1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা রোগীদের চিকিৎসাই এবার ঈদ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ মে ২০২০

ঈদুল ফিতরের সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ারই আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাই করোনা হাসপাতালগুলোতে কোনো ছুটি থাকবে না৷

https://p.dw.com/p/3cPYe
ছবি: bdnews24

এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাপিয়ে দেয়নি৷ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, ‘‘এই মহামারির সময় আমরা ঈদ বা ছুটির কথা চিন্তা করছি না৷ আমরা চিন্তা করছি মানুষকে কিভাবে সেবা দেয়া যায়৷ মানুষকে কিভাবে সুস্থ রাখা যায়৷ সর্বোচ্চ ডেডিকেশন দেখানোর এটাই সময়৷ রোগীদের চিকিৎসাই হবে এবারের ঈদ৷’’

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৩২০টি বেডে এখন করোনা রোগী আছেন ৩০৭ জন৷ চিকিৎসক এবং নার্স মিলিয়ে আছেন ৯০০ জন৷ স্বাভাবিক সময়ে অর্ধেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছুটি পেতেন৷ কিন্তু এবার শত ভাগেরই ছুটি বাতিল৷ হাসপাতালের করোনা ফোকাল পার্সন অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘দুই-একজন ঈদের ছুটি চেয়েছিলেন ৷ তাদের বলেছি আমরা সবাই বেঁচে থাকলে অনেক ছুটি পাবেন৷ অনেক ঈদ করতে পারবেন৷’’

ঢাকা মহানগরে এখন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ১২টি৷ আর ঢাকার বাইরে সব জেলায় সরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট করা হয়েছে৷ করোনা টেস্টের জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে ৪১টি সেন্টার করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, ‘‘এই ঈদে আমরা করোনা হাসপাতাল তো বটেই সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাও যাতে ব্যাহত না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি৷ সেখানেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো চিকিসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছুটি পাবেন না৷ আর করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোও খোলা থাকবে৷ আসলে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত আমরা চিকিৎসা সেবাকে জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করছি৷ স্বাস্থ্য প্রশাসনও সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে৷ এবার ঈদ হলো করোনা রোগীর চিকিৎসা৷’’

দুই-একজন ঈদের ছুটি চেয়েছিলেন: ডা. মাহবুবুর রহমান

নিয়ম অনুযায়ী করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িত চিকিৎসক নার্সরা বাসায় যেতে পারেন না৷ তারা টানা ১০ থেকে ১৪ দিন ডিউটি করে পরবর্তী ১৪ দিন নির্ধারিত হোটেল বা কোয়ারান্টিন সেন্টারে আইসোলেটেড থাকেন৷ যাদের করোনা সংক্রমণ ধরা পরে তাাদের আলদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়৷ বাকিরা আবার কাজে যোগ দেন৷ বাংলাদেশে এভাবেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা চিকিৎসায় নিয়েজিত আছেন৷ কুয়েত মৈত্রী হাসাপতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহাব উদ্দিন জানান,‘‘আমাদের হাসপাতালে ২০০ বেড রয়েছে করোনার জন্য৷ চিকিৎসক ১২৭ জন এবং নার্স ১২৩ জন৷ তারা কেউই সাধারণত বাসায় যান না৷ আমাদের ব্যবস্থাপনায়ই হোটেলে থাকেন৷ তাদের খাবার দাবারও আমরাই সরবরাহ করি৷ ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে থাকার পর ছয় দিন বাসায় পরিবারের সাথে থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসকদের আমরা এখন সেই সুযোগ দিতে পারছি না৷’’

বাংলাদেশে করোনায় ন মৃত্যু ও আক্রান্তর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২১ জন৷ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪৯৷ ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬০২ জন৷ এপর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২৩ হাজার ৮৭০ জন৷

আমাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে নানা সমস্যা থাকলেও কিন্তু আমরা ডেডিকেটেড: ডা. নিরুপম দাস

ঈদে বাংলাদেশের করোনার সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা৷ ঈদের সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে চলাচলে আরো কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না৷ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকা থেকে অনেকেই যে যেভাবে পারছেন গ্রামে ছুটছেন৷ ফেরিঘাটগুলোতে এখন ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়৷ ভিড় সামলাতে কোথাও কোথাও ফেরি মাঝ নদীতে নোঙর করে রাখা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতামূলক মাইকিংও তেমন কাজ দিচ্ছে না৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘ঈদের সময় পরিস্থিতি কি হতে পারে আমরা তাও বিবেচনা করছি৷ এজন্য পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে করোনা হাসপাতাল ও টেস্ট বাড়ানোর কথাও আমরা মাথায় রেখেছি৷’’

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) হিসেব অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত ৭৪৮ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন তিন জন৷ আক্রান্তদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন তিনজন৷ এক হাজার ৫০০ চিকিৎসক সেল্ফ কোয়ারান্টিনে আছেন৷ আর বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় আক্রান্ত নার্সের সংখ্যাও সম পরিমান৷ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৫ জন৷

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রধান ডা. নিরুপম দাস জানান, ‘‘আমরা চিকিৎসকরাতো এই করোনায় ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি৷ কোনো পরিস্থিতিতেই কিন্তু মাঠ ছাড়িনি৷ আমাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে নানা সমস্যা থাকলেও কিন্তু আমরা ডেডিকেটেড৷ এই ঈদেও আমরা কাজ করব৷ আমাদের কাছে দেশের এই দুর্যোগে মানুষের সেবাই প্রাধান্য পাচ্ছে৷ এটা কোনো চাপ বা চাকরি হারানোর ভয়ে নয়৷ এটা চিকিৎসক হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব বোধ থেকেই করছি৷’’