1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঈদে ডেঙ্গু মহামারির দ্বিতীয় পর্যায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ আগস্ট ২০১৯

এরইমধ্যে ঢাকা ছাড়াও দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ঈদে ডেঙ্গু আরো ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। আর এজন্য তারা সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

https://p.dw.com/p/3NhvP
ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে অনেকের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Felix

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে এবার কোরবানির ঈদে এক কোটি পাঁচ লাখ লোক ঢাকা ছাড়াবেন। আর এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাবেন তিন কোটির বেশি মানুষ। সারাদেশে প্রায় সাড়ে চারকোটি মানুষ ঈদের ১২ দিনে স্থান পরিবর্তন করবেন। এটা ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার জন্য বড়ভাবে দায়ী হতে পারে বলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন।

ডা. লেলিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে যারা গ্রামে যাচ্ছেন তাদের একটি অংশ ডেঙ্গুর ভাইরাস নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। শতকার ৫০ ভাগ ডেঙ্গু আক্রান্তের তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। আর যারা আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে দুই থেকে পাঁচ ভাগ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন এই উপসর্গবিহীন ডেঙ্গু আক্রান্তরা ঢাকা থেকে গ্রামে গেলে তাদের যদি স্থানীয় এডিস মশা কামড়ায় তাহলে ওই ভাইরাস অন্যের শরীরেও ছড়িয়ে পড়বে।''

ডা. লেলিন চৌধুরী

তিনি  জানান, ‘‘বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার যা অবস্থা তাতে স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে তা জটিল আকার ধারন করবে। আমরা ঢাকার বাইরে থেকে এখন অনেক রোগী পাচ্ছি যারা আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে ঢাকায় এসেছেন। আবার রোগীদের প্লাটিলেট দেয়ার ব্যবস্থায় জেলা পর্যায়ে নেই বললেই চলে। ফলে আমরা  আশঙ্কার করছি ঈদে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করতে পারে। আমরা বলছি ঈদে ডেঙ্গু মহামারির দ্বিতীয় পর্যায়ে উপনীত হতে পারে।''

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এ নিয়ে মানুষকে সতর্ক করছে। তারা দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার কিট পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছে।  সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকেও বাতিল করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত  সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ড. এইচ এম নাজমুল আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত এক হাজার আটশ' চিকিৎসককে জাতীয় ডেঙ্গু গাইডলাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এর চিকিৎসা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলছি। আর আমরা সবাইকে ঘুমের সময় মশারি ব্যবহারের জন্য বলছি। ঢাকার বাইরে বা ঢাকায় যেখানেই কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন তাকে মশারি ব্যবহার করতে হবে সার্বক্ষনিক। এতে আক্রান্তকে আর এডিস মশা কামড়াতে পারবেনা। ফলে তার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।''

ড. এইচ এম নাজমুল আহসান

তিনি বলেন, ‘‘যেদিন কেউ ঢাকার বাইরে যাবেন ওইদিন যদি তাকে এডিস মশা কামড়ায় তাহলে তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে তার ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। তাহলে সেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। আবার ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার দুই দিন পর থেকে সে আর ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করবে না। তার আগ পর্যন্ত সে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী। আর গ্রামে গিয়েও কিছু লোক আক্রান্ত হবে। ফলে ঈদে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার একটা আশঙ্কা আছে। তাই সবাইকে আমরা মশারি ব্যবহরের পরামর্শ দিচ্ছি।''

ঢাকার বাইরে এপর্যন্ত ১২ হাজার ১৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সামান্য কমলেও ঢাকার বাইরে বাড়ছে। আর শুধু আগস্টের ১০ দিনর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ হাজার ৮৮৩ জন। যা পুরো জুলাই মাসের ৩০ দিনের তুলনায় চার হাজার ৬৩০ জন বেশি। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯ জন। কিন্ত বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা একশ' ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে গরুর হাটে জনসমাগমের কারণে ডেঙ্গু আতঙ্ক আছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন হাটে পরিস্কার পানি না জমলে আতঙ্কের কারণ নেই। এটা নির্ভর করছে হাটে এডিস মশা আছে কিনা তার ওপর।