কলকাতার পূজায় কি মানা হবে কোভিডবিধি?
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১পূজা মৌসুমে ভারত জুড়ে সবার আগে পালিত হয় গণেশ উৎসব বা গণেশ চতুর্থী৷ এরই মধ্যে কোভিডের ডেল্টা প্লাসের সর্তকতা নিয়ে তৃতীয় ঢেউ আসন্ন৷ তাই সতর্কতা হিসেবে দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু সরকার উৎসবের জমায়েতে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেই রেখেছিল৷ কর্ণাটক সরকার আংশিক অনুমতির সাপেক্ষেই গণেশ পূজার উৎসব পালনে ছাড়পত্র দেয়৷ সেখানে রাত ন'টার পরে বিসর্জনে নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ মুম্বইয়ে এই পূজা কলকাতার দুর্গোৎসবের সামিল৷ বাণিজ্যনগরীতে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করেছিল৷ অনলাইনে গণেশ উৎসব দেখে ক্ষান্ত দিতে হয়েছে নগরবাসীকে৷
কলকাতায় দুর্গাপূজা তবে কোন চেহারায় হতে চলেছে? তার খবর নেওয়ার আগে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী শুনে নেওয়া যাক৷ ডা. অনির্বাণ দোলুই ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘থার্ড ওয়েভের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি৷ বিধি মানতেই হবে৷ সম্পূর্ণরূপে টিকাকরণের কাজও শেষ হয়নি, তাই ভাইরাস আবার মিউটেট করে নতুন ভাবে হানা দিতে পারে৷ যে কোনো রকমের ভিড় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পক্ষে আদর্শ৷ অবাঞ্ছিত ভিড় এড়াতে পারলে কোভিডকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব৷''
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়েছে৷ তবে রূপরেখা চূড়ান্ত হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ বছর মণ্ডপে ঢোকা ও প্রতিমা দর্শনের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম থাকবে, তা পরে জানানো হবে৷ পুজো কার্নিভাল হবে কি না, তাও ভেবে দেখা হবে৷ তবে উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়তেই অবশ্য আমজনতা কোভিড উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে পড়েছে৷ বাজার, শপিং মলে ঠাসা ভিড়৷ মাস্ক নেই অনেকের মুখে৷ সামাজিক দূরত্ব উধাও৷
এই পরিস্থিতিতে অনেক উদ্যোক্তা বারোয়ারি পূজার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের গতবারের রায় মেনে এগোচ্ছেন৷ আদালতের নির্দেশ দিয়েছিল, মণ্ডপ থাকবে দর্শকশূন্য৷ এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি৷ যদিও তাতে আদালত নির্দেশ বদল করেনি৷ সেই নির্দেশ কি এ বারও মেনে চলবেন উদ্যোক্তারা? দমদম তরুণ দলের সম্পাদক বিশ্বজিৎ প্রসাদের বক্তব্য, ‘‘এমন অনেক মানু্ষ আছেন, যাঁরা হাইকোর্টে কেস করেন পূজা বন্ধ করতে৷ তবে যা রায় মিলবে, সেটাই মানতে হবে৷ কিন্তু দোকান-বাজারের ভিড় থেকে কি করোনা ছড়ায় না?''
ইতিমধ্যে সাড়ম্বরে খুঁটি পুজো হয়ে গিয়েছে৷ মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে৷ কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে, টালা বারোয়ারি, চেতলা অগ্রণী, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ ও ৬৬ পল্লী জানিয়েছে, করোনাবিধি মেনেই উৎসব পালন করবে তারা৷ টালা বারোয়ারির শুভ্রজিৎ পাল বলেন, ‘‘কোভিড গাইডলাইন মেনে পূজা করব৷ খোলামেলা অনেকটা জায়গা আমাদের, অসুবিধা হবে না৷ উৎসবের স্পনসর থাকে৷ মানুষ না এলে তারা বিজ্ঞাপন দেবে না৷ সব দিকটাই মাথায় রাখা হচ্ছে৷''
রাস্তার উপর পূজা বলে কড়া বিধিনিষেধ বাদামতলা আষাঢ় সংঘে৷ উদ্যোক্তা সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পথচারীদের জন্য ঠাকুর দেখার ব্যবস্থায় দূরত্ব বিধি আরও বাড়িয়েছি৷ ড্রাইভ-ইন দর্শনও থাকছে৷''
৬৬ পল্লীর প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায়ও জানালেন, গতবারের হাইকোর্টের রায়কে মেনে নিয়েই এগোচ্ছেন তাঁরা৷ উদ্যোক্তাদের কাছে স্বস্তির, পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে৷ তাই মহারাষ্ট্রের গণেশ উৎসবের সঙ্গে দুর্গাপূজাকে এক পংক্তিতে রাখতে রাজি নন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব'-এর সদস্য শাশ্বত বসু৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় করোনার থেকে বেশি ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টিবি, ক্যানসারে মানুষ আক্রান্ত হয়৷ গত বছরের অভিজ্ঞতাও দেখুন, কলকাতায় পূজার পর সংক্রমণ বেশি ছড়ায়নি৷''
অনেক পূজা কমিটি এগিয়ে এসেছে গণটিকাকরণে৷ শাশ্বত বলেন, ‘‘আমরা টিকাকরণে জোর দিয়েছি৷ পুজোর সঙ্গে যুক্ত যারা, তাদের অনেকের দু'টো ডোজ হয়ে গিয়েছে৷ মাস্ক, স্যানিটাইজার সবটাই থাকছে৷ এ বার আশা করি কেউ আদালতে যাবেন না!''
কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আদৌ স্বস্তিতে নেই৷ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘গতবার আদালত হস্তক্ষেপ করেছিল বলে দ্বিতীয় ঢেউ দেরিতে এসেছিল৷ এখন দেশে করোনা বাড়ছে৷ সরকারি প্রকল্প অর্থাৎ দুয়ারে সরকার, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভিড়ে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে৷ যদি এখন থেকে সতর্কতা না নিই, তাহলে পুজোর সময় বা পরে করোনা বাড়বেই৷ তাই ফের বিষয়টি আদালত হস্তক্ষেপ করুন, নইলে বিপদ৷''