অসহায় প্রতিবন্ধী শিশুরা
৩ জুন ২০১৩ভিয়েতনামের সান্দং শহরে থাকে উইয়েন৷ বয়স ৯৷ মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী সে৷ বহুদিন সে দাদা-দাদির বাসায় থাকতো৷ স্কুল বা শিক্ষার অন্য কোনো পথও তার জন্য খোলা ছিল না৷ তারপর সমাজকর্মীদের কথায় দাদি তার নাতনিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি করলেন৷ ইউনিসেফ-এর এক মুখপাত্র জানান, সে সময়ে উইয়েন হাঁটতে পারতো না, বেশি কথাও বলতে পারতো না৷ এখন সে আর পাঁচটা হাসিখুসি চনমনে শিশুর মতোই হয়ে উঠেছে৷ তাঁর মতে, প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটে৷
উন্নয়নশীল দেশগুলির বেশিরভাগ শিশুরই উইয়েন-এর মতো সৌভাগ্য হয় না৷ এমনকি তাদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ হুইলচেয়ারের মতো প্রয়োজনীয় সাহায্য পায়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, মৃগী রোগীদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ওষুধপত্র থেকে বঞ্চিত৷ তবে ইউনেস্কো-র প্রধান সমস্যা হলো, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য-পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন৷ বিশ্বের সব দেশ শিশুদের অধিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলেও কার্যক্ষেত্রে চিত্রটা সব দেশে সমান নয়৷ বিশেষ করে রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পরিবারের তেমন গুরুত্ব না থাকায় অবহেলার ছাপ দেখা যায়৷
শিল্পোন্নত দেশগুলির পরিস্থিতি অবশ্য একেবারে আলাদা৷ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সেখানে নানা রকমের সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে৷ বিশ্বের অন্যত্র এই ধরনের শিশুদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়, এদের কথা কেউ মনেও করে না৷ তাদের নথিভুক্ত করতেও চায় না কর্তৃপক্ষ৷ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে এখনো প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবারের সঙ্গে না রেখে বিশেষ ‘হোম'এ পাঠানোর জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়৷ ইউনেস্কোর দাবি, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই প্রতিবন্ধীদের আরও বেশি শামিল করতে হবে৷
এমন দাবির পেছনে নানা যুক্তি রয়েছে৷ ইউনেস্কো-র বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রমাণ করা গেছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা সম্ভব৷ যেমন আর্মেনিয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সাফল্য এসেছে৷ সে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ফলেও প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তার কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে৷
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদেরও সহায়তার প্রয়োজন পড়ে৷ জার্মানির ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ‘কারিটাস' অনেক দেশে এই উদ্যোগ নিচ্ছে৷ যেমন ভিয়েতনামে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিবারের সদস্যদের শেখাচ্ছেন, কীভাবে তারা এমন শিশুদের দেখাশোনা করতে পারেন৷ প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক মনোভাবেরও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান৷