করোনার ভয়াবহতা সামলাতে সরকারের জরুরি ব্যবস্থা
২৭ জুলাই ২০২১২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুতে আবারো নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ আগের দিনও নতুন রেকর্ড ছিল৷ সংক্রমণের হার ২৮.৪৪ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১.৬৬ শতাংশ৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার গত দুই দিনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ডাক্তার ও নার্সের সংকট মেটাতে কোনো নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই চার হাজার ডাক্তার ও চার হাজার নার্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তাদের দ্রুত নিয়োগ দেয়ার জন্য পুলিশ ভ্যারিকেশনও বাদ দেয়া হয়েছে৷ মন্ত্রিসভার বৈঠকে সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বলা হয়েছে, চিকিৎসক ও নার্সরা দেড় বছর ধরে এই করোনায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন৷ তাই যত দ্রুত সম্ভব নতুন ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন৷
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জানিয়েছে, করোনায় এ পর্যন্ত আট হাজার ৮৯০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে চিকিৎসক তিন হাজার ৫৮ জন, নার্স দুই হাজার ১৭৫ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী তিন হাজার ৬৭৫ জন৷ আর করোনা এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৬৯ জন চিকিৎসক মারা গেছেন৷ ফলে করোনা চিকিৎসায় এখন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা দিয়েছে৷
এর বাইরে মঙ্গলবার সরকারের এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকা দেয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ আর টিকা দেয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে গেলেই চলবে, অ্যাপে নিবন্ধন লাগবে না৷ আর ফ্রন্টলাইনারদের পরিবারের সদস্যদের ১৮ বছর বয়স হলেও টিকা দেয়া হবে৷
চলমান লকডাউনে শিল্প কারখানা খোলা রাখার দাবি নাকচও করা হয় বৈঠকে৷
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্ত ভালো, কিন্তু অনেক দেরিতে হয়েছে৷ তিন মাস আগে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করা দরকার ছিল৷ আর এখন সিদ্ধান্ত হলেও রাতারাতি তো নিয়োগ দেয়া যাবে না৷ আমরা আসলে এখনো করোনাকে পেছন থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছি৷ সামনে থেকে পারছি না৷ তাই মনে হচ্ছে, আমরা যেন সব কিছু নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়েছি৷ কারণ, আমাদের যে চিকিৎসক ও নার্স আছেন তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত৷ চিকিৎসা সেবাও পর্যাপ্ত নয়৷ ফলে করোনা ঠোকানো আরো কঠিন হয়ে পড়বে৷’’ ‘‘তাছাড়া আমরা আগেই বলেছিলাম গ্রামের মানুষ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে না৷ তখন আমাদের কথায় কান দেয়া হয়নি,’’ বলেন তিনি৷
গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন ২৫৮ জন৷ শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯২৫ জন৷ শুধু ঢাকা বিভাগেই মারা গেছেন ৮৪ জন৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে খুলনা, ৫০ জন৷ কয়েক দিন ধরেই ঢাকায় মুত্যু বাড়ছে৷ এর প্রধান কারণ হলো, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৭০ ভাগই গ্রাম থেকে আসা৷ গ্রামে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় যারা অবস্থাসম্পন্ন তারা ঢাকায় আসছেন চিকিৎসার জন্য৷ পাশাপাশি গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে মুত্যুও বাড়ছে৷ অনেকেই সর্দি-কাশি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ টেস্ট কারাচ্ছেন না৷ চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছেন না৷
ঢাকার ১৬টি সরকারি কোভিড হাসপাতালের ১১টিতেই কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই৷ দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৫ জেলার হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই৷
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘‘করোনা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এখন ঈদের পর আবার শহরে নতুন ঢেউ হয়ে ফিরে আসছে৷ শহরের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে৷’’
এক সপ্তাহের বিরতি দিয়ে আবার সারাদেশে লকডাউন চলছে৷ কিন্তু তারপরও গত সাত দিনে সংক্রমণ গড়ে ৬ ভাগ হারে বেড়েছে৷ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘ঈদের আগে দুই সপ্তাহ লকডাউন দিয়ে ঈদের জন্য এক সপ্তাহ বিরতি দেয়া হলো৷ কিন্তু করোনা তো আর ঈদ বোঝে না৷ সে তার গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে৷’’
সরকার এবার স্থানীয় পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ডা. মুশতাক হোসের বলেন, ‘‘এটা আগেই দরকার ছিল৷ আর নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের সাথে মেডিকেল কলেজের ছাত্রদেরও কাজে লাগানো দরকার৷ করোনার শুধু চিকিৎসা নয় এর ম্যানেজমেন্টও অনেক জরুরি৷ সেখানে ছাত্রদের কাজে লাগানো যায়৷ নয়তো পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘লকডাউন গ্রামে, এমনকি শহরেও ঠিকমতো কার্যকর করা যাচেছ না৷ ফলে লকডাউনেও সংক্রমণ কমছে না৷ টিকার শুরুতেই আমরা ধাক্কা খেয়েছি৷ করোনার ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা না থাকায় আমরা ঠিকমতো পরিকল্পনা করিনি৷ আমরা মনে করেছিলাম করোনা চলে গেছে৷ ফলে পাত্তা দেইনি৷ ব্যবস্থাপনা ঠিক করিনি৷ প্রস্তুতি রাখিনি৷ যার ফল এখন আমরা পাচ্ছি৷’’