করোনা চিকিৎসাকে এগিয়ে দিলেন দুই বাঙালি
২ মে ২০২০করোনা ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা কম৷ সার্স, বা ইবোলা ভাইরাসের তুলনায় প্রায় কিছুই নয়৷ তাও কী করে এই ভাইরাস মহামারীর চেহারা নিল বিশ্বজুড়ে, তার একটা কারণ শুরু থেকেই বলছিলেন গবেষকরা৷ কোভিড ১৯ ভাইরাসটি দেশ এবং পরিবেশ অনুযায়ী তার চরিত্র বদলাচ্ছে৷ ফলে এর কোনও একক, সাধারণীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেওয়া সম্ভব নয়৷ এক দেশে, এক ধরনের পরিবেশে যে ওষুধ, যে চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করবে, আরেক দেশে তা কাজ নাও করতে পারে৷ কারণ ভাইরাসটি তার চরিত্র বদলাচ্ছে৷ কাজেই করোনার চিকিৎসায় সাফল্য পেতে গেলে, কোভিড ১৯ ভাইরাসের তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী যে জিনটি নিজেকে বদলে নিয়ে আরও বেশি সংক্রামক হয়ে উঠছে, প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে সেটা শনাক্ত করা জরুরি৷ ভারতের জন্য সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করে ফেললেন পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্স–এর দু'জন গবেষক নিধান বিশ্বাস এবং পার্থপ্রতিম মজুমদার৷ এ২এ নামে কোভিডের ওই ‘স্ট্রেন’টি তারা খুঁজে পেয়েছেন, ভারতে যেটি নিজের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ব্যাপক সংখ্যায় হামলা চালায় আক্রান্তের ফুসফুসের কোষে৷
এই গবেষণাটি করতে গিয়ে বিশ্বের ৫৫টি দেশ থেকে সংগৃহিত তিন হাজার ৬৩৬টি করোনা ভাইরাসের আরএনএ সিকোয়েন্স দুজন খতিয়ে দেখেছেন৷ ভারতের ৩৫টি আরএনএ সিকোয়েন্সের নমুনাও তারা পরীক্ষা করেছেন, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাসের ওই অংশটি চরিত্র পরিবর্তন করেছে৷ করোনা ভাইরাস নিয়ে যে আন্তর্জাতিক গবেষণা এখন হচ্ছে, তার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এর আগে বলেছিলেন, কোভিড ১৯–এর আরএনএ–র গঠনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে সেটিকে দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া সম্ভব৷ কিন্তু দুই বাঙালি বিজ্ঞানী যা বলছেন, তাতে ঠিক উল্টো কাজটা ঘটিয়ে ফেলছে ভাইরাসটি৷ নিজেকে পরিবর্তিত করে আরও শক্তিশালী হচ্ছে৷
কোভিড ১৯ ভাইরাসটির এই আচরণে কি মনে হচ্ছে না, যে সেটি রীতিমত ভাবনাচিন্তা করে এই কাজ করছে? যেন তার নিজস্ব একটা মস্তিষ্ক আছে! দুই বিজ্ঞানীর অন্যতম অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদার ডয়চে ভেলে–কে জানালেন, ‘‘প্রচুর মিউটেশন হয়, যেগুলো তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি না৷ যেগুলো সারভাইভ করে, শুধু সেইগুলোই দেখতে পাচ্ছি৷ সুতরাং আমাদের মনে হচ্ছে যে ওদের মস্তিষ্ক আছে৷ অন্য মিউটেশন যেগুলো অ্যারাইজ করে, সেগুলো সারভাইভ করতে পারে না বলে আমরা স্যাম্পলিংয়ের মধ্যেই আনি না৷ এটা আমাদের একটা স্যাম্পলিং বায়াস৷’’
এই মিউটেশনে তৎপর ভাইরাস স্ট্রেনটি চিহ্নিত করতে পারায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী সুবিধে হবে? অধ্যাপক মজুমদার জানাচ্ছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা বলে কিছু নেই এটার৷ ড্রাগের জন্যে চেষ্টা করছে৷ ড্রাগ ডিসকভারির জন্যে চেষ্টা করছে, ভ্যাকসিনের জন্যে চেষ্টা করছে৷ এইটার থেকে মেইন সুবিধে যেটা হবে, সেটা হচ্ছে, যেহেতু এটা ডমিনেন্ট টাইপ, ডমিনেন্ট সাব–টাইপ অফ দ্য ভাইরাস, ওষুধ বা ভ্যাকসিন, যা–ই আমরা আবিষ্কার করার চেষ্টা করি, যেহেতু আরও দশ রকমের ডমিনেন্ট সাব–টাইপ আছে, এইটার এগেইনস্টে যদি টার্গেট না করা যায়, তা হলে আমরা ডিজিজটাকে কন্ট্রোল করতে পারব না৷ আইদার ভ্যাকসিন দিয়ে, বা ট্রিটমেন্ট দিয়ে৷ সেইটাই হচ্ছে মেজর উদ্দেশ্য৷ সেইটাই হচ্ছে চোখ খোলানোর ব্যাপার৷’’
অধ্যাপক নিধান বিশ্বাস এবং অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদারের এই গবেষণার ফলাফল শিগগিরই প্রকাশিত হবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ–এর জার্নালে, যে জাতীয় প্রতিষ্ঠান ভারতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে৷ অন্য চিকিৎসক এবং গবেষকরা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে চিন্তা–ভাবনা, মত বিনিময় ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন৷ যা আরও কয়েক পা এগিয়ে দিচ্ছে করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টাকে৷