অভিজিৎ বেঁচে থাকবেন চিরদিন
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬মুক্তমনা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম ব্লগ যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, নাস্তিকতা, বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে স্বাধীনভাবে লেখালেখি করা যায়৷ এটি আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনি অনন্য এক প্রয়াস৷ মুক্ত সমাজ গঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করতেন রায়৷ তাঁর বিশ্বাস ছিল, মুক্তমনা ব্লগ হবে এমন এক প্ল্যাটফর্ম যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিষয়গুলো প্রকাশ করা হবে৷ ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে রায় বলেছিলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য এমন এক সমাজ গড়ে তোলা যেটি স্বেচ্ছাচারিতা, কুসংস্কার আর গোঁড়ামি দ্বারা নয়, পরিচালিত হবে যুক্তি, মানবতা, সমতা আর বিজ্ঞান দিয়ে৷''
রায় জন্মেছিলেন এক হিন্দু পরিবারে৷ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে এটি সংখ্যালঘুদের ধর্ম যারা এখনও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ ছাত্র অবস্থায় রায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন৷ রবি ঠাকুরের লেখাই তাঁকে সত্য সন্ধানে বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুক্তিনির্ভর তথ্যের ব্যবহার করতে শিখিয়েছে৷ পরবর্তীতে অ্যামেরিকান দার্শনিক ও নাস্তিক পল কুর্টজ দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি৷
বাংলাদেশের অনেক মুসলমান মনে করেন, ইসলামের সমালোচনা করা ব্লাসফেমি, আর এর শাস্তি মৃত্যু৷ সে কারণে ২০০৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করা রায় হত্যার হুমকি পেতে শুরু করেন৷ পরের বছরগুলোতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে৷
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সাল থেকে শীর্ষ ইসলামি নেতাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ এর পরিণতিতে ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়৷ তিনিও মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন৷ ইসলামি জঙ্গিরা ইন্টারনেটে ৮৪ জন ব্লগারের একটি তালিকা প্রকাশ করে, যাদেরকে তারা হত্যা করতে চায়৷ তালিকায় অভিজিতের নামও ছিল৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনের (কয়েকটি দল যেটি বয়কট করেছিল) মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়৷
মুক্তমনা ব্লগের অন্যতম মডারেটর ফরিদ আহমেদ ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান'কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অভিজিৎ যখন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বৃদ্ধ মা'কে দেখার জন্য বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তখনই তাঁকে প্রাণের হুমকির ব্যাপারে সাবধান করে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু অভিজিৎ রায় শোনেননি৷ তিনি বলেছিলেন, তিনি নীরবে যাবেন৷ কিন্তু তাঁর একমাত্র ভুল ছিল তিনি বইমেলায় গিয়েছিলেন৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি রায়ের ওপর হামলা করে ইসলামি জঙ্গিরা৷ তাঁর স্ত্রীও মারাত্মকভাবে আহত হন৷ রায় প্রাণ দিয়ে তাঁর সাহসের মূল্য দেন৷
২০১৫ সালের বাকি সময়টায় আরও তিন ব্লগার ও এক প্রকাশককে হত্যা করে ইসলামি জঙ্গিরা৷ এ ধরণের হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে না৷ ব্লগারদের রক্ষায় সরকার কিছু করেনি৷ বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রসার এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে অভিজিৎ রায় ও মুক্তমনা ব্লগের ব্লগাররা যে অবদান রেখেছেন সরকার তার স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না৷ হয়ত সরকার তা বিবেচনাতেই নিচ্ছেনা৷ কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট, যারা বাকস্বাধীনতার সমর্থক, তাঁদের হৃদয়ে অভিজিৎ বেঁচে থাকবেন চিরদিন৷
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