ রয়েছে, তারা জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সহযোগিতা করছে না৷ এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরের আসন ঢাকা-১৮৷ সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএস তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজ করছেন বলে পত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছেন শেরীফা কাদের৷
এছাড়া এই ২৬টি বাদে যেসব আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে সরকারি দলের নানা রকমের হুমকি ও চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন জাপা প্রার্থীরা৷ এছাড়া দলের শীর্ষ প্রার্থীদের ওপরও অসন্তোষ দেখা গেছে৷ অনেকে মনে করছেন, ঠিকমত সমঝোতা হয়নি৷ এতে দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে৷
এমন যখন অবস্থা তখন প্রশ্ন হলো, বিরোধী দলে কে যাবে?
২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি ২৭টি আসন পায়৷ মহাজোটের শরিক দল ছিল তারা৷ ২০১৪ সালে পায় ৩৪টি এবং ২০১৮ সালে ২৬টি৷ ২০১৪ সালে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় জাতীয় পার্টি সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতায় একইসঙ্গে সরকারে ও বিরোধী দলে অবস্থান করে৷ মন্ত্রির পদমর্যাদায় সরকারের উপদেষ্টা হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷ তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ছিলেন বিরোধী দলের নেত্রী৷
২০১৮ সালেও তারা বিরোধী দলে যান৷ কিন্তু সেবার কেউ মন্ত্রিত্ব পাননি৷ এমন অবস্থায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা৷ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ সমঝোতামূলক আসন পাননি৷ যারা পেয়েছেন সেখানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের চাপে রেখেছেন৷
দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, তারা হয়তো জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি আসন পেয়ে যেতে পারেন৷ যেমন, ১০৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ঈগল' মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন, ৭৩ জন করছেন ‘ট্রাক' মার্কা নিয়ে৷ এসব মার্কায় রয়েছের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট অনেক প্রার্থী৷ এদের মধ্যে অনেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য যেমন রয়েছেন, রয়েছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা৷ ফলে যদি এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংসদে বিরোধী দল হিসেবে দেখা যায়, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না৷ এমনকি এই আলোচনা বেশ জোরেশোরেই চলছে৷ এতে আইনগতভাবেও কোন বাধা নেই৷
তবে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল গড়বে কি না তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না৷ বাংলাদেশে যেহেতু বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু আছে, সেটি কায়েম রাখতেই হয়তো জাতীয় পার্টিকেই বিরোধী দলে রাখা হবে৷ এছাড়া কিংস পার্টি খ্যাত নতুন চারটি দলের প্রার্থীরাও আছেন৷ এমনকি কেউ কেউ বিরোধী মোর্চার কথাও বলছেন৷
সব মিলিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যে বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত তা হলো বিরোধী দল কে হবেন৷ ভোটের পরই বোঝা যাবে সেটি৷