1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদ আনন্দে বজ্রপাত, দুর্ঘটনা-সংঘাতে মৃত্যু

৪ মে ২০২২

টানা কয়েকদিনের গরমে জনজীবন অস্থির, তখন ঈদের দিনে বৃষ্টি নামল৷ এতে নগর জীবনে স্বস্তি এলেও বজ্রপাতে বিভিন্ন স্থানে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে৷ এছাড়াও দুর্ঘটনা ও সংঘাতে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের৷

https://p.dw.com/p/4Antk
ছবি: bdnews24.com

মঙ্গলবার ঈদুল ফিতরের দিনে বৃষ্টি হলেও তা উৎসব উদযাপনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি৷ মহামারির কারণে দুই বছর বিধি-নিষেধের মধ্যে ঈদ পার করার পর এবার ঈদে বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না৷ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় ছিল বেশ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পালাও ছিল৷ আর এর মধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে৷ ঈদের দিন ঢাকার একটি পার্কে রোলার কোস্টার থেকে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷

করোনার কারণে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবের রঙ গত দুই বছর হারিয়ে গিয়েছিল৷ জাতীয় ঈদগাহে জামাতও হয়নি গত দুই বছর৷ মসজিদে ঈদ জামাত হলেও বিধি-নিষেধের বেড়াজালে কোলাকুলির মতো চেনা দৃশ্যও গিয়েছিল হারিয়ে৷

মহামারি পরিস্থিতির উন্নতিতে এবার আবার স্বরূপে ফেরে ঈদের উৎসব, জাতীয় ঈদগাহে জামাত হয়৷ ঈদের মোনাজাতে দেশের কল্যাণ কামনার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় উসকানিমূলক বক্তব্য পরিহারের আহ্বান জানান ইমাম ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন৷

জাতীয় ঈদগাহে নামাজ শেষ হলেও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার অনেক স্থানে নামাজের মাঠেই বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে মুসল্লিদের৷ দমকা হাওয়াসহ সেই বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলেও তা শীতলতার পরশ বুলিয়ে যায় উৎসবে৷

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা ছাড়াও টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে৷ এসময় ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রবৃষ্টি হয়৷

টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেহেরপুর ও হবিগঞ্জে বজ্রপাতে সাতজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে৷ এদের মধ্যে তিনজন মারা যান নদীতে স্নানের সময়, একজন প্রাণ হারান বাবার কবর জিয়ারতে গিয়ে, একজন মারা যান ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে এবং একজন মারা যান পুকুর স্নানের সময়৷

এদিকে ঢাকায় বৃষ্টির পর গরম কমে ধুলোবালি সরে যায়৷ এতে মানুষের বেড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়৷ হাতিরঝিলের মনোরম পরিবেশে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে আর গাছের ছায়ায় বসে গল্প আর আড্ডায় দিন কেটেছে রাজধানীর হাজারও মানুষের৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম ছিল পুরো ঝিল পাড়৷

ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের পাশাপাশি যারা ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে পারেননি কিংবা মেসে বা হোস্টেলে বসবাসকারী কর্মজীবী, শিক্ষার্থী কিংবা ঈদে ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা সব রকমের মানুষের দেখা মিলেছে হাতিরঝিলে৷

ঝিলের গুলশান, এফডিসি ও রামপুরা প্রান্ত থেকে নৌকা বা স্পিড বোটে চড়ে ভ্রমণের সুযোগ ছিল৷ তবে রামপুরা থেকে এফডিসি যাওয়ার সড়কের পুরো অংশজুড়ে বিনোদনপ্রেমীদের দেখা গেছে ঝিলের পাশে বসে গল্প আর আড্ডায়৷ ছবি বা সেলফি তোলা ব্যক্তিরাও নজর কেড়েছেন৷

এদিন বিকালের অনেকটা সময়জুড়ে কিশোর আর তরুণদের দল বেঁধে ঘুরতে আর হৈ হুল্লোড় করতে দেখা গেছে৷

প্রাইভেটকার নিয়ে গুদারাঘাট প্রান্তে এসে থামা মোহন মিয়া ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমার সাথে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছোট ছেলে রয়েছে৷ অন্যান্য প্রান্তে পার্কিংয়ের ভালো সুযোগ না পেয়ে এ ঘাটে এসে থামলাম নৌকা ভ্রমণের জন্য৷

‘‘ঢাকায় বিভিন্ন রকম বিনোদনকেন্দ্র থাকলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়া যায় কেবল হাতিরঝিলে৷ এছাড়া চিড়িয়াখানারও একটা ভিন্ন আবেদন রয়েছে৷ তবে এবার ঈদের দিনে ভিড়বাট্টা কম হওয়ায় বেশ স্বস্তিতে ঘুরেছি আমরা৷ এখন একটুখানি বোটে উঠার ইচ্ছে আছে৷”

