জাল টাকার আতঙ্ক
৬ আগস্ট ২০১৩৫০০ বা ১,০০০ টাকার নোট, বিশেষ করে তা যদি হয় কড়কড়ে নতুন, তাহলে তো কথাই নেই৷ সন্দেহ আরো বেড়ে যায়৷ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই নোটগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন৷ তুলে ধরেন সূর্যের দিকে অথবা আলোর দিকে মুখ করে৷ কতক্ষণ ঘষেও দেখেন৷ তাঁরা নিশ্চিত হতে চান যে নোটটি আসল না নকল৷ কারণ তাঁরা জানেন যে বাজারে জাল টাকার ছড়াছড়ি৷ চক্রের সদস্যরা যে কোনো সময় জাল টাকা চালান করে দিতে পারে৷ আর রাতে এই আতঙ্ক আরো বেশি৷
পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ব়্যাব গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকার জাল নোট এবং জাল টাকা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে৷ গ্রের্তার করেছে এই চক্রের অন্তত ২৫ জন সদস্যকে৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা জাল টাকার অধিকাংশই ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোট৷ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্তি উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের ধারণা ঈদকে টার্গেট করে বাজারে কমপক্ষে ১০কোটি টাকার জাল নোট ছাড়া হয়েছে এবং তা হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে৷
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, গ্রেপ্তার করার পর এখনো ১০/১২টি চক্র জাল টাকা নিয়ে সক্রিয় আছে৷ তিনি জানান, তিন ধাপে জাল টাকা বাজারে ছাড়া হয়৷ প্রথম ধাপে যারা জাল টাকা তৈরি করে, তারা পাইকারি হিসেবে জাল টাকা বিক্রি করে৷ অন্যদিকে, যারা পাইকারি হিসেবে জাল টাকা কেনে তারা আবার একটু বেশি দামে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে৷ এরপর তা সরাসরি কৌশলে হাতে হাতে ছড়ানো হয়৷
গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্তি উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, জাল টাকার আবার নানা ধরণ আছে৷ সাধারণ আর্ট পেপারে তৈরি ১ লাখ জাল টাকা ২৫,০০০ টাকায় বিক্রি হয়৷ আরো উন্নত খসখসে কাগজে তৈরি ১ লাখ জাল টাকা ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টাকায় বিক্রি হয়৷ আরেক ধরণের জাল টাকা আছে যাকে বলে ‘ওয়াশ নোট'৷ ১টি প্রকৃত ১০০ টাকার নোটকে কেমিক্যাল দিয়ে সাদা করে ৫০০ টাকার নোট তৈরি করা হয়৷ তাই প্রকৃত ১০০ টাকার নোটকে ৫০০ টাকা বানিয়ে ১ লাখ টাকা তৈরি করতে ২০০টি ১০০ টাকার আসল নোটের প্রয়োজন হয়৷ তাতেই লেগে যায় ২০,০০০ টাকা৷ তাই এক লাখ টাকার জাল ‘ওয়াশ নোট' বিক্রি হয় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকায়৷
তিনি জানান, এক বছর আগে তারা যাদের গ্রেপ্তার করেছিলেন অভিযান চালাতে গিয়ে দেখেন যে তারাই আবার জাল টাকা বানাচ্ছে৷ এটা কিভাবে সম্ভব? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কাউকেই ছয় মাসের বেশি কারাগারে থাকতে হয়নি৷ জামিনে বেড়িয়ে এসেছিল তারা৷
এদিকে ব়্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্ণেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা নজরদারি বাড়িয়েছেন৷ তাদের কাছে জাল টাকা শনাক্তকরণ যন্ত্র আছে৷ বিভিন্ন মার্কেট এবং শপিং মলে তারা এই যন্ত্র দিয়ে মাঝে মাঝেই দৈবচয়নের ভিত্তিতে টাকা পরীক্ষা করেন৷ এর উদ্দেশ্য হলো জাল টাকার চক্রকে চাপে রাখা৷
ওদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এই জাল নোটের ছড়াছড়ির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শপিং মল এবং দোকানে জাল টাকা শনাক্তকরণ যন্ত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছিল এক বছর আগে৷ কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি৷ শপিং মল এবং দোকানগুলো এ ব্যাপারে এখনও গা করছে না৷