উদ্বাস্তু সংকট নিয়ে চাপের মুখে ম্যার্কেল
১৯ জানুয়ারি ২০১৬‘‘হাসিমুখে'' উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানানোর কথা বলেছিলেন যে চ্যান্সেলর, বলেছিলেন ‘‘আমরা পারব'', তিনি আজ নিজের দল, মিত্রদল ও জোট সহযোগীর তরফ থেকে সমালোচনার মুখে পড়েও পিছপা নন৷
এ সপ্তাহেই ম্যার্কেলের নিজের দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের দলীয় সম্মেলন৷ ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন সাইব্যার্ট সোমবার জানান যে, ম্যার্কেল তাঁর ভাষণে অভিবাসীদের সংখ্যা কমানোর জন্য ‘‘জাতীয় ও ইউরোপীয় কর্তব্য সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট কর্মসূচির পুনরাবৃত্তি করবেন''৷
উদ্বাস্তু বা শরণার্থী সমস্যার ক্ষেত্রে মঙ্গলবার জার্মান পত্র-পত্রিকা যার মন্তব্য নিয়ে ব্যস্ত, তিনি হলেন ম্যার্কেল মন্ত্রীসভায় পরিবহণ মন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডোব্রিন্ট, সিডিইউ দলের বাভেরীয় অংশীদার সিএসইউ দলের রাজনীতিক৷
ডোব্রিন্ট মিউনিখের একটি পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘শেষমেষ যে সীমান্ত বন্ধ করতে হতে পারে, সেই সম্ভাবনার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে''৷ এর আগে, সপ্তাহান্তে সিএসইউ প্রধান হর্স্ট সেহোফার ‘ডেয়ার স্পিগেল' সংবাদ-সাপ্তাহিককে বলেছিলেন যে, তিনি আগামী দু'সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে সীমান্তে ‘‘সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি'' দাবি করে একটি লিখিত আবেদন পাঠাবেন৷ সেই সঙ্গে যদি যোগ করা যায় যে, গোঁড়া রক্ষণশীল সাবেক সিএসইউ প্রধান এডমুন্ড স্টয়বার ম্যার্কেলকে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে তাঁর অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করার, নয়ত জোটের অভ্যন্তরে প্রকাশ্য বিদ্রোহের সম্মুখীন হওয়ার হুমকি দিয়েছেন – তাহলে বোঝা যায় যে, ম্যার্কেল কোণঠাসা না হলেও, বিব্রত৷
এ বছর জার্মানির তিনটি রাজ্যে প্রাদেশিক নির্বাচন, যাদের মধ্যে প্রথমটি এই মার্চ মাসেই৷ এ সব নির্বাচনে যদি দেখা যায় যে, খ্রিষ্টীয় ইউনিয়ন দলগুলিকে ভালোরকম ভোট খোয়াতে হয়েছে – তাহলে হয়ত স্টয়বারের হুমকি ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে কাজ করবে৷ ইতিমধ্যে ‘জার্মানি ক্ষুব্ধ; জার্মান মিডিয়ার একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ; দেশে দশ লাখের বেশি উদ্বাস্তু, ও তাদের নিয়ে ক্রমেই আরো বেশি সমস্যা', লিখেছেন ডয়চে ভেলের ক্রিস্টফ স্ট্রাক তাঁর সংবাদভাষ্যে৷
স্ট্রাক বলছেন, তিনি এ দেশের মানুষ অথবা মিডিয়াকে এ রকম কড়া ভাষায় তাদের মনোভাব ও মতামত প্রকাশ করতে দেখেননি৷ তার সাথে যেন কিছুটা ‘শাডেনফ্রয়েডে', অর্থাৎ অন্যের বিপাকে আনন্দের ব্যাপারটাও আছে৷ এবং ম্যার্কেল সেই সমালোচনা ও শাডেনফ্রয়েডের লক্ষ্য হয়ে উঠেছেন, কেননা তিনিই তো ‘‘মানবিক দায়ের'' কথা বলে উদ্বাস্তুদের জন্য জার্মানির সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন৷
ম্যার্কেল যতটা অনড়, তার দল ততটা নয়৷ তাই সিডিইউ দল সোমবার সিদ্ধান্ত নেয় যে, মরক্কো, আলজিরিয়া ও টিউনিশিয়া, উত্তর আফ্রিকার এই তিনটি দেশকে ‘নিরাপদ দেশ' হিসেবে ঘোষণা করা উচিত, যা-তে সেখান থেকে আসা উদ্বাস্তু বা অভিবাসন প্রত্যাশীদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নামঞ্জুর করার, অথবা আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর তাদের স্বদেশে ফেরৎ পাঠানো সহজ হয়৷
জোট সহযোগী এসপিডি দল এখন তৃণমূলের মনোভাব আঁচ করে তাদের উদ্বাস্তু নীতি বদলাতে শুরু করেছে৷ স্ট্রাক যেমন লিখেছেন, এটা কড়া অভিমত ও কড়া ভাষায় সেই অভিমত প্রকাশের পরিস্থিতি; তাই এসপিডি প্রধান সিগমার গাব্রিয়েলকে আলজিরিয়া ও মরক্কো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বলেন যে, যে সব দেশ তাদের নাগরিকদের ফেরৎ নিতে অস্বীকার করবে, তাদের উন্নয়ন সাহায্য হ্রাস করার কথা ভাবা যেতে পারে৷
ম্যার্কেল কী করেছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত তিনি কী করেননি৷ এক্ষেত্রে গ্রিসকে আর্থিক ত্রাণের অঙ্কটা যে কী হতে পারে, সে'বিষয়ে আগে থেকে কিছু না বলা; এবং একটি নতুন অভিবাসন আইন প্রণয়নের কাজ ক্রমাগত পিছিয়ে দেওয়া – ম্যার্কেলের এই দু'টি ‘ওমিশান' বা অসম্পন্ন কাজের কথা বলেছেন ক্রিস্টফ স্ট্রাক৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)
চলতি বছরে ম্যার্কেলের রাজনৈতিক ভাগ্যে কী আছে বলে আপনি মনে করেন? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