1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা

১৫ আগস্ট ২০১৯

১৯৪৭ থেকে পার হয়েছে ৭২ বছর৷ কিন্তু স্বাধীনতা কী, এই প্রশ্নে আজও বিভক্ত ভারতের বিভিন্ন মহল৷

https://p.dw.com/p/3NwvN
Indien Gedenkfeiern zum 100. Jahrestag des Jallianwala Bagh Massakers
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu

ভারতে ১৫ আগস্ট মানেই সরকারি ছুটি, আলস্যে ভরা দিন কাটে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে৷ সাত সকালে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ সারা দিনের জন্য স্বাধীনতার চেতনা কোন পথে হাঁটবে, তা বেঁধে দেয়৷ এবারও তাই হলো৷ কিন্তু ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট কি সব ভারতীয়ের জন্য সমান অনুভূতি নিয়ে এলো?

৫ আগস্ট সকালে বদলে যায় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা৷ কড়া প্রহরায় এখনও সেখানে বন্দি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা৷ অবশ্য, সেভাবে স্বাধীন কি কখনও ছিল কাশ্মীরের জনগণ? আমরা জানিনা, কারণ কাশ্মীরের বাইরের মানুষের কাছে পৌঁছানো কাশ্মীর সংক্রান্ত কোনো খবরের সত্যতা কতটুকু, তা যাচাই করার সুযোগ নেই বললেই চলে৷

এই মুহূর্তেও আসলেই কেমন আছে কাশ্মীর উপত্যকা বা জম্মু বা লাদাখের জনতা, তা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে বলা প্রায় অসম্ভব৷

তবুও, কাশ্মীর থেকে সর্বশেষ পাওয়া ছবিগুলি দেখাচ্ছে মর্যাদা বদলের ভারে স্তব্ধ হয়ে পড়া অঞ্চলকে৷ স্বতস্ফূর্তভাবে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়ার কোনো দৃশ্যের ছবি এবার পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য নাগাল্যান্ড থেকে পাওয়া যাচ্ছে পতাকা ওড়ার দৃশ্যের ছবি৷ একটাই তফাত৷ সেই পতাকা স্বাধীন ভারতের তেরঙ্গা নয়৷ স্বাধীন ‘নাগালিম'র যে দাবি নব্বইয়ের দশক থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব পেয়ে আসছে, সেই নাগালিমের পতাকাই উড়তে দেখা গেল ১৫ আগস্টের দিনে৷

একদিকে ভারত রাষ্ট্রের একতার বিপরীতে পরিহাসের মতো উড়তে থাকা নাগা পতাকা, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে স্বাধীন ভারতের সাফল্যের উদাহরণ৷ সব মিলিয়ে, এবারের স্বাধীনতা দিবস কিছুটা হলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে৷

তেরঙ্গায় ছেয়ে ফেসবুক, টুইটার

প্রতিবারের মতো এবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাধীনতার আমেজ ভাগ করে নেবার ঢল৷ হোয়াটস্যাপ থেকে ফেসবুক, স্বাধীন ভারতকে উদযাপন করতে ফেসবুক চালু করেছে ‘প্রোফাইল ব্যাজ', যার সাহায্যে নিজের প্রোফাইল ছবিকে জাতীয় পতাকার তিনরঙে মুড়ে দেওয়া যাবে৷ টুইটারেও ‘ট্রেন্ডিং' স্থান নিয়েছে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে' বা স্বাধীনতা দিবস হ্যাশট্যাগ৷

গোটা দেশের সোশাল মিডিয়ায় আজ উদযাপনের জোয়ার৷ এরই কিছুদিন আগে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিদায় নিয়েছেন ভারতীয় চিত্রপরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ৷ টুইটারে তাঁর কিছু মন্তব্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহীতা'র সাথে তুলনা করা হয়৷ শুধু তাই নয়, অনলাইন ট্রল এর শিকার হন তিনি, তাঁর কন্যাও৷ কাশ্যপের মন্তব্যকে ঘিরে তাঁর পরিবারের মানুষকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়৷ এর পরই অনুরাগ সিদ্ধান্ত নেন টুইটার ছেড়ে দেওয়ার৷

তাঁর শেষ টুইটে তিনি বলেন, ‘‘নতুন ভারতে যুক্তির কোনো জায়গা নেই৷ যেখানে আমি নির্ভয়ে খোলা মনে কথা বলতে অক্ষম. সেখানে আমি আর কথাই বলব না৷ নতুন ভারতে গুণ্ডাদের রাজত্ব চলছে৷''

তাহলে এবার কেমন কাটছে অনুরাগ কাশ্যপের স্বাধীনতা দিবস? ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কল্পনার স্বাধীন ভারতের বর্ণনা করেছিলেন৷ সেই বিখ্যাত ‘‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য....'' পংক্তির সাথে আজকের ৭২ বছরের স্বাধীন ভারতের মিল চাইলেই খুঁজে পাওয়া যায় কি?

