1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নায়ক

১৬ এপ্রিল ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনের মধ্যেও কিছু মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে৷ এরকম একজন কেটি গ্রিগস৷ শরণার্থী শিবিরে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3b0D7
ছবি: picture-alliance/dpa/K. J. Hildenbrand

জার্মানির বার্লিনের একটি শরণার্থী শিবিরের পরিচালক গ্রিগস৷ তার শিবিরে দুই শতাধিক মানুষ রান্নাঘর ও শৌচাগার ভাগ করে ব্যবহার করে৷ কিভাবে তারা সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় ‍রাখবেন- এই চিন্তায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রিগস রাতে ঘুমাতে পারছেন না৷ 

তিনি বলেন, ‘‘তাদের জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সত্যি খুব কঠিন৷ প্রতিদিন সকালে তাদের কারো পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজতে হয়৷ খাবার রান্না বা খাওয়া সবই করতে হয় অন্যদের সঙ্গে৷'' 

গ্রিগসের শিবিরে অল্প কয়েকটি পরিবার আলাদা অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছে৷ তাদের আলাদা রান্নাঘর বা শৌচাগার আছে৷ সেখানে গড়ে ১৬ জনকে একই রান্নাঘর ও শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়৷ এ অবস্থায় ঝুঁকি কমাতে বাসিন্দাদের সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে৷ আর রান্নাঘর ব্যবহারে প্রত্যেককে আলাদা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷

গ্রিগস বলেন, ‘‘এমনিতেই এসব কারো সঙ্গে ভাগ করা কঠিন৷ তার উপর এখন তাদের প্রতিবেশীর বোধবুদ্ধি সম্পন্ন আচরণের উপরও নির্ভর করতে হচ্ছে৷''

ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের কারণেই এসব মানুষ শরণার্থী শিবিরে থাকে৷ যদিও তাদের অনেকেই এখন কম-বেশি স্বাধীন এবং নিজেদের বাড়ি ভাড়া নিজেরাই যোগাড় করেন৷ কিন্তু কারো কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়৷ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন অসুস্থ৷ কেউ কেউ শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী৷ কেউ এখনো ফেলে আসা জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না, ভুগছেন অবসাদে৷ করোনা সংকটে তাদের জীবন আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে বলে মনে করেন গ্রিগস৷

বলেন, ‘‘তাদের জন্য আমার কষ্ট হয়৷ আমরা সব সময় তাদের ঝুঁকি হ্রাসের চেষ্টা করে যাচ্ছি৷''

তবে এত চেষ্টার পরও গ্রিগস শিবিরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না৷ ওই দুঃসময়ের জন্য তিনি প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন৷ 

তিনি কয়েকটি শিবিরের কক্ষ খালি করে সেগুলোতে আইসোলেশন ও কোয়ারান্টিনের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করেছেন৷ সেখানে এখন পর্যন্ত একজন সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্তে হয়েছেন৷ তবে সৌভাগ্যবশত পরীক্ষায় তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি৷ তিনি বলেন, ‘‘তার ফল নেগেটিভ দেখে আমরা সবাই খুশিতে চিৎকার করেছি৷''

গ্রিগের শিবিরের শরণার্থীরা ২৫টি ভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন৷ তাদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ সবার ভাষা আলাদা৷

গ্রিগস নিজেও যুক্তরাজ্য বংশোদ্ভূত জার্মান৷ দীর্ঘমেয়াদী অসুখ থাকায় তিনি নিজে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণদের দলে৷ ফলে এখন তিনি বাসায় বসেই নিজের দল পরিচালনা করছেন৷

সবার মধ্যে সহযোগিতার মনভাব বাড়াতে গ্রিগস তার শিবিরে ‘লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড' (কাউকে ফেলে যাবেন না) লেখা ব্যানার টানিয়ে দিয়েছেন৷ তিনি প্রত্যেক বাসিন্দার কাছে আলাদা আলাদা করে চিঠি পাঠিয়েছেন৷ চিঠিতে তিনি কোনো কারণে ভবন লকডাউন হলে কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন৷ সেখান থেকে যারা এখনো কাজে যাচ্ছেন তারা ওই চিঠি সঙ্গে নিয়ে যান৷ নিজের শিবিরকে মিস করছেন জানিয়ে গ্রিগস বলেন, ‘‘সৌভাগ্যবশত আমার শিবিরের সবাই খুব ভালো৷ আমি তাদের মিস করছি৷ তাদের অধিকাংশকেই যুদ্ধ, ‍নৃশংসতা, নির্যাতন, হত্যা, সমুদ্রের মৃত্যুর আতঙ্ক সহ্য করতে হয়েছে৷ তাই তারা মানসিকভাবে খুবই দৃঢ়৷''

বেন নাইট/এসএনএল/কেএম