1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগ্র জাতীয়তাবাদের কবলে ইউরোপ

২৪ জুলাই ২০১৮

ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান নতুন ঘটনা নয়৷ হিটলার-মুসোলিনির দাপট থেকে শুরু করে আজকের চরম দক্ষিণপন্থি ও পপুলিস্ট শক্তির প্রতি জনসমর্থনের পেছনে প্রায় একই কারণ দেখা যায়৷

https://p.dw.com/p/31rPY
Pro Europe Demonstration in München
ছবি: picture-alliance

তথ্য ও বাস্তবের প্রতি বিতৃষ্ণা

ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ফেসবুক, টুইটারের জমানায় এমন সব তথ্য সাধারণ মানুষের নাগালে চলে এসেছে, মাত্র এক যুগ আগেও তেমনটা কল্পনাও করা যেত না৷ অন্যদিকে যে কোনো মানুষ বৃহত্তর সমাজের কাছে তার বার্তাও পোঁছে দিতে পারছে৷ এমন অবাধ আদানপ্রদানের সুযোগ সত্ত্বেও বাস্তব সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ কিন্তু সার্বিকভাবে কমে চলেছে৷ এমনকি তথ্য-পরিসংখ্যান সম্পর্কে তাচ্ছিল্য ও অবহেলার মনোভাবও দেখা যাচ্ছে৷ নিজের বদ্ধমূল ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকলে কোনো খবরই সঠিক মনে হচ্ছে না৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম মানুষের মতাদর্শ বুঝে তাদের মনের মতো খবর সাজিয়ে রাখছে৷ ‘ফেক নিউজ' বা ভুয়া খবর এমন বদ্ধমূল ধারণায় ইন্ধন জোগাচ্ছে৷

ইউরোপে অস্থিরতা

এমনই প্রেক্ষাপটে ইউরোপে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নানা ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি৷ একদিকে দেশ, ধর্ম, সংস্কৃতি, বর্ণের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের প্রতি অসহিষ্ণুতা, অন্যদিকে বিশ্বায়ন, মুক্ত বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয় প্রক্রিয়ার মতো প্রবণতার বিরুদ্ধে বিষাদগার করে চলেছেন এইসব দলের নেতারা৷ গত কয়েক দশকে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির ব্যর্থতার ফায়দা তুলে এই সব শক্তি মানুষের মন জয় করতে চাইছে৷ জেনেশুনে ভুল চিত্র তুলে ধরে, তথ্য-পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিছক আবেগ সৃষ্টি করে তারা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে৷ এবং সেই কাজে তারা সফলও হচ্ছে৷ ইউরোপের অনেক মানুষ ক্ষোভ, হতাশা, শূন্যতার অনুভূতির ভিত্তিতে সেই গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেদের ভাসিয়ে দিচ্ছেন৷

সর্বনাশা আচরণ

এমন সর্বনাশা প্রবণতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘ব্রেক্সিট'৷ প্রথমে যুক্তরাজ্যের ‘স্বাধীনতা'-র প্রবক্তা ইউকিপ দল ইইউ থেকে ব্রিটেনকে বিচ্ছিন্ন করার আন্দোলন শুরু করে৷ তারপর মূল স্রোতের দুই দলও সেই বিতর্ককে গুরুত্ব দেয়৷ ইইউ ত্যাগ করার সার্বিক পরিণতি তুলে না ধরেই গণভোটের আয়োজন করা হয়৷ ভয়ভীতি, আবেগ, ভিত্তিহীন কিছু ধারণাকে সম্বল করে ব্রেক্সিট-প্রবক্তারা সংখ্যাগুরু ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হন৷ তার দু'বছর পরেও ব্রেক্সিটকে ঘিরে চরম অরাজকতা চলছে ব্রিটেনে৷

শরণার্থীরা যখন জুজু

২০১৫ সালে শরণার্থীদের ঢলও ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের শক্তিশালী করে তুলেছে৷ হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে বিদেশি ও ইইউ বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে জনসাধারণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ ফলে এএফডির মতো উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে৷ শরণার্থীদের ঢল সামলাতে নাজেহাল ইটালিতে দু-দু'টি উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি জোট সরকার গঠন করেছে৷ অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের অন্য কিছু দেশেও এমন দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে৷ আসন্ন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনেও এইসব দল শক্তিবৃদ্ধি করতে চলেছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, ইউরোপ এই মুহূর্তে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে৷ বর্তমান যুগের নানা চ্যালেঞ্জের মুখে মানুষের মনে অনেক রকমের ভয়ভীতি কাজ করছে৷ মূল স্রোতের রাজনৈতিক শক্তিগুলি সেইসব ভয়ভীতি দূর করতে পারলে উগ্র জাতীয়তবাদীদের রাশ টানা সম্ভব হবে৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের অনুকরণ করলে আখেরে তাদেরই নৈতিক জয় হবে৷ জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যের সিএসইউ দল ঠিক সেই ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনের আগে জনসমর্থন হারাচ্ছে৷ বাকিদেরও সতর্ক থাকতে হবে৷

এসবি/এসিবি

ইউরোপে জাতীয়বাদের উত্থানকে কীভাবে দেখেন আপনি? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