করোনা রোগীদের চিকিৎসাই এবার ঈদ
১৮ মে ২০২০এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাপিয়ে দেয়নি৷ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, ‘‘এই মহামারির সময় আমরা ঈদ বা ছুটির কথা চিন্তা করছি না৷ আমরা চিন্তা করছি মানুষকে কিভাবে সেবা দেয়া যায়৷ মানুষকে কিভাবে সুস্থ রাখা যায়৷ সর্বোচ্চ ডেডিকেশন দেখানোর এটাই সময়৷ রোগীদের চিকিৎসাই হবে এবারের ঈদ৷’’
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৩২০টি বেডে এখন করোনা রোগী আছেন ৩০৭ জন৷ চিকিৎসক এবং নার্স মিলিয়ে আছেন ৯০০ জন৷ স্বাভাবিক সময়ে অর্ধেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছুটি পেতেন৷ কিন্তু এবার শত ভাগেরই ছুটি বাতিল৷ হাসপাতালের করোনা ফোকাল পার্সন অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘দুই-একজন ঈদের ছুটি চেয়েছিলেন ৷ তাদের বলেছি আমরা সবাই বেঁচে থাকলে অনেক ছুটি পাবেন৷ অনেক ঈদ করতে পারবেন৷’’
ঢাকা মহানগরে এখন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ১২টি৷ আর ঢাকার বাইরে সব জেলায় সরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট করা হয়েছে৷ করোনা টেস্টের জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে ৪১টি সেন্টার করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, ‘‘এই ঈদে আমরা করোনা হাসপাতাল তো বটেই সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাও যাতে ব্যাহত না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি৷ সেখানেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো চিকিসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছুটি পাবেন না৷ আর করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোও খোলা থাকবে৷ আসলে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত আমরা চিকিৎসা সেবাকে জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করছি৷ স্বাস্থ্য প্রশাসনও সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে৷ এবার ঈদ হলো করোনা রোগীর চিকিৎসা৷’’
নিয়ম অনুযায়ী করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িত চিকিৎসক নার্সরা বাসায় যেতে পারেন না৷ তারা টানা ১০ থেকে ১৪ দিন ডিউটি করে পরবর্তী ১৪ দিন নির্ধারিত হোটেল বা কোয়ারান্টিন সেন্টারে আইসোলেটেড থাকেন৷ যাদের করোনা সংক্রমণ ধরা পরে তাাদের আলদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়৷ বাকিরা আবার কাজে যোগ দেন৷ বাংলাদেশে এভাবেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা চিকিৎসায় নিয়েজিত আছেন৷ কুয়েত মৈত্রী হাসাপতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহাব উদ্দিন জানান,‘‘আমাদের হাসপাতালে ২০০ বেড রয়েছে করোনার জন্য৷ চিকিৎসক ১২৭ জন এবং নার্স ১২৩ জন৷ তারা কেউই সাধারণত বাসায় যান না৷ আমাদের ব্যবস্থাপনায়ই হোটেলে থাকেন৷ তাদের খাবার দাবারও আমরাই সরবরাহ করি৷ ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে থাকার পর ছয় দিন বাসায় পরিবারের সাথে থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসকদের আমরা এখন সেই সুযোগ দিতে পারছি না৷’’
বাংলাদেশে করোনায় ন মৃত্যু ও আক্রান্তর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২১ জন৷ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪৯৷ ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬০২ জন৷ এপর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২৩ হাজার ৮৭০ জন৷
ঈদে বাংলাদেশের করোনার সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা৷ ঈদের সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে চলাচলে আরো কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না৷ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকা থেকে অনেকেই যে যেভাবে পারছেন গ্রামে ছুটছেন৷ ফেরিঘাটগুলোতে এখন ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়৷ ভিড় সামলাতে কোথাও কোথাও ফেরি মাঝ নদীতে নোঙর করে রাখা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতামূলক মাইকিংও তেমন কাজ দিচ্ছে না৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘ঈদের সময় পরিস্থিতি কি হতে পারে আমরা তাও বিবেচনা করছি৷ এজন্য পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে করোনা হাসপাতাল ও টেস্ট বাড়ানোর কথাও আমরা মাথায় রেখেছি৷’’
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) হিসেব অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত ৭৪৮ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন তিন জন৷ আক্রান্তদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন তিনজন৷ এক হাজার ৫০০ চিকিৎসক সেল্ফ কোয়ারান্টিনে আছেন৷ আর বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় আক্রান্ত নার্সের সংখ্যাও সম পরিমান৷ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৫ জন৷
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রধান ডা. নিরুপম দাস জানান, ‘‘আমরা চিকিৎসকরাতো এই করোনায় ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি৷ কোনো পরিস্থিতিতেই কিন্তু মাঠ ছাড়িনি৷ আমাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে নানা সমস্যা থাকলেও কিন্তু আমরা ডেডিকেটেড৷ এই ঈদেও আমরা কাজ করব৷ আমাদের কাছে দেশের এই দুর্যোগে মানুষের সেবাই প্রাধান্য পাচ্ছে৷ এটা কোনো চাপ বা চাকরি হারানোর ভয়ে নয়৷ এটা চিকিৎসক হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব বোধ থেকেই করছি৷’’