ওবামার আইএস বিরোধী কৌশল ব্যর্থ
৭ অক্টোবর ২০১৪সামরিক বিশ্লেষকরা আগে থেকেই বলে আসছেন, আইএস বা আইসিস-কে রুখতে ওবামার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব যে কৌশল নিয়েছে, তা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে৷ তাঁরা বলছিলেন, শুধু বিমান থেকে হামলা চালিয়ে এবং ইরাকের সেনাবাহিনী কিংবা কুর্দিদের পেরশমেরগার মতো ছোট দলের জন্য সমর উপদেষ্টা আইএস-কে রোখা যাবে না৷
বিমান অভিযান আইএস-এর অগ্রযাত্রায় কিছুটা ছেদ টানতে পেরেছে, তা ঠিক, তবে তাদের থামাতে পারেনি৷ ইরাক এবং সিরিয়া, অর্থাৎ দুই দেশের ক্ষেত্রেই কথাটা সত্য৷ তাজা খবর হলো, আইএস যোদ্ধারা ইরাকের রাজধানী বাগদাদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে৷ শহরটির বিমানবন্দরও আইএস-এর নাগালে চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ওবামার শুধু বিমান হামলা চালিয়ে আইএস-কে ঘায়েল করার কৌশলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বেড়েই চলেছে৷ এ অবস্থায় ওবামাও নাকি আইএস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জন্য বিশেষ বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷ এইটুকুতেও রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা খুশি হবে না৷ তাঁরা চান, আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে পদাতিক বাহিনীও পাঠানো হোক৷ তবে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনমত ওবামার সাবধানী কৌশলেরই পক্ষে৷
ওবামার সাবধানী হওয়ার কারণটা বোধগম্য৷ দেশের বাইরের যুদ্ধে ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততায় ইতি টানার অঙ্গিকার করেই নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আইএস-এর উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযান এবং ইরাক নীতির বেশ বড় ভূমিকা রয়েছে৷ সে কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পদাতিক বাহিনী আবার ইরাকে গেলে রাজনৈতিক দিক থেকে অর্থবহ হবে কিনা এ প্রশ্নও উঠছে৷ বলা বাহুল্য, তেমনটি না হবারই সমূহ আশঙ্কা৷
এ পরিস্থিতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো ন্যাটো সদস্য দেশগুলো আইএস বিরোধী লড়াইয়ে অংশ নিতে ইরাকে সৈন্য পাঠাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য আইএস যত বড় হুমকিই হয়ে উঠুক না কেন, জনগণ কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে নয়৷ ন্যাটোর সদস্য তুরস্কও আইএস-এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না৷ আঙ্কারার বেশি ভয় বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিদের নিয়ে৷ তাই আইএস-এর বিরুদ্ধে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, আঙ্কারা এখনো সে সুযোগ দেয়নি৷
এ বিষয়ে আরেকটি কথাও মনে রাখতে হবে৷ পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক হস্তক্ষেপ করুক – এটা আইএস-ও হয়ত চায়৷ তা করলেই আইএস হয়ত সমর্থকদের প্রতি ‘অবিশ্বাসীদের' বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাবে৷ আইএস-এর দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা হবে যথার্থ সাংস্কৃতিক সংঘাত৷ সে ফাঁদে আমাদের পা দেয়া উচিত নয়৷
এ লড়াইয়ে আরব দেশগুলোরও ভূমিকা আছে৷ তবে এই দেশগুলোর জনগণই অর্থ দিয়ে আইএস-এর উত্থানে ভূমিকা রেখেছে৷ এখন আইএস-কেই তাঁদের ভীষণ ভয়৷ কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটা বিমান হামলায় অংশ নেয়ার বাইরে এ দেশগুলোও তেমন কিছু করবে বলে মনে হয়না৷ পৃথিবী দেখছে, কোবানির জনগণ হয়ত আইএস যোদ্ধাদের হাতেই নিজেদের ভাগ্য সঁপে দিতে চলেছে৷ কী ট্র্যাজেডি! আইএসকে পরাস্ত না করা পর্যন্ত এমন অনেক ট্র্যাজেডিই হয়ত দেখতে হবে৷