পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে মধ্যস্থতা করবে মস্কো
২৭ ডিসেম্বর ২০১৭মঙ্গলবার ক্রেমলিন ঘোষণা করে যে, উত্তেজনা হ্রাসের জন্য রাশিয়া উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত৷ এর পটভূমিতে রয়েছে পিয়ংইয়াংয়ের সাম্প্রতিক রকেট পরীক্ষা ও দুই দেশের দুই নেতা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উনের মধ্যে কয়েক মাস ধরে ক্রমবর্ধমান বাকযুদ্ধ৷
রুশ টাস সংবাদ সংস্থার বিবরণ অনুযায়ী ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ রিপোর্টারদের বলেছেন, ‘‘দু'পক্ষের প্রয়োজন থাকলে ও দু'পক্ষ তা কামনা করলে, রাশিয়া (মধ্যস্থতা করতে) রাজি৷''
‘‘শুধুমাত্র এক তরফ মধ্যস্থতা কামনা করলে দু'পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থ হওয়া অসম্ভব; দুই তরফের সে ইচ্ছা থাকা প্রয়োজন,'' পেস্কভ বলেন৷ রাশিয়া যে পরিস্থিতি লাঘব করতে আগ্রহী, তা ‘‘সহজবোধ্য,'' বলে পেস্কভ যোগ করেন৷
জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাব সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক কর্মসূচি ও রকেট পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে৷ ইতিপূর্বে মস্কো একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি একটি আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে৷ মার্কিন কূটনীতিকরা বলেছেন যে, তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি কূটনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা করছেন – কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শর্তহলো এই যে, কোনো ধরণের আলাপ-আলোচনার আগে পিয়ংইয়াংকে তার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে হবে৷
ওয়াশিংটনের বাগাড়ম্বর ‘অগ্রহণযোগ্য,' বলেছেন লাভরভ
মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে একটি টেলিফোনালাপের অবকাশে উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গটি নিয়েও আলোচনা করেন, বলে রুশ পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷
‘‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সংক্রান্ত মন্তব্য থেকে যথাশীগ্র সম্ভব আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়ার দিকে যাওয়া প্রয়োজন, বলে (লাভরভ-টিলারসন টেলিফোনালাপে) বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়,'' রুশ পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে৷ দৃশ্যত টিলারসনের তরফ থেকে টেলিফোনালাপের উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফ থেকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ সম্পর্কে এযাবৎ কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷
দৃশ্যত লাভরভ টিলারসনকে বলেন যে, ‘‘ওয়াশিংটনের আগ্রাসী ভাষা'' ও তার বর্ধিত সামরিক উপস্থিতি কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে,যা ‘‘অগ্রহণযোগ্য৷''
সাম্প্রতিক কয়েক মাসে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে নানা অবমাননাকর বিশেষণে ভূষিত করেছেন এবং উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করলে দেশটিকে ‘‘পুরোপুরি ধ্বংস'' করার হুমকি দিয়েছেন৷ অপরদিকে পিয়ংইয়াং বলেছে যে, উত্তর কোরিয়া যে এখন একটি পারমাণবিক শক্তি, বিশ্বকে তা মেনে নিতে হবে৷
নতুন মার্কিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
মঙ্গলবারেই ওয়াশিংটন উত্তর কোরিয়ার দু'জন কর্মকর্তার উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে এই অভিযোগে যে, ঐ দুই কর্মকর্তা পিংয়ংইয়াংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ মার্কিন ট্রেজারির তরফ থেকে ঐ কর্মকর্তাদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে: কিম জং সিক ও রি পিয়ং চোল৷
রি পিয়ং চোল পিয়ংইয়াংয়ের আইসিবিএম বা আন্তঃ-মহাদেশ ক্ষেপণাস্ত্র বিকাশ কর্মসূচির একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, বলে প্রকাশ; কিম জং সিক দৃশ্যত রকেট কর্মসূচির বিকাশ, বিশেষ করে তরল জ্বালানি থেকে কঠিন জ্বালানিতে উত্তরণের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত৷ কঠিন জ্বালানির সুবিধা হল এই যে, নিক্ষেপের আগে রকেটে জ্বালানি ভরার কোনো প্রয়োজন পড়ে না, তাই স্বল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা চলে৷
গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে পিয়ংইয়াং-এর বিরুদ্ধে যে সর্বাধুনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেই তালিকাতেও রি পিয়ং চোল ও কিম জং সিক-এর নাম ছিল৷ উত্তর কোরিয়া ঐ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে ‘‘যুদ্ধসুলভ পদক্ষেপ'' বলে অভিহিত করে৷
এসি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)