পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
২০ এপ্রিল ২০১৮ইরানের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির পরমাণু চুক্তিকে বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য করে আন্তর্জাতিক সমাজ৷ এক মাধ্যমে সে দেশের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি আপাতত বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ তাছাড়া সে দেশে চরম রক্ষণশীল শক্তির প্রভাব খর্ব করে উদারপন্থিদের হাত শক্ত করাও এই চুক্তির পরোক্ষ উদ্দেশ্য৷ তবে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে চুক্তির অন্তর্গত করতে না পারায় কিছু মহলে সমালোচনা উঠেছে৷ তাছাড়া ইরান যেভাবে সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন-সহ গোটা অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে চলেছে, সেই উচ্চাভিলাষেও রাশ টানা সম্ভব হয়নি৷ বিশেষ করে ইসরায়েল ও সৌদি আরব ইরানের শক্তি খর্ব করতে বদ্ধপরিকর৷ একটি পরমাণু চুক্তির মধ্যে এত বিষয় অন্তর্গত করা যে বাস্তবসম্মত হতে পারে না, সেই কঠিন সত্য উপেক্ষা করে চলেছেন বিরোধীরা৷ তাই ইরান চুক্তির শর্ত মেনে চলা সত্ত্বেও সেই চুক্তি বাতিল করার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে সমালোচকরা৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে থেকেই সমালোচকদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন৷ ক্ষমতায় এসে তিনি সেই লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন৷ তাঁর প্রশাসনেও বর্তমানে ইরান-বিরোধীদের আধিপত্য চলছে৷ ইউরোপে সহযোগী দেশগুলি ট্রাম্পকে সেই কাজ থেকে বিরত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির ৫০০ সংসদ সদস্য একযোগে এই মর্মে মার্কিন কংগ্রেসকে একটি চিঠি লিখেছেন৷
আগামী ২৭শে এপ্রিল ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও সেই চেষ্টা চালাবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি আগামী ১২ই মে-র মধ্যে চুক্তির ‘মারাত্মক ত্রুটি' দূর করতে না পারলে তিনি ইরানকে নিষেধাজ্ঞা থেকে আর রেহাই দেবেন না৷ উল্লেখ্য, চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়মিত ‘ওয়েভার' স্বাক্ষর করতে হয়৷ গতবার ট্রাম্প তাতে স্বাক্ষর করলেও এবার তিনি বেঁকে বসেছেন৷
এরই মধ্যে ইরান ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, অ্যামেরিকা পরমাণু চুক্তি বাতিল করলে তার পরিণাম ‘অস্বস্তিকর' হতে পারে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ জাভাদ জরিফ নিউ ইয়র্কে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে সরে এলে ইরানের হাতে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে৷ স্বাক্ষরকারী সব দেশ চুক্তি মেনে চললে ইরানও শর্ত মেনে চলবে৷ অ্যামেরিকা চুক্তি ত্যাগ করলে ইরান চুক্তি ছিঁড়ে ফেলবে, বলেন জরিফ৷
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি রক্ষা করতে ইউরোপেও তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে৷ ওয়াশিংটনকে খুশি করতে ইরানের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে৷ তবে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি৷ ১২ই মে-র মধ্যে যৌথ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত কঠিন হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)