1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একজন মান্নার পতন!

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না নানা সমালোচনার জন্ম দিয়ে অবশেষে আটক হয়েছেন৷ বেশি আলোচনা হচ্ছে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন নিয়ে, যা ইন্টারনেট আর ইউটিউব-এ ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে৷

https://p.dw.com/p/1EgX4
ছবি: DW/J. Impey

পরিবারের সদস্যদের দাবি, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মঙ্গলবার ভোররাতে বনানীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে কয়েকজন নিয়ে গেছে৷ তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগসহ কোনো বিভাগই আটক করেনি৷ এর বাইরে কেউ আটক করে থাকলে আমাদের জানা নেই৷''

মঙ্গলবার বিকেলে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে মান্নার অবস্থান জানাতে সরকারের কাছে দাবি করা হয়৷ এছাড়া মান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি-ও করা হয়েছে৷ গুলশান থানা পুলিশ জানিয়েছে, তারা জিডিটি গ্রহণ করে মান্নার অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন৷

এর আগে সোমবার বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার কথোপকথন প্রকাশ পায়৷ এই কথোপকথন বাংলাদেশের গোয়েন্দারাই রেকর্ড করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ খোকা-মান্নার এই কথোপকথনে বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং এর কৌশল নিয়ে বক্তব্য রয়েছে৷

যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘মান্না নাশকতা করে আন্দোলন সফল করার কথা বলেছেন৷ তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল দখল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে৷ এতে কয়েকটা লাশ পড়লেও কিছু করার নেই৷ এছাড়া তাঁর সমাবেশে বিএনপি থেকে লোক সরবরাহের অনুরোধ করেছেন তিনি৷''

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আরেকটি কথোপকথনে মান্না সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কথাও বলেছেন৷''

মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাদেক হোসেন খোকার কথোপকথনের রেকর্ড সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করেছে, যা ইউটিউবসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এরপর, অর্থাৎ কথোপকথন প্রচার হওয়ার পর সোমবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে তাঁর পূর্ব নির্ধারিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেন মান্না৷

ঐ দিনই অবশ্য তিনি ফেসবুকে আত্মপক্ষ সমর্থন একটি ‘স্ট্যাটাস' দেন৷ তাতে তিনি খোকার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘‘এমনিতেই তো লোকজন মারা যাচ্ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-একটা লাশ পড়লে আর কি করা যাবে!'' বলা বাহুল্য, এতেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷

মান্নার কথোপকথন নিয়ে সুশীল সমাজের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘সরকারকে যে কেউ রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন৷ কিন্তু মান্না যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে আন্দোলন সফল করার কথা বলেছেন, তা ন্যাক্কারজন৷ তাঁর এই অধঃপতন আমাকে ব্যথিত করেছে৷ তিনি আনুষ্ঠানিভাবে তাঁর চরিত্র প্রকাশ করেছেন৷''

শান্তনু মজুমদারের কথায়, ‘‘মান্নার দু'টি বক্তব্যের রেকর্ডই আমি শুনেছি৷ তিনি অগণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার উত্‍খাতের কথা বলেছেন, যা খুবই দুঃখজনক৷ তবে মঙ্গলজনক এটাই যে, তাঁর এই পরিকল্পনা ফাস হয়ে গেছে৷''

ড. মজুমদার বলেন, ‘‘ঊনবিংশ শতাব্দিতে বাংলা নবজাগরণের মাধ্যমে এখানে সুশীল সমাজের উদ্ভব৷ এবং এই সমাজ এখন অনেক বিস্তৃত৷ কিন্তু বর্তমানে সুশীল সমাজের নামে কেউ কেউ অরাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে বিরাজনীতিকরণ করতে চান, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য চরম ক্ষতিকর৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সফিউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অডিওতে যা শুনেছি তা যদি মান্না সাহেব বলে থাকেন তাহলে এটি নিশ্চিত যে তিনি দেশ এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন৷ তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াই স্বাভাবিক৷''

তবে তিনি এ কথাও বলেন, ‘‘মাহমুদুর রহমান মান্নাকে যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে থাকে তাদের তা মান্নার পরিবারকে জানান উচিত৷''

অন্যদিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মান্না কী বলেছেন তা আমি শুনিনি বা এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও পড়িনি৷ তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷''

মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন৷

এর আগে ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জাসদ ছাত্রলীগ থেকেই চাকসু-র ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ মান্না পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ আওয়ামী লীগ তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দিলে তিনি নাগরিক ঐক্য নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷ ঐ দল গঠন করার আগে তিনি সুশীল সমাজের ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন করেন৷

সম্প্রতি সুশীল সমাজ যে সংলাপের উদ্যোগ নেয় তাতেও যুক্ত ছিলেন মান্না৷ পরে অবশ্য তাঁকে বাদ দেয়া হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য