এবার স্বাধীনতা দিবস বর্ণহীন
১৪ আগস্ট ২০২০বছরের কয়েকটা দিন কলকাতা শহর এবং শহরতলীতে নিয়ম করে প্রভাত ফেরি বের হয়৷ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি এবং অবশ্যই ১৫ অগাস্ট, ভারতের স্বাধীনতাদিবসে৷ কিন্তু এই বছর ২৫ বৈশাখের সকাল যেমন বেসুরো, বেতাল কেটেছে, ১৫ অগাস্টের সকাল তার থেকেও নিঃসাড়ে কেটে যাবে৷ প্রতি বছর একাধিক অনুষ্ঠান হয় স্বাধীনতার উদযাপন করতে৷ তার মধ্যে বেশ কিছু গান-বাজনার কনসার্ট হালে রীতিমত জনপ্রিয়ও হয়েছিল৷ এবার কোথাও কিছু হচ্ছে না৷ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কুচকাওয়াজ থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় বিচিত্রানুষ্ঠান, সবই এবার বাদ পড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যদিও রাজ্যবাসীকে বলেছেন, এবার প্রত্যেক ঘরে যেন জাতীয় পতাকা তোলা হয়৷ নয়ত দলগতভাবে যে সব অনুষ্ঠান নিয়মিত হয়, সে সবই এবার নিয়মরক্ষার খাতিরে করা হবে৷ কম লোক নিয়ে৷
দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী, পুরসভার ৮৬ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর দীপ্তি মুখার্জি প্রতি বছরই প্রভাত ফেরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্বাধীনতা দিবসে৷ সাংগঠনিক স্তরে এবং তিনি ও তাঁর স্বামী, তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান দুর্গাপ্রসাদ মুখার্জি যুক্ত আছেন নিজেদের হাতে তৈরি যে সাংস্কৃতিক চক্রের সঙ্গে, সেই বালিগঞ্জ কালচারাল সেমিনার আয়োজিত নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে৷ কিন্তু এবছর কিছুই হচ্ছে না৷ দীপ্তি মুখার্জি জানালেন, ‘‘আমরা ফ্ল্যাগ তুলব, কিন্তু গ্যাদারিং বেশি করছি না৷ করোনার জন্য৷ যতজন মেম্বার আছে, সব মেম্বারকে আমরা বলছি না৷ আমি বলেছি, সবাই নিজেদের নিজেদের পাড়ায় (পতাকা) তোলো৷ আর যেহেতু আমাদের ক্লাব, বালিগঞ্জ কালচারাল সেমিনারের ফ্ল্যাগটা আমাকেই তুলতে হবে, মানে আমাকে এবং দুর্গা মুখার্জিকেই তুলতে হবে৷ কারণ আর যারা মেম্বার, তারা আসতে পারবে না৷ তারা অনেক দূরে দূরে থাকে৷ আমি যেহেতু কাছে থাকি, আমরা দুজনে, সেজন্য আমরা তুলে দেব৷ আর আমাদের ৮৬ নং ওয়ার্ডের যে ফ্ল্যাগ হয়েস্টিং হবে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে, সেটা দুর্গা মুখার্জিই তুলবেন৷''
তা হলে প্রতি বছরের মতো অনুষ্ঠান এবার আর হচ্ছে না? দীপ্তি মুখার্জির বক্তব্য, ‘‘কী করে করব বলুন! রিস্ক হয়ে যাবে না! বাচ্চাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করাটা খুব রিস্ক হয়ে যাবে৷ তাদের বাবা-মায়েরাও ছাড়বে কেন বলুন! আমরাই বা কী করে বলব! আমাদের বলাটাও তো অন্যায়৷''
কাজেই বেনজিরভাবে এবছর প্রায় আড়ম্বরহীন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই পালিত হবে স্বাধীনতা দিবস৷ অবশ্য সমবেত উদযাপন না হলেও লোকে নিজের বাড়িতে যে দিনটি পালন করবেন, তা বোঝা গেল বাজার ঘুরে৷ বিক্রি হচ্ছে নানা মাপের জাতীয় পতাকা, তিনরঙা কাগজের শিকলি৷ আর এই করোনার আবহে এবার চোখে পড়ছে আরও একটি জিনিস৷ ভারতের জাতীয় পতাকার রঙে রাঙানো মুখ ঢাকার মাস্ক, মাথায় বাঁধার কাপড়৷ সামাজিক দূরত্বের এই দুঃসহ সময়ে ওইটুকুই যা রঙের ছোঁয়া এবারের স্বাধীনতা দিবসে৷