করোনার পরে মিশ্র ঈদ আনন্দ
৩ মে ২০২২করোনায় গত দুই বছর প্রায় সব আনন্দই বন্ধ ছিল৷ বিশেষ করে সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসবগুলোতে৷ আর জার্মানি এক কঠিন নিয়মকানুনের দেশ বলে দেশি-প্রবাসী সকলেই এদেশে কম-বেশি নিয়মের বেড়াজালে বন্দি৷
জার্মানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন, ইস্টার, কার্নিভালের উৎসবগুলোতে করোনার বিধিনিষেধ কড়াকড়িভাবে মানতে দেখেছি৷ তবে জার্মানিতে ৫০-৫৫ লাখ মুসলমানের বাস হলেও রোজা বা ঈদগুলো নিরবে পালন করা হয়ে থাকে বলে বাইরে থেকে তেমন বোঝা যায় না৷ কোলনে বেশ কয়েকটি এলাকা রয়েছে যেখানে তুর্কিবংশোদ্ভুত বা তুর্কিদের বসবাস, সেসব এলাকা বা দোকানগুলোতে অবশ্য কিছুটা হলেও রোজার মাস বা ঈদের আমেজ পাওয়া যায়৷ তাদের কয়েক জেনারেশন জার্মানিতে আছেন, বাইরে থেকে দেখা না গেলেও বেশ হৈচৈ করেই ঈদ উদযাপন করেন তারা৷ একই পরিবারের অনেক মানুষ হওয়ায় উইকেন্ড না হলেও তারা রাতে একসাথে ইফতার বা ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন৷ অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইসলাম ধর্মাবলম্বী অনেকেরই বড় পরিবার, তাদের অনেকেই একসাথে হয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন৷ আমার বাসার কাজে সাহায্য করেন কসোভো থেকে আসা শিরিয়া৷ তার মা-বাবা, ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী নিয়ে বড় পরিবার৷ শিরিয়ার ভাইবোনেরা নিজেদের ছোট ছোট পরিবার নিয়ে একই শহরে থাকলেও গত দুই বছর সবাই একসাথে হয়ে ঈদ করেননি তারা৷ তাই এবারের ঈদ তাদের কাছে অনেক বেশি আনন্দের৷ এমন অনেক বড় পরিবারই আছেন জার্মানিতে, বিশেষ করে কোলনে৷ বলা যায়, তাদের জন্য করোনা পরবর্তী ঈদ অনেক বেশি খুশির, আনন্দের৷ বিদেশে থেকেও ওদের ঈদ আমাদের দেশের মতোই!
এবার রোজার মাসে কোলনের অন্যান্য ছোট ছোট মসজিদ ছাড়াও বড় সেন্ট্রাল মসজিদে নিয়মিত নামাজ হয়েছে, যদিও সবাইকে মাস্ক পরতে হয়েছে৷ অত্যন্ত সুন্দর মসজিদটিতে ১২০০ এর বেশি মুসল্লি একসাথে নামাজ পরতে পারেন৷ রোজার মাসে অনেক জার্মানও মসজিদটি দেখতে গেছেন, ভেতরে ঢুকে আগ্রহ নিয়ে করেছেন নানা প্রশ্নও৷
আসলে ঈদ নিয়ে আমি তেমন কিছু লিখতে পারি না৷ কারণ ঈদ মানে আমার কাছে এখনও সেই ছোটবেলায় দেশের ঈদ৷ আর এদেশে আমাদের ঈদ হচ্ছে অফিস, রান্নাবান্না আর প্রিয় মানুষদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়া৷ গতকালও তাই করেছেন অনেকেই৷ করোনাকালে অন্যদের সাথে মিলিত হয়ে যা বন্ধ ছিলো তা করেছেন কেউ কেউ, এবারতো আর সে বাঁধা নেই !
কাজের দিনে ঈদ হওয়ায় জার্মানির বিভিন্ন শহরে বাঙালিদের কেউ কেউ ঈদ আনন্দমেলার আয়োজন করেছেন এবারের সপ্তাহান্তে৷ পরিচিতদের অনেকে নতুন জামা জুতোও কিনেছেন! তবে বিভিন্ন দেশের অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, মহামারি করোনা সামাজিকতা বা হৈ হুল্লোড় করার আগ্রহ কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে৷ তবে ঘটা করে ঈদ উদযাপন হোক বা না হোক অন্তত বাধ্য হয়ে কাউকে ঘরে থাকতে হবে না-এটাই বড় মুক্তি!