আইন না মানার চর্চার শেষ কবে?
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে সরকারি গাড়ি৷
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আইন না মানার তালিকায় বেশিরভাগ সময়ই এগিয়ে থাকেন দায়িত্বশীলরাই৷ পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, সাংসদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, গণমাধ্যমসহ ব্যক্তিগত গাড়িও উল্টো পথে চলছে৷ সাধারণ মানুষও সুযোগ পেলেই উল্টো পথে যানবাহন চালিয়ে দেয়৷
এই অনিয়মে বাধ সাধতেই এ দফায় প্রথম এগিয়ে আসে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ রোববার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে হঠাৎ করেই এক অভিযান শুরু করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ৷ তাঁর উদ্যোগে পুলিশ সেখানে উল্টো পথে চলা গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকানো শুরু করে৷ মাত্র দুই ঘণ্টার অভিযানে আটক হয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, সচিব, বিচারক, সরকারি দলের নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকদের গাড়ি৷ দুই ঘন্টায় ট্রাফিক পুলিশ ৫০টি যানবাহন ধরে মামলা ও জরিমানা করে৷ এর মধ্যে ৪০টিই সরকারি গাড়ি৷
উল্টো পথে গাড়ি চলা রুখতে পরদিন সোমবার থেকে ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা চলার কথা৷
উল্টো পথে গাড়ি আটকের ঘটনায় বিশেষভাবে নজরে এসেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানা৷ তিনি একটি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব৷ প্রথমদিন তার গাড়ি আটক করে চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হয়৷ পরদিন আবার একই ঘটনা ঘটান তিনি৷ আবারও উল্টো পথ ধরেন৷ চালকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷
লক্ষণীয় হলো, এই অভিযানে কেবল গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হচ্ছে৷ আড়ালে থেকে যাচ্ছেন মালিক, যিনিও কম দায়ী নন৷ কারণ, এমন ঘটনা অহরহই ঘটে যে, মালিকের প্ররোচনাতেই উল্টো পথে যেতে বাধ্য হন চালক৷
এ বিষয়ে জানতে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করে এই অভিযানের থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘মোটরযান আইনের অধীনে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে৷ সেই আইন অনুযায়ী, চালকের বাইরে অন্য কাউকে শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়৷ ঘটনার সময় মালিক যদি চালকের আসনে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ তবে আইনে না থাকায় মালিক গাড়িতে কেবল বসে থাকলে তার বিরুদ্ধে আর ব্যবস্হা নেয়া যাচ্ছে না৷’’
এ্ই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি সেই সচিব৷
অভিযানে এ দফায় বৃহস্পতিবার শেষ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানান পুলিশের মোসলেহউদ্দিন আহমেদ৷ কিছুদিন পর আবারও অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
রাজধানীর অসহনীয় যানযটে সময় বাঁচাতেই যে সবাই একাজ করছেন তা পরিস্কার৷কিন্তু এতে করে যে অন্যের জীবনে কী বিপদ নামছে তা ভাবছেন না কেউ৷ বলছি, সড়ক দুর্ঘটনার কথা৷
চলতি বছর ফায়ার সার্ভিস প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে ঢাকা বিভাগে ৪৭৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩৯ জন৷ ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮৪টিতে৷ দুর্ঘটনায় শিকার ২২৯ জন নিহত হন৷ এরপরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এক লাফে সেই সংখ্যা ১ হাজার ৩৭১ এ পৌঁছায়৷ এতে নিহত হন ৪০১ জন৷ বলে রাখা ভালো, এসব দুর্ঘটনার অনেকগুলো রাজধানীতেও ঘটেছে৷
এসব দুর্ঘটনার সবই উল্টোপথে গাড়ি চালানোর জন্যই ঘটেছে তা যেমন ঠিক নয়, তেমনি কিছু ঘটনা যে ঘটছেও সেটিও মানতে হবে৷ সুতরাং নিজে বাঁচতে উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে সবাইকে বোকা বানিয়ে আগেভাগে চলে যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়৷শত শত গাড়ি যখন যানজটে আটকে থাকে, নিশ্চল হয়ে যখন ভোগান্তি পোহান সবাই, তখন চোখের সামনে দিয়ে কিছু মানুষের এই উল্টোযাত্রা সাধারণ মানুষের প্রতি এক ধরনের পরিহাসও বটে৷এমনিতেই যে দেশে মানুষ আইন মানতে চায় না, সে দেশে এমন চর্চা যে মানুষকে আইন মানতে আরও নিরুৎসাহিত করে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
অভিযান হলেই সাবধান হতে হবে, আইন মানতে হবে– এমনটি হতে পারে না৷ কারণ, এমন প্রবণতা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাহীনতার লক্ষণ৷ এ প্রবণতা শুধু ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনেরই দৃষ্টান্ত নয়, সাধারণভাবে আইনের শাসন না থাকারও ফলাফল৷