এখনও থমথমে দিল্লি, মৃত্যু বেড়ে ৩৪
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০অবশেষে উত্তর পূর্ব দিল্লির হিংসা কবলিত এলাকা কিছুটা শান্ত হল। প্রচুর পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা নিয়মিত ফ্ল্যাগ মার্চও করছে। নতুন করে আর খুব বেশি হিংসা হয়নি। তবে এলাকা এখনও থমথমে। উত্তেজনাও রয়েছে৷ যদিও পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে৷ সাংবাদিক রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''জাফরাবাদের প্রধান রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট খুলেছে। রাস্তায় অটো ও টোটো চলছে। মৌজপুরের ছবিটাও একই। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভরসা দেওয়ার পর মূল রাস্তার দু'পাশ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।''
তবে ইতিমধ্যে অন্য বিতর্ক শুরু হয়েছে। হাইকোর্টের যে বিচারপতি উত্তর পূর্ব দিল্লির হিংসা সংক্রান্ত মামলার বিচার করছিলেন, তাঁকে বুধবার গভীর রাতে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করে দেওয়া হয়েছে৷ বিচরপতি মূরলীধর বুধবার আদালতে বিজেপি নেতাদের উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ শুনিয়ে দিল্লি পুলিশকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন এই নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়নি? বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধএ এফআইআর করা হয়েছে কি না, তা পুলিশকে তিনি জানাতে বলেছিলেন। তারপরেই এই বদলি অন্য মাত্রা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের তরফে অবশ্য আদালতকে জানানো হয়েছে, যথা সময়ে এফআইআর করা হবে।
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের কলিজিয়াম চার দিন আগেই বিচারপতি মূরলীধরকে বদলি করার প্রস্তাব দিয়েছিল৷ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, এটা নিয়মমাফিক বদলি৷ কিন্তু কেন তড়িঘড়ি মাঝরাতে বিচারপতি মূরলীধরের বদলির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল, তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
বিচারপতির বদলি নিয়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সোচ্চার হয়েছে। রাহুল গান্ধীর টুইট, ''সাহসী বিচারক লোয়ার কথা স্মরণ করছি। তাঁকে অবশ্য বদলি করা হয়নি৷'' উল্লেখ্য, বিচারক লোয়ার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল একটি বাড়ি থেকে। অনেকেরই দাবি, তাঁকে হত্যআ করা হয়েছিল। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও বিচারপতির বদলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন-- ''সরকার বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করছে৷'' কংগ্রেসের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, ''বিচারপতি যখন বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার করছিলেন, তখন তাঁকে এ ভাবে বদলি করার অর্থ হল বিচারব্যবস্থার ওপর বিজেপির চাপ তৈরি করছে৷''
উত্তর পূর্ব দিল্লির হিংসায় গোয়েন্দা অফিসার অঙ্কিত শর্মাকে হত্যা করে নালায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল৷ গোয়েন্দা অফিসারের হত্যা নিয়েও রীতিমতো আলোড়ন চলছে। তাঁকে প্রথমে অপহরণ করা হয়। তারপর হত্যা করে নালায় ফেলে দেওয়া হয়। কারা এর পিছনে তা খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে৷ বিতর্ক হচ্ছে আপ এর স্থানীয় কাউন্সিলার তাহির হুসেনকে নিয়েও। কারণ, তাঁর ছাদে ইট জড়ো করে রাখার ছবি মিলেছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সেখানে প্রচুর পেট্রোল বোমাও মজুত। অভিযোগ, তার ছাদ থেকে পাথর ও পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি কী করে হিংসায় মদত দিলেন?
দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতাল অবশ্য এখনও ভরে রয়েছে আহতে। কমপক্ষে ২০০ জন এই ঘটনায় আহত হয়েছএন বলে সরকারি সূত্র জানাচ্ছে। বেসরকারি হিসেব আরও বেশি। যাদের অনেকের শরীরেই বুলেটের আঘাত রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছএ, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ১০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)