এরশাদের শপথ
১১ জানুয়ারি ২০১৪নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চিকিৎসার নাম করে এরশাদকে সিএমএইচে নিয়ে যান৷ তখন তিনি নির্বাচন বর্জনের কথা বলেছিলেন৷ বলেছিলেন নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেয়া জাতীয় পার্টির নেতাদের পদত্যাগ করার কথা৷ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও জাতীয় পার্টির অন্যান্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেন৷ এরশাদ নিজেও নির্বাচিত হন৷ মন্ত্রীরাও কেউ পদত্যাগ করেননি৷ সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি ৩৩টি আসন পায়৷
বৃহস্পতিবার এরশাদের স্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এমপিরা শপথ নিলেও এরশাদ নেননি৷ রওশন এরশাদকে বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করা হয়৷ এরপর শনিবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলে এরশাদ৷ বেলা ১২টার দিকে সংসদ ভবনে তাঁকে শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী৷
জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে এবার সংসদে আত্মপ্রকাশ করেছে৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন৷ রবিবার নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে পারে৷ ৩৩ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টি একইসঙ্গে বিরোধী দলে বসতে চায়, আবার সরকারেও থাকতে চায়৷
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ডয়চে ভেলেকে জানান, এবার তাঁরা একটি আদর্শ বিরোধী দল হতে চান৷ সরকারের শুধু সমালোচনা নয়, তাঁরা সরকারকে সহযোগিতাও করতে চান৷ এজন্য তাঁরা মন্ত্রিসভায়ও থাকতে চান৷ তিনি বলেন এতে কোনো অসুবিধা নেই এবং আইনেরও কোনো লঙ্ঘন হবে না৷
জাতীয় পার্টির আরেক নেতা মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি যদি সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবেও ভূমিকা পালন করে, তারপরও সরকারের আজ্ঞাবহ বলা হবে৷ তাই এই সিল যদি লাগেই, তাহলে জাতীয় পার্টির মন্ত্রিত্ব নেয়াই শ্রেয় হবে, বলে মনে করেন তিনি৷
রওশন এরশাদ দলের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রিত্ব নেয়ার আগ্রহ দেখান৷ তিনি একটি তালিকাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে৷ তাঁরা কমপক্ষে ৪ জন মন্ত্রী চান জাতীয় পার্টি থেকে৷
তবে বিরোধী দলে থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রিত্ব নেয়ায় সায় নেই দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের৷ কিন্তু এরশাদ এই সময়ে রওশনপন্থিদের সঙ্গে পেরে উঠবেন বলে মনে হয় না৷ কারণ এখন পর্যন্ত রওশন এরশাদের সিদ্ধান্ত মতোই কাজ হয়েছে৷ এরশাদও শেষ পর্যন্ত শপথ নিয়েছেন৷
বিরোধী দলে থেকে সরকারে যোগ দেয়ার জাতীয় পার্টির এই আগ্রহের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্ভেজাল বিরোধী দল চাই৷ যারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবে৷ মাথাটা সরকারি দলের আর লেজটা বিরোধী দলের – এটা করা যাবে না৷ আবার মাথা, লেজ বিরোধী দলের, আর পেট সরকারি দলের, এটাও হবে না, হয়ও না৷ সবাই যদি মন্ত্রিত্বের জন্য কাঙাল হয়ে পড়ে, তাহলে গণতন্ত্রের কাঙাল হবে কে?'' সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিরোধী দল থেকে মন্ত্রী হওয়ার বৈধতা নিয়ে ২০০৬ সালে একটি মামলা হয়েছিল৷ ঐ মামলায় তৎকালীন বিচারপতি মোস্তফা কামাল একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন৷ তিনি পর্যবেক্ষণে বলেছেন, একইসঙ্গে সরকারে এবং বিরোধী দলে থাকা অনৈতিক, গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার এবং সংবিধান বহির্ভূত৷
তবে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব পাবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ কারণ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরদিন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনা অন্য দল থেকে মন্ত্রী করা যেতে পারে বললেও, এও বলেছেন যে বিরোধী দলও থাকতে হবে৷ শেষ পর্যন্ত যদি বিরোধী দলে থেকে জাতীয় পার্টি মন্ত্রিত্ব পায় তাহলে বাংলাদেশে তা হবে এক অদ্ভুত এবং অভিনব সরকার ব্যবস্থা৷ আর তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে রবিবার পর্যন্ত৷