1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতিহীন বাংলাদেশ

গোলাম মোর্তোজা
২০ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসের বিষয়ে সরকারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কী বা কেমন? প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত এক শব্দের উত্তর ‘কিছুই না‘। এক বাক্যের উত্তর, সরকারের কোনো রকম প্রস্তুতি ছিল না বা সরকার কোনো রকমের প্রস্তুতি নেয়নি।

https://p.dw.com/p/3ZmYB
ছবি: A. Goni

করোনা ভাইরাস যে একটি গুরুতর প্রাণঘাতী সমস্যার নাম, বাংলাদেশ সরকারের কর্তারা তা বুঝতে পারেননি, বোঝার চেষ্টাও করেননি। সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যে কঠিন কখাগুলো বলছি, তার দু-একটি নমুনা উল্লেখ করা যাক:

১. করোনা ভাইরাস চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ,ইরান, জাপান, ইটালিতে ছড়িয়ে পড়লো।পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সরকারের মন্ত্রীদের কাজ ও কথায় মানুষ বুঝতে পারলো যে, বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সমস্যা নেই।

২. আক্রান্ত দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসতে শুরু করলেন। দেশে আসতে চাইলে অবশ্যই তারা আসতে পারবেন। দেশে বিপদ নেই এমন তথ্য তাদের জানানো হলো কেন? বাংলাদেশও নিরাপদ নয়, এ তথ্য জানানো হলে নিশ্চয়ই অনেক প্রবাসী দেশে ফিরতেন না।

৩. করোনা ভাইরাস যে ছোঁয়াচে রোগ, তা জানা ছিল। আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ ফিরলে ছড়িয়ে পড়বে কোভিড ১৯, তা-ও জানা ছিল। তাহলে ঢাকা বিমানবন্দরের তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের  দুটি শুরু থেকে প্রায় দেড় মাস নষ্ট থাকলো কেন? চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কেন থার্মাল স্ক্যানার থাকলো না? দেশের সবকটি স্থল বন্দর দিয়ে দেশি-বিদেশিরা অবাধে ঢুকে গেল৷ কারো প্রায় কোনো রকম স্ক্রিনিং হলো না। সরকার জানলোই না যে, কে করোনা ভাইরাস শরীরে নিয়ে ঢুকলো আর কে সুস্থ শরীরে ঢুকলো।

৪. সরকারি হিসেবে দেশে মানুষ সাড়ে ১৬ কোটি। অনুমান করা হয় ১৮ বা ২০ কোটি। দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জায়গা একটিও ঢাকা। না, কৌতুক নয়, সত্যি। করোনা কিট শনাক্তের পরীক্ষার জন্যে অপরিহার্য। দেশে তা আছে হাজার দেড়েক। ছোঁয়াচে রোগ কোভিড ১৯ থেকে বাঁচার জন্যে ডাক্তার-নার্সসহ হাসপাতাল কর্মীদের পিপিই ( ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম) অপরিহার্য, যা ডাক্তার-নার্সদের দেওয়া হয়নি। করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের আগে আড়াই মাস সময় পেয়েছে সরকার। এই সময়ে তারা কিট ও পিপিই সংগ্রহের কোনো চেষ্টাই করেনি। এখন বলছে, ‘‘নির্দেশ দেওয়া' হয়েছে।‘‘, ‘‘করতে হবে‘‘ ইত্যাদি।

৫. সরকার এখন যখন চেষ্টা করছে, তখন পৃথিবী প্রায় অবরুদ্ধ। ইচ্ছে করলেই কোনো কিছু এখন করে ফেলা সম্ভব না।

৬. সাধারণ মানুষের মতো সরকারও একটি শব্দ শিখেছে- ‘-কোয়ারান্টিন‘। বিদেশ-ফেরতদের কোয়ারান্টিনে থাকতে বলছে। কোয়ারান্টিন বিষয়টি কেউ সম্ভবত বুঝতে পারছে না, বোঝানোর চেষ্টাও কারো নেই। যখন ইরানের সংবাদ জানছি, প্রতি দশ মিনিটে করোনায় আক্রান্ত একজন মারা যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের সংবাদ দেখছি, কোয়ারন্টিনে থাকা একজনকে দেখতে সেই বাড়ির সামনে কয়েকশ' মানুষ ভিড় করেছে।

Bangladesch Golam Mortoza
গোলাম মোর্তোজা, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকছবি: DW/S. Hossain

৭. ছোঁয়াচে রোগ কোভিড ১৯। ঢাকায় আজও দেখা গেল, মসজিদের ভেতরে তো বটেই, রাস্তা বন্ধ করে নামাজ আদায় করছেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ কাবা ও মসজিদে নববীতেও নামাজ আদায় স্থগিত করা হয়েছে।সরকারি দলের কমিশনাররা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দিচ্ছেন। সেখানে বিয়ে-গায়ে হলুদ-জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে।

৮. সেনাবাহিনীকে দুটি কোয়ারান্টিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা আরো আগেই দেওয়া যেতে পারতো।এসব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার বিপক্ষে হলেও,এটা সমর্থন করছি, কারণ, আমাদের বেসামরিক প্রশাসনের সক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে, তাদের পক্ষে বড় কোনো ক্রাইসিস ম্যানেজ করা সম্ভব না।

৯. এখন একটু দৌড়াদৌড়ি করার চেষ্টা করছে সরকার।সকালে বলছেন, ‘‘এখনও এমন পরিস্থিতি‘‘ তৈরি হয়নি।বিকেলে শিবচর লকডাউন ঘোষণা করছেন।আগের দিন বললেন, করোনা ভাইরাস না ছড়ানো পর্যন্ত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাববে না, পরের দিনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেন।গুজব-আতঙ্ক ছড়াবেন না বলে,কর্মকান্ড দিয়ে সরকার নিজেই গুজব-আতঙ্ক উৎপাদন করছে।

করোনা ভাইরাস প্রবেশ করেছে, সংক্রমণও হচ্ছে।কতটা ছড়াবে বা কতটা সংক্রমণ হবে, তা অজানা।জানা আশঙ্কা-আতঙ্ক নিয়ে বাংলাদেশ চলছে, সামনে না পেছনে- বলা মুশকিল।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য