1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনাকালে পাকিস্তানে কালোবাজারে মদের দাম বেড়েছে

২৪ এপ্রিল ২০২১

পাকিস্তানে মুসলিমদের জন্য মদ নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও করোনাকালে পাকিস্তানে মদের চাহিদা বেড়েছে। দামও।

https://p.dw.com/p/3sTrU
করোনাকালে পাকিস্তানে কালোবাজারে মদের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri

টাকা ফেললেই পাকিস্তানে কালোবাজারে মদ কিনতে পাওয়া যায়। করোনাকালে বিভিন্ন দেশে মানুষের মধ্যে মদ খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। পাকিস্তানও ব্যতিক্রম নয়। পাকিস্তানে অবশ্য মুসলিমদের মদ কেনা আইনত নিষিদ্ধ। তাও মদ খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দামও।

নিষেধ থাকলেও সকলে যে তা মানেন এমন নয়। আর যাদের কাছে অর্থ আছে, তারা চড়া দামে কালোবাজার থেকে মদ কেনেন। যাদের আয় কম, তারা কম দামের মদ কেনার দিকে ঝোঁকেন।

করোনার ফলে মদের সরবরাহ কমেছে। আইনি পথে বা কালোবাজারে মদের জোগান কম। তার ফলে দাম অনেক বেড়েছে। 

পাকিস্তানে ১৯৭৭ থেকে অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রিত। তখন জুলফিকার আলি ভুট্টোর সরকার মদ নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। শুধু কিছু বার ও ক্লাবে মদ পাওয়া যেত। পরে ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়া উল হকের শাসনে ঘোষণা করা হয়, মদ খাওয়া ইসলাম-বিরোধী। মুসলিমদের কাছে মদ বিক্রি করা হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। তবে কিছু অঞ্চলে অ-মুসলিমদের জন্য মদের দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়। প্রচুর কর দিয়ে কয়েকটি অঞ্চলে অ-মুসলিমরা এই দোকান চালাতে পারে।

পাকিস্তানের এরকম মদের দোকান

পাকিস্তানের সব চেয়ে জনবহুল শহর হলো করাচি। সেখানে একটি মদের দোকানে কাজ করেন হিন্দু  যুবক রাহুল। সেখানে যারা মুসলিম নন, তাদের কাছে মদ বিক্রি করা যেতে পারে। তবে রাহুল জানিয়েছেন, তাকে অর্থ দিলেই তিনি মদ দেন। 

Pakistan Karatschi Wine Laden
পাকিস্তানে এই দোকান থেকে মুসলিমদের মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.com

রাহুল ডিড়াব্লিউকে বলেছেন, ''হিন্দু, মুসলিম, ক্রিশ্চানদের অনেকেই মদ খান। কার ধর্ম কী তা দেখা আমার কাজ নয়। তবে আমাকে সতর্ক থাকতে হয়।'' তার মতে, ''এই ব্যবসায় সতর্ক না হলে যে কেউ বিপদে ফেলে দিতে পারে।''

রাহুল জানিয়েছেন, তিনি মদ বিক্রি করে মাসে ২৫ হাজার টাকার মতো রোজগার করেন। বড়লোক ক্রেতারা তাকে টিপসও দেন। আগে তিনি তুলো-শ্রমিক ছিলেন। তার থেকে এখন অনেক বেশি রোজগার করছেন।

করাচিতে রাহুলের মদের দোকান হলো অভিনব। বাকি পাকিস্তানে এমন দোকান দেখতে পাওয়া যায় না। মুসলিম ক্রেতারা কালোবাজার থেকেই মদ কেনেন। অনুমোদিত মদের দোকানে তাও দাম নিয়ন্ত্রিত থাকে। বাকি পাকিস্তানে কালোবাজারে করোনার সময় মদের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

বেশি পয়সা দিয়ে মদ কিনতে হচ্ছে

ওমর হলেন পাকিস্তানের ৩৭ বছর বয়সী গায়ক। তিনি জানিয়েছেন, মদের দাম বেড়ে গেলেও আরো বেশি মানুষ তা কিনে খাচ্ছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''গত বছর পর্যন্ত আমি অন্যদের সঙ্গে বসে মদ খেতাম। এখন রোজ একা খাই।'' তবে তিনি জানিয়েছেন, ''পাকিস্তানে যারা মদ খান, সামাজিক কারণে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করেন।''

ওমর জানিয়ে্ছেন, ২০২০ সালের লকডাউনের পর থেকে বিয়ার এবং মদের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছিল। এখন তা দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। আগে স্থানীয় ভদকার বোতল পাওয়া যেত সাতশ টাকায়। এখন তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৬৫০ টাকা।

ডিডাব্লিউকে ৩৮ বছর বয়সী সাংবাদিক হীরা বলেছেন, তিনি এক বোতল ব্ল্যাক লেভেল কিনেছিলেন ছয় হাজার টাকা দিয়ে। কিন্তু তাতে জল মেশানো হয়েছে। অন্য অনেকের অভিজ্ঞতা একই। এখন তিনি স্থানীয় কোম্পানির বিয়ার কিনছেন। হীরা বলেছেন, এত টাকা খরচ করে বিদেশি ব্র্যান্ড কিনে যদি এই অবস্থা হয় তো না কেনাই ভালো।

কী বলছে কোম্পানি

মুরি ব্রুয়ারির সিইও ইসফানিয়ার ভান্ডারা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''গত বছর মার্চ ও এপ্রিল তাদের উৎপাদন বন্ধ ছিল। গমের মতো বেশ কিছু জিনিস নষ্ট হয়েছে। কোভিডের জন্য লাভ ৫০ শতাংশ কমেছে। তবে অনেক সংস্থা তো করোনার সময় বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের থেকে আমাদের অবস্থা ভালো। তবে ২০২১ থেকে বিক্রি বাড়ছে।''

তবে ভান্ডারা জানিয়েছেন, তারা খুবই লো প্রোফাইলে থাকেন। তাদের সংস্থা ১৮৬০ সালে তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশদের চাহিদা মেটাতে। এটা পাকিস্তানের সব চেয়ে পুরনো সংস্থা এবং সর্ববৃহৎ মদ প্রস্তুতকারক।

করোনাকালে তারা ১০ হাজার গ্যালন হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছেন। তাতে তাদের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হয়েছে।

মাভরা বারি/জিএইচ