তরুণী ধূমপায়ী
১৯ আগস্ট ২০১২চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট'এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নিউইয়র্কের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যারি গিওভিনো গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷
গত বেশ কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ধূমপানবিরোধী বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার হার তেমন উল্লেখযোগ্য নয় বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে৷
গিওভিনো বলেন, বিশ্বের প্রায় ১১০ কোটি মানুষকে ধূমপান-নিয়ন্ত্রণ নীতিগুলোর আওতায় আনা গেছে৷
উন্নত বিশ্বে নেয়া কিছু ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বাইরে জনসম্মুখে ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ আর সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ধূমপান করা যে কতটা খারাপ সেটা আরও বেশি করে লিখে দেয়া৷
এদিকে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় একটা ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সে দেশের আদালত৷ এর ফলে এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে পাওয়া সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে কোনো লোগো ব্যবহার করা যাবে না৷ অর্থাৎ কোনো প্যাকেটে কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট রয়েছে সেটা জানা যাবে না৷
বিখ্যাত সিগারেট প্রস্তুতকারক ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, ইমপেরিয়াল টোব্যাকো, ফিলিপ মরিস ও জাপান টোব্যাকো অস্ট্রেলীয় সরকারের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আদালতে লড়েছিল৷ কিন্তু সফল হতে পারে নি৷
অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরণের আইন পাস হওয়ায় অন্য দেশের ধূমপানবিরোধী গোষ্ঠীগুলো তাদের দেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে৷ যেমন ব্রিটেন, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, ক্যানাডা ও ভারত এই ধরনের আইন তৈরির পরিকল্পনা করছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যারা ধূমপান করেন তাদের প্রায় অর্ধেকই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন৷ কেননা ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়৷ এছাড়া বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক হৃদরোগেরও ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপান৷
চীনে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৩০১ মিলিয়ন৷ আর ভারতে ২৭৫ মিলিয়ন বলে গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে৷
তরুণীদের মধ্যে ধূমপানের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে বলে গবেষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ ব্রিটেনে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ২১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬, পোল্যান্ডে ২৫ আর মিশরে ০.৫ শতাংশ বলে গবেষণায় জানা গেছে৷
আলোচ্য গবেষণাটি যে সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে সেখানকারই একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে ধূমপান নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফ্রি কোপলিন আর হংকং এর ‘বিশ্ব ফুসফুস ফাউন্ডেশন' এর জুডিথ ম্যাকে এই মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন৷ তাঁরা বলছেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সিগারেটের উপর কর বসিয়ে প্রতি ৯,১০০ ডলার আয়ের বিপরীতে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরিতে ব্যয় করা হচ্ছে মাত্র এক ডলার৷
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ধূমপানের কারণে প্রতি বছর গড়ে ৬০ লক্ষ জন মারা যাচ্ছেন৷ এছাড়া আরও প্রায় ছয় লক্ষ জন মারা যায় যারা ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকেন৷
ধূমপান নিয়ন্ত্রণে যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া যায় তাহলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ লক্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
জেডএইচ / এআই (রয়টার্স)