করোনা কেড়ে নেবে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস?
২৯ মার্চ ২০২০ঘরবন্দি জীবনে পত্রিকা পড়ে তারা জেনে নিচ্ছেন দেশ ও বিশ্বের খবর৷ সময় কাটাতে তাদের আদর্শ সঙ্গী হয়ে উঠছে কাগজের পত্রিকা৷
এমনই একজন গ্রিনরোডের বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন৷ গৃহিনী শাহনাজের ছেলে-মেয়েরা যে যার মতো ব্যাস্ত৷ নাতিকে নিয়ে সময় কাটে তার৷
ফোনে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের ভয়ে ঘর থেকে একদমই বের হচ্ছি না৷ পত্রিকা পড়া আমার পুরানো অভ্যাস৷ দিনের শুরুতে পত্রিকাটা না পড়লে মন কেমন করে৷ শুনেছি, করোনা ছড়াতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকেই পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন, আমি করিনি৷ তবে হকার আর উপরে আসে না৷ গেটে দারোয়ানের হাতে দিয়ে যায়৷ আমি নীচে গিয়ে নিয়ে আসি৷’’
একই কথা বলেন তার প্রতিবেশী ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মুন্সী৷ তিনি বলেন, ‘‘পত্রিকা পড়া দীর্ঘদিনের অভ্যাস৷ না পড়লে ভালো লাগে না, তাই রাখছি৷ তবে আমাদের ভবনের কয়েকজন করোনা ভাইরাস ছাড়নোর ভয়ে পত্রিকা রাখা বাদ দিয়েছেন৷’’
অনলাইনের এ যুগে সারা বিশ্বে কাগজে ছাপা পত্রিকার ভবিষ্যৎ আগেই কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিল৷ করোনা ভাইরাস কি তবে ওই ঝুঁকিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিলো? গত কয়েক দিনে ঢাকার বাইরের কয়েকটি সংবাদপত্র ঘোষণা দিয়েই ছাপার কাজ বন্ধ করেছে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিাফোর ডটকম৷
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কাগজের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায় কিনা এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা শুরু হয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংবাদপত্র মালিকদের একটি সংগঠন নোয়াব বিজ্ঞাপনে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলে, বাতাস, তামা, কার্ডবোর্ড, প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের মতো কিছু বস্তুতে করোনা নানা মেয়াদে বেঁচে থাকলেও কাগজের উপর এই ভাইরাসের বেঁচে থাকার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি৷
কিন্তু তাদের এ বিজ্ঞাপন জনমনে আতঙ্ক খুব একটা কমাতে পারেনি৷
রাজধানীর ভূতের গলির বাসিন্দা আইনজীবী এ কে এম খালেকুজ্জামান বলেন, ‘‘পেশাগত কারণেই আমাকে দেশ-বিদেশের খবর রাখতে হয়৷ ছোট বেলা থেকে পত্রিকা পড়ার অভ্যাসও আছে৷ বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষার পত্রিকাই রাখি৷ কিন্তু আজ (২৬ মার্চ) সকালে দরজার সামনে পত্রিকা না দেখে দারোয়ানকে ফোন দিলাম৷ উনি বললেন ‘এ বিল্ডিংয়ে ১০ জনের নয়জনই পত্রিকা রাখবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে৷ তাই হকারকে আজ ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ আমি বললাম, আমি তো মানা করিনি৷ উনি পরে পত্রিকা এনে দিতে চাইলেন৷ মন খারাপ হলেও সরকারের নির্দেশ মানতে তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করে দেই৷’’
অনেকে ইচ্ছা করেও আপাতত পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে৷ তাদের যুক্তি, কাগজের মাধ্যমে না ছড়ালেও হকারের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ তাই অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন তারা৷
টানা ১০ দিনের ছুটিতে অফিস-আদালত বন্ধ৷ অনেকে বাড়ি চলে গেছেন৷ এর ফলেও পত্রিকা বিক্রি অনেক কমে গেছে৷
কয়েকজন হকার বলেন, গত কয়েক দিনে তাদের পত্রিকা বিক্রি অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে৷
কলাবাগান এলাকার হকার ফারুক হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, সকাল সকালই তিনি পত্রিকা বিলি করতে বের হন৷ কিন্তু গত কয়েক দিনে তার নিয়মিত ক্রেতাদের বেশিরভাগই এখন পত্রিকা নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷
‘‘কয়েকদিন আগেও অনায়াসে ২০০টি পত্রিকা বিক্রি হয়ে যেতো, এখন ৫০টিও বিক্রি করতে পারছি না৷ আমরা কিভাবে বাঁচবো৷’’
শরীয়তপুরের সরকারি চাকরিজীবী রানি আক্তার বলেন, ‘‘অফিসে দুই তিনটা পত্রিকা পড়তাম৷ এখন তো অফিস বন্ধ হয়ে গেল৷ বাসায়ও নিয়মিত পত্রিকা রাখতাম৷ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শুরুর দিকে পত্রিকা ঘণ্টাখানেক রোদে রেখে তারপর ঘরে নিতাম৷ কিন্তু এখন আর সে সাহসও পাচ্ছি না৷ তাই বাদ দিয়েছি৷ বাড়িতে বয়স্ক এবং শিশুরা রয়েছে, তাদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’
গত ১৫ দিন ধরে সংবাদপত্রের চাহিদা একটু একটু করে কমছিল৷ কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানায় হকার্স ইউনিয়ন৷