তখন ক্ষমতার আসনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ৷ এখন ক্ষমতায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের নির্বাচিত সরকার৷ তবে কার জন্য স্বাধীন এই দেশ?

যে প্রশ্ন কেউ করেনি

টুইটার বা ফেসবুক যতই মেতে থাকুক স্বাধীনতায়, ভারতের একাধিক রাজ্য এখনও ভয়াবহ বন্যার কবলে৷ পশ্চিম তটবর্তী রাজ্য, যেমন গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও কেরালায়, বন্যার ফলে ঘরছাড়া বহু মানুষ৷ স্বাধীনতার রঙে ফেসবুক মুড়ে দেওয়া দূরের কথা, মাথার ওপরের ছাদটুকুও আজ আছে তো কাল নেই৷

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ভোলেননি৷ বন্যার্তদের কথাও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর আজকের ভাষণে৷

Shabnam Surita Dana
শবনম সুরিতা, ডয়চে ভেলেছবি: Melissa Bach Yildirim/AU Foto

৯৩ মিনিট দীর্ঘ এই ভাষণে বাদ পড়ে গেছে আসামে নাগরিকপঞ্জীর খসড়া থেকে বাদ পড়ে যাওয়া মানুষের কথা৷ আসন্ন ৩০ আগস্ট প্রকাশ পাবে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জী৷ বাদ পড়ে যাওয়া ‘ভারতীয়'দের জন্য কতটুকু স্বাধীনতা বরাদ্দ করবে সরকার?

কাশ্মীরের মর্যাদা বদলের পর উন্নয়নের জোয়ার আসবে, কথা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ কিন্তু স্থানীয় জনতার স্বাধীন চলাফেরার পথে কতটুকু বাদা দেবে ‘আর্মড ফোর্সের স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট'?

‘এক দেশ, এক সংবিধান, এক পতাকা'- এই স্লোগানের দেশে নাগাল্যান্ডের পতাকার দায় কার?

দায়ের, দাবির স্বাধীনতা

ইতিহাসে পড়েছিলাম ছোটবেলায়, ১৫ আগস্ট প্রতিটি ভারতীয়ের গর্বের দিন৷ ভারতের ওপর থেকে অবশেষে সরে গিয়েছিল কর্তৃত্বের ছায়া এই দিনে৷ মধ্যরাতে যখন সারা পৃথিবী ঘুমন্ত, তখন স্বাধীনতার আলোয় জেগেছিলাম আমরা৷

এরপর বড় হবার সাথে সাথে শুনেছি একের পর এক স্লোগান- ‘‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়'' বা ‘‘ইয়ে আজাদি পুরি নহি''৷

কারো চোখে স্বাধীনতা স্রেফ ভাঁওতা, কারো চোখে স্বাধীনতা এখনও খণ্ডিত৷ কিন্তু এই দুই স্লোগান স্বাধীনতার বাস্তবিকতাকে অস্বীকার করেনা৷ মিথ্যা হোক, খণ্ডিত হোক, তবুও তো স্বাধীনতা৷

কিন্তু কাশ্মীরেই সেই স্লোগান পাল্টে হয়ে যায় দাবির প্রশ্ন- ‘‘হাম কেয়া চাহতে? আজাদি! জো তুম না দোগে আজাদি, তো ছিনকে লেঙ্গে আজাদি!'' সেখানে ‘আজাদি’ এখনও অধরা!

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ৭২টি বসন্ত কাটানোর পরেও যখন দেশের ভেতর প্রশ্নের সম্মুখীন হয় স্বাধীনতার সংজ্ঞা, বুঝতে হবে আসলেই কোথাও গলদ রয়ে গেছে৷

স্বাধীন দেশে এই স্লোগানগুলির দায় আসলে কার, তা এখনও বুঝতে অক্ষম ‘স্বাধীন ভারত'৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য