1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উন্নয়ন ও ব্যর্থতার প্রচার নিয়ে ঈদের মাঠে রাজনীতি

১০ জুলাই ২০২২

এবারের ঈদুল আজহায় বাংলাদেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দল মাঠে নেমেছে সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়ে৷ তাদের টার্গেট তৃণমূলস্তরে দল চাঙ্গা করা৷

https://p.dw.com/p/4DvYV
এবারের ঈদুল আজহায় বাংলাদেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দল মাঠে নেমেছে সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়ে
এবারের ঈদুল আজহায় বাংলাদেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দল মাঠে নেমেছে সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়েছবি: Mohammad Shajahan/AA/picture alliance

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ বাড়ানোই মূল টার্গেট৷ আর এজন্য তারা পশু কোরবানি ও সরকারি ত্রাণকে কাজে লাগাচ্ছে৷ আর ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরছে বিএনপি৷

দুইটি দলের নেতারাই তাদের সাধ্যমতো কোরবানি দিয়ে এলাকার নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করার কৌশল নিয়েছে৷ তারা নজর রাখছে দেশে উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা দুর্গতের ব্যাপারে৷ আওয়ামী লীগের সুবিধা হলো তারা এই কোরবানির সময় সরকারি ত্রাণের ক্রেডিট নিচ্ছে৷ আর বিএনপি নিজস্ব উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করছে৷

পলিটিক্যাল কোরবানি

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পলিটিক্যাল কোরবানি৷ দেশের কয়েকটি এলায় বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের কোরবানির খবর পাওয়া গিয়েছে৷ যারা এখন সংসদ সদস্য নন কিন্তু আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান তার এই ধরনের কোরবানি দিয়েছেন বেশি৷ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া এবং মঠবাড়িয়া উপজেলায় কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ২০-২৫টি করে গরু কোরবানি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ ওই এলাকার একজন সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজু জানান, ‘‘কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের অনুসারীদের কোরবানি করার জন্য টাকা দিয়েছেন৷ তারা যার যার এলাকায় গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন৷ এই কোরবানিতে তাদের অনুসারীরাই অংশ নিচ্ছেন৷”

মোংলা উপজেলার সাংবাদিক আবুল হোসেন জানান, ‘‘এখানেও পলিটিক্যাল কোরবানি হচ্ছে৷ বড় নেতারা ছোট নেতাদের কোরবানি করার জন্য টাকা পয়সা দিয়েছেন৷ তবে এই কোরবানি দলীয় নেতা-কর্মীদের উৎসব আয়োজনেই ব্যয় হচ্ছে৷ আর একক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলই এগিয়ে৷”

রংপুরে পলিটিক্যাল কোরবানির দীর্ঘদিনের রেওয়াজ থাকলেও এবার তা তেমন হয়নি বলে জানান সেখানকার সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল৷ তিনি বলেন, ‘‘এরশাদ বেঁচে থাকতে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পলিটিক্যাল কোরবানির রীতিমত প্রতিযোগিতা হতো৷ কিন্তু এবার আর সেটা তেমন দেখা যায়নি৷ তবে প্রতিটি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির পক্ষ একটি করে গরু দেয়া হয়েছে কোরবানির জন্য৷”

দেশের অন্যান্য এলাকায়ও ইউনিয়ন এবং এলাকা ভিত্তিক এই ধরনের কোরবানি কমবেশি হয়েছে৷এসব কোরবানির উদ্দেশ্য, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের খুশি রেখে উপদল ভারী করা৷

এলাকায় প্রচারের নির্দেশ:
এবারের কোরবানির ঈদেআওয়ামী লীগ কেন্দ্র থেকে নেতা এবং এমপিদের এলাকায় থাকতে বলেছে৷ অনেকেই এলাকায় গিয়েছেন৷ তারা আসলে এলাকায় থেকে উন্নয়নের প্রচার চালাচ্ছেন৷ বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতুর ব্যাপক প্রচার করছেন তারা৷ নেতা-কর্মীরা তাদের ঈদের শুভেচ্ছায় পদ্মা সেতু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করছে ব্যাপকভাবে৷একইসঙ্গে তারা দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে সাধারণ মানুষকে "বাস্তব পরিস্থিতি” বুঝাতে চেষ্টা করছেন বলে জানা গিয়েছে৷ তারা এটাকে বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাব বলে ব্যাখ্যা করছেন৷

