বাংলাদেশে ‘দেখে নেয়ার রাজনীতি'
৬ জানুয়ারি ২০১৫
একতরফা নির্বাচনের প্রথম বছরপূর্তি, অর্থাৎ ৫ই জানুয়ারি থেকে দেশ আবারো সংঘাতময় রাজনীতির দিকে যাচ্ছে৷ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শনিবার রাত থেকে ‘অবরুদ্ধ' আছেন তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে৷ সোমাবার দুপুরের পর থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নিয়েও শেষ পর্যন্ত রেহাই পাননি বিএনপির ভারপ্রপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ মঙ্গলবার বিকেলে প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার পথে তাঁকে গাড়িসহ আটক করে গোয়েন্দা সদর দপ্তরে নিয়ে গেছে পুলিশ৷
এর আগে শনিবার রাতে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তুলে নিয়ে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে পাহারা বসিয়েছে৷ গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির আন্তত পাঁচশ' নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে৷ ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় সবাই এখন আত্মগোপনে৷
দু'দিনে সারাদেশে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন৷ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে৷ বিএনপির লাগাতার অবরোধ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকেই৷ এই অবরোধ তেমন তীব্র না হলেও, জনজীবনে রয়েছে তার নেতিবাচক প্রভাব৷ সাধারণ মানুষ আছেন আতঙ্কে৷ তাঁরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না৷
শাসক দলের নেতা-কমীরাও মাঠে আছেন৷ তাঁরা নেমেছেন প্রতিরোধে৷ তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা নাশকতাকে প্রতিরোধ করব৷''
এই প্রেক্ষাপটে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে এখন দেখে নেয়ার রাজনীতি চলছে৷ বিরোধী মতকে দমন করা হচ্ছে৷ আর এই দমনের জবাব দিতে গিয়ে বিরোধীরা কর্মসূচি দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা তেমন বাস্তবায়ন করতে পারছে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না৷ যদি ঈশ্বর তাদের মনে সুমতি দেন, তাহলে হয়ত এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে৷''
হাফি উদ্দিন খান বলেন, ‘‘এ পরিস্থিতির প্রধান শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ তাঁরা যদি কোনো দিন জেগে ওঠেন, তাহলেও হয়ত এই অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে৷''তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশে এখন বিরোধিতার রাজনীতি নয়, প্রতিহিংসা আর দেখে নেয়ার রাজনীতি চলছে৷ এই রাজনীতি অব্যাহত থাকলে জাতির সামনে আরো চরম দুর্দিন অপেক্ষা করছে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দু'টি দলই অতিমাত্রায় তাড়াহুড়ো করছে৷ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, আর বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য৷ ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে৷ এতে অবশ্য কোনো দলই লাভবান হচ্ছে না৷ বরং দুই দল সম্পর্কেই সাধারণ মানুষের খারাপ ধারণা বাড়ছে৷'' এছাড়াও ‘‘এই সময় বিদেশ থেকে আসা কিছু রাজনৈতিক কথাও পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে'', বলেন তিনি৷
ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা কোনোভাবেই ২০১৩ সালের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না৷ কিন্তু পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে৷''