কলকাতায় একদিনে করোনায় মৃত চার ডাক্তার
১১ আগস্ট ২০২০তাঁরা প্রত্যেকেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতেন। সেই করোনায় আক্রান্ত হয়েই মারা গেলেন শ্যামনগরেরচিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্য, কোঠারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত তপন সিনহা, ব্যারাকপুরের বিশ্বজিৎ মন্ডল এবং বর্ধমানের প্রবীণ চিকিৎসক পি সি দে। এই নিয়ে অগাস্টে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মারা গেলেন নয় জন চিকিৎসক। সব মিলিয়ে রাজ্যে মৃত্যু হলো ২০ জন চিকিৎসকের।
এই চার জনকে ধরলে সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ২০০ জন চিকিৎসক। এত জন চিকিৎসক মারা যাওয়ায় ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ''করোনার চিকিৎসা যাঁরা করছেন, তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।''
আইএমএ গত শনিবার এই চিঠি দেয়। তখন ১৯৬ জন চিকিৎসকের করোনায় মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের দেয়া তথ্য বলছে, মৃত চিকিৎসকদের মধ্যে ১৭০ জনের বয়স ৫০ বছরের বেশি। ৪০ শতাংশ হলেন জেনারেল ফিজিশিয়ান। জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে লোকে তাঁদের কাছেই যায়। তাই তাঁদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আইএমএ-র দাবি, ''সব বেসরকারি চিকিৎসক ও তাঁদের পরিবারের লোকেদেরও স্বাস্থ্যবিমার আওতায় নিয়ে আসুক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি।''
আইএমএ-র জাতীয় সভাপতি রজনী শর্মা জানিয়েছেন, ''সব চেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, চিকিৎসকরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেড পাচ্ছেন না। বেড পেলেও ওষুধ পাচ্ছেন না। তাই তিনি চিকিৎসকদের সমস্যা সমাধানের দিকে প্রধানমন্ত্রীকে নজর দিতে বলেছেন।''
দিল্লিতে ফুসফুস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ওষুধ পাওয়া নিয়ে সমস্যা আছে। কলকাতায় এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওষুধের জোগাড় করে দেয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। আমি চেষ্টা করে সেই ওষুধ তাঁকে পাঠাই।''
কলকাতায় যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা সকলেই জনপ্রিয় চিকিৎসক। হাসপাতালে যে কাজ করতে কেউ রাজি হতেন না, পিপিই পরে সেই কাজ করতেন তপন সিনহা। এভাবেই তিনি রোগীদের ইকোকার্ডিওগ্রাম করেছেন। অন্য সব কাজ করেছেন। তাঁর চিকিৎসায় প্রচুর করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গত ১০ জুলাই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। দিন কয়েক পরে তাঁর পরিবার তাঁকে কোঠারি থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
প্রদীপ দে-ও ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁকে যখনই ডাকা হোক তিনি রোগীর কাছে চলে যেতেন। তিনি ও বিশ্বজিৎ মন্ডল করোনাকালেও রোগী দেখা বন্ধ করেননি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক সহ করোনা যোদ্ধাদের জন্য দেশের লোককে থালা-বাসন বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বলেছিলেন। তারপর একবার প্রদীপ বা মোবাইলের টর্চ জ্বেলে শ্রদ্ধা জানাতে বলেন। তারপরেও অবশ্য চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী নিগ্রহের অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। বিশেষ করে যাঁরা হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা করছেন, তাঁদের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ এসেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বার বিপদটা অনেক বড়। চিকিৎসকরাই যদি চিকিৎসার সুযোগ না পান, তা হলে তাঁরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাবেন কী করে? করোনা যোদ্ধাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।
জিএইচ/এসজি(আইএমএ, আনন্দবাজার)