‘‘সিলেট ও সুনামগঞ্জের দিকে আমাদের নজর বেশি’’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকমাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘আমরা যারা রাজনীতি করি তারা মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি৷ এবার তাই সিলেট ও সুনামগঞ্জের দিকে আমাদের নজর বেশি৷ সরকারি সহায়তার পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীরাও এই ঈদে সাধ্যমত পাশে দাঁড়াচ্ছেন৷”
তার কথায়, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আরো দুইটি ঈদ আছে৷ ফলে এখনই ঈদ পলিটিক্স নিয়ে আমরা ভাবছিনা৷ তবে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে এলাকায় নেতা-কর্মীরা কথা বলছেন৷অপপ্রচারের জবাব দিচ্ছেন৷

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘‘ ত্রাণ দেয়ার নামে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ এই ঈদেও তারা মিথ্যা কথা বলায় পিছিয়ে নেই৷এটা মিথ্যাবাদীদের দল৷” তার কথায়, বিদ্যুতের এই সমস্যা সাময়িক৷ শেখ হাসিনার সরকার দ্রতই এর সমাধান করতে পারবে৷ বিএনপি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি৷”

সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারের ব্যর্থতার প্রচার বিরোধীদের
বন্যার কারণে ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া স্থগিত রেখেছে বিএনপি ৷ তারা বন্যা শেষ হলে আন্দোলনের কথা ভাবছে৷ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘এবার আমরা এই ঈদে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি৷ বিশেষ করে উত্তর-পূর্বে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে আমরা আছি৷ আমি নিজেও এখন বন্যাদুর্গত এলাকায় আছি৷  এখানে চারটি গরু কোরবানি দিয়ে গরিব মানুষকে মাংস দিয়েছি৷ প্রত্যেক এলাকাই নেতা-কর্মীদের একইভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে৷”

তার কথায়, ‘‘এখন রাজনীতির চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোই বড় কাজ৷ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষই আমাদের গণতন্ত্রহীনতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর কারণে তাদের পরিস্থিতি যে দুর্বিষহ তা বলছেন৷ এর জন্য যে বর্তমান সরকারের গণতন্ত্রহীনতা, দুর্নীতি আর লুটপাট দায়ী সেটা আমরা মানুষের কাছে স্পষ্ট করছি৷”

মানুষের ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেছে: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আমরা যা বলছি এটা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার নয়৷ এটাই বাস্তবতা৷ মানুষের জীবন থেকে ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেছে৷ মানুষের জন্য এখন বেঁচে থাকাই অনেক কষ্টের৷”

এই ঈদে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নেতা-কর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তার কথায়, ‘‘ মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ তাই এই সরকারের বিদায় ছাড়া উপায় নেই৷ এটা আমরা মানুষকে বলছি৷”

সরকারি ত্রাণ ছাড়া তেমন কোনো উদ্যোগ  নেই

রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুক না কেন ঈদে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু ত্রাণ বিতরণ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি৷ যা আছে তা দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য৷ সিলেটের সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের জন্য খাবার ও রান্নার হাড়ি-পাতিল বিতরণ করা হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিচ্ছিন্নভাবে কিছু করলেও চোখে পড়ার মত কিছু করেনি৷”

তার কথায়, ‘‘ঈদে নেতারা শহরে আলাপ আলোচনা আর দলীয় কর্মীদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন৷ তবে দেশের বিভিন্ন এলাকার ধনী ব্যক্তিরা কোরবানির পশু পাঠিয়েছেন৷ দেশের অন্যান্য এলাকায়ও দলীয় নেতারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে আলাপে-আড্ডায়ই মূলত সময় কাটাচ্ছেন৷''