ভিড় ছিল সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে, চন্দ্রিমা উদ্যান ও লেকরোড এলাকায়, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরেও৷ নতুন জামাকাপড় পরে সেজেগুজে মানুষ সকাল থেকেই ভিড় জমায় চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায়৷ সন্ধ্যা ৮টার দিকে পুলিশ বাঁশি ফুঁকে উদ্যান থেকে লোকজনে বের করে দেয়৷ এসময় কেবল ফুটপাথে লোকজনকে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, লেকের পাড়ে নামলেই বাঁশি ফুঁকছিল পুলিশ৷

চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরতে আসা মরিয়ম নেছা বলেন, ‘‘এবার গ্রামে যাওয়া হয়নি৷ গ্রামের ঈদে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেই দিন পেরিয়ে যায়৷কিন্তু ঢাকায় যে বন্ধুরা ছিল সবাই বাড়ি গেছে৷ তাই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে আসতে হলো চন্দ্রিমা উদ্যানে৷’’

এর মধ্যেই রাজধানীর শ্যামপুর ইকোপার্কে রোলার কোস্টার থেকে নিচে পড়ে রাব্বী নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা যায়৷ বলা হচ্ছে, রোলার কোস্টার চলার সময় শিশুটি সিট বেল্ট খুলে ফেলায় পড়ে গিয়ে মারা যায়৷   

দুর্ঘটনা-সংঘাতে নিহত বেশ কয়েকজন

ঈদ মানে আনন্দ, কিন্তু গত কয়েক বছরে সড়কে মৃত্যু সেই উৎসবকে ম্লান করেছিল৷ এবার ঈদযাত্রা ঝামেলাহীন এবং অনেকটাই দুর্ঘটনাহীন হলেও ঈদের দিনে কয়েকটি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে কয়েকজন৷

এর মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে বিকালে এক স্থানে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন৷ সফিপুর উড়ালসড়কের পূর্বপাশে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ের ওসি মো. ফিরোজ হোসেন৷ 

নিহতরা হলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের মৃত আলতাব হোসেনের স্ত্রী রেণু বেগম (৫০), গাজীপুরের দক্ষিণ সালনার রমিজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৪৫), জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী গ্রামের সাথী আক্তার (২৫), শরিফ হোসেন (২৮) এবং অজ্ঞাত পরিচয় (৪৫) একজন৷

ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর উড়ালসড়কে পূর্বপাশে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি অটোরিকশার সঙ্গে উত্তরবঙ্গগামী এনা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়৷ তাতে মারা যান চারজন৷

এ দুর্ঘটনার ৫ মিনিট পরেই ওই ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরে সফিপুর ফ্লাইওভারের নিচে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংঘর্ষে মো. হোসেন মারা যান৷

এদিকে শরীয়তপুর সদরে ঈদের নামাজ পড়া নিয়ে দুটি পক্ষের সংর্ঘষের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন নিহত হন; আহত হন অন্তত ১৯ জন৷ পালং মডেল থানার ওসি মো. আকতার হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে চিতলীয় ইউনিয়ন পরিষদ সমজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে৷

নিহত কুদ্দুস বেপারী (৭০) মীরকান্দা গ্রামের মৃত রহমানের ছেলে৷ আহতদের মধ্যে জয়নাল বেপারী (৪৫) ও শহীদ সরদার (৪০) নামের দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ বাকিদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷

অন্যদিকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে কুমিল্লা সদর উপজেলায় ঈদ জামাতের মাঠে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তিকে গুলি করা হয়৷ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গোলাবাড়ি এলাকার ঈদগাহ মাঠে এ ঘটনা ঘটে বলে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সহিদুর রহমান জানান৷ গোলাবাড়ি এলাকারই বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ মোস্তাক আহমদকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন দুপুরে স্থানীয় প্রভাবশালী দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন, আহত হন আরও ১০ জন৷

মঙ্গলবার দুপুর ২টায় উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর৷

নিহতরা হলেন- উপজেলার চরদৈত্যকাঠি গ্রামের হাসেম মোল্যার ছেলে আকিদুল মোল্যা (৪৬) এবং একই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে খায়রুল ইসলাম (৪৫) ৷

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রভাবশালী মোহাম্মদ মোস্তফা জামান সিদ্দিক এবং আরিফুর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়৷ এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন৷

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য