এবার কি বাঘের পিঠে চড়েছেন মমতা?
৪ নভেম্বর ২০১৪নেহাতই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার৷ এতদিন পর্যন্ত ডান-বাম সব দলই জোর গলায় বলে এসেছে যে সারা ভারতে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন হয় না, যেখানে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা ধর্মীয় মৌলবাদ জমি পায় না৷ এই সেদিনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নেতারা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক জমি তৈরি করতে তৎপর ভারতীয় জনতা পার্টি ধর্মীয় বিরোধ খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে৷
কিন্তু বর্ধমানের খাগড়াগড়ে হঠাৎ বিস্ফোরণে ফাঁস হয়ে যাওয়া যে সন্ত্রাসি সক্রিয়তার হদিস মিলেছে এই রাজ্যে, তাতে বোঝা যাচ্ছে ঘটনা ঠিক উল্টো এবং সমস্যার শিকড় আসলে খুব গভীরে! পশ্চিমবঙ্গে একাধিক কট্টরপন্থি মুসলিম জঙ্গি সংগঠনের তথাকথিত ‘স্লিপার সেল' এতদিন গোপনে সক্রিয় ছিল! বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক বিস্ফোরণ তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল তারা, যে বিস্ফোরক সম্ভবত ব্যবহারের ছক ছিল প্রতিবেশী বন্ধু দেশ বাংলাদেশে!
বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক স্থিতি বিপন্ন করতেই বিদেশি সন্ত্রাসি গোষ্ঠীগুলোর মদতে পশ্চিমবঙ্গে এ সব ঘাঁটি তৈরি হয়েছে এবং সক্রিয় থেকেছে প্রশাসন আর পুলিশের নাকের ডগায় বসে৷ এমনকি এমন কানাঘুষোও শোনা যাচ্ছে যে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জেতার পর রাজ্যের মুসলিম হাতে রাখতেই তৃণমূল কংগ্রেস এবং তাদের মুখ্যমন্ত্রী নাকি সব জেনেও না জানার ভান করে ছিলেন এতদিন!
বস্তুত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা জল বণ্টন চুক্তি যেভাবে শেষ মুহূর্তে কেঁচে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি এবং অসহযোগিতায়, সন্দেহ, কানাকানি শুরু হয়েছিল তখনই৷ এখন এই সন্ত্রাসি ছক ফাঁস হওয়ার পর লোকে এখন দুইয়ে দুইয়ে চার করতে শুরু করেছে৷ প্রশ্ন উঠছে, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে আসলে কোন দেশবিরোধী শক্তির হাত শক্ত করছেন মমতা?
সঙ্গত কারণেই রাজ্য পুলিশের ওপর ভরসা না রেখে ভারত সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্তকারী দল পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ সেই ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি এবং ন্যাশানাল সিকিওরিটি রাজ্যে এসে তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকারের সম্মতির অপেক্ষা না করেই, যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি কেন্দ্রের অনাস্থা এবং অবিশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়৷
এদিকে বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সংঘাত ক্রমশই বাড়ছে এবং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে৷ আগে যেমন তৃণমূল কর্মীরা আক্রান্ত হলে ছুটে যেতেন নেত্রী মমতা আর তাঁকে যেতে বাধা দিন পুলিশ, এখন ঠিক সেটাই ঘটছে৷ তফাত একটাই, এখন আক্রান্ত হচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা এবং বিজেপি নেতাদের সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ৷ বিরোধীনেত্রী থাকার সময় মমতা ঠিক যেভাবে পরিস্থিতির রাজনৈতিক ফয়দা নিতেন, বিজেপিও এখন ঠিক সেটাই করছে৷
অন্যদিকে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে, বা সঠিকভাবে বলতে গেলে, চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি, সন্ত্রাসি কার্যকলাপ, রাজ্যে শিল্পের হাহাকার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিজেপির ক্রমশ প্রভাব বৃদ্ধি ইত্যাদি নানাবিধ কাণ্ডে বিপর্যস্ত সরকার এবং দলকে আরও অস্বস্তিতে ফেলার শাস্তি হিসেবে পূর্ব কলকাতা শহরতলীর বিতর্কিত নেতা আরাবুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হয়েছে৷ দলের হয়ে ভোট করানো থেকে শুরু করে মিছিলে লোক আনা, সব ব্যাপারেই যে আরাবুলের ওপর এতদিন ভরসা করেছে তৃণমূল৷
পাশাপাশি চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে বিশ্বস্ত মুকুল রায়ের নাম যে তাঁর দায়িত্ব কমিয়ে, সাংগঠনিক কাজে গুরুত্বহীন করে, নিজের ভাইপো অভিষেককে কার্যত দল চালাবার দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী৷ আরেক কলঙ্কিত নেতা মদন মিত্র আজকাল নিয়মিত অসুস্থ থাকছেন৷ দলীয় সাংসদ তাপস পালের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে শোরগোলের পর তাঁকেও ইদানীং জনসমক্ষে দেখা যায় না!
কিন্তু তাতে পরিস্থিতির সুরাহা হচ্ছে কী! বরং বোঝা যাচ্ছে, রীতিমত বেকায়দায় পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ যে বাঘের পিঠে মমতা চড়েছেন, তার থেকে নামার কোনো উপায় এখনও তাঁর নজরে পড়েনি!