ধর্মান্তর নিয়ে ধুন্দুমার
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮মধ্য কলকাতার রানী রাসমনি রোড, যেখানে কলকাতার অধিকাংশ মিটিং-মিছিল, অবস্থান হয়, সেখানে ‘হিন্দু সংহতি মঞ্চ’ সংগঠনের মঞ্চ৷ পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের আধিক্য এবং দাপট ঠেকাতে নাকি তৎপর কলকাতাভিত্তিক এই সংগঠন হিন্দু সংহতি৷ এদিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস প্রতিবছরই দিনটি পালন করা হয়৷ এবারও প্রকাশ্য সভায় হিন্দুত্বের পক্ষে এবং অহিন্দুদের বিরুদ্ধে গরম গরম ভাষণ দিয়ে সেই উদযাপনই হচ্ছিল৷ একটা সময় মঞ্চে সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো জনৈক হুসেন আলি ও তাঁর পরিবারের ১৩ জন সদস্যকে, যাদের মধ্যে কয়েকটি বাচ্চাও ছিল৷ ঘোষণা করা হলো, এই হুসেন আলি সপরিবার ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হয়েছেন! এরপর ওদের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে রেখেই আরও কিছুক্ষণ চলল ভাষণ৷
কিন্তু কৌতুহলী হয়েছিলেন সভায় হাজির সাংবাদিকরা৷ যে কোনও কারণেই হোক, ওই হুসেন আলি, বা তাঁর পরিবারের লোকেদের আচরণ সংবাদ মাধ্যমের সন্ধানী নজরে সন্দেহজনক ঠেকেছিল৷ তাই অনুষ্ঠান শেষ হতেই কয়েকজন সংবাদকর্মী, যাঁরা স্থানীয় দু'টি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা এগিয়ে যান হুসেন আলি ও তাঁর পরিবারের দিকে৷ জানতে চান, তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন, পরিবারের বাকি সদস্যদের নাম কী, কেন তাঁরা হঠাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হলেন, ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন৷ কিন্তু তাতেই ক্ষেপে যান হিন্দু সংহতি মঞ্চের কর্মীরা৷ সাংবাদিকদের ঠেলে, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়৷ শুরু হয় ধ্বস্তাধ্বস্তি৷ হাতে বাঁশের লাঠি, মাথায় ‘জয় হিন্দু' ফেট্টি বাঁধা একদল লোক বেছে বেছে সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুরু করে৷ এমনকি মহিলা সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি৷ এই গন্ডগোল দেখে তৎপর হয় পুলিশ৷ গ্রেপ্তার করা হয় হিন্দু সংহতি মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তপন ঘোষ ও আরও ৩ নেতাকে৷ রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা নিন্দায় সরব হন৷ প্রশ্ন ওঠে, অন্য ধর্ম থেকে এভাবে কাউকে চাইলেই হিন্দু করা যায় কিনা?
গোটা ঘটনার পর ব্যাকফুটে চলে গেছে হিন্দু সংহতি মঞ্চ৷ সংগঠনের বর্তমান সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বোঝাতে চাইলেন, মারদাঙ্গার ঘটনা যতটা প্রচার করা হচ্ছে, ততটা ঘটেনি৷ একটা কথা কাটাকাটি, অল্প ঠেলাঠেলি হয়েছিল বটে, কিন্তু বাঁশ দিয়ে মারার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়৷ তবে কী নিয়ে বচসা শুরু হলো, সেটা তিনি জানেন না, খোঁজ নিয়ে জানাবেন৷ আর যাঁর, বা যাঁদের ধর্মীয় পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা, সেই হুসেন আলি, বা তাঁর পরিবার সম্পর্কেও নির্দিষ্ট কোনও তথ্য জানাতে পারলেন না তিনি৷ অবাঙালি টানে বাংলা বলা হুসেন আলির বাড়ি কোথায়, সেটাও হিন্দু সংহতি মঞ্চের জানা নেই৷ তবে একটা কথা নিজেই স্বীকার করলেন মঞ্চের সভাপতি যে, এভাবে চাইলেই কাউকে হিন্দু করা যায় না৷তাঁর দাবি, তাঁরা কারও ধর্মান্তর করেননি, হুসেন আলি নিজেই, আইনি প্রক্রিয়া মেনে ধর্ম বদল করেছেন৷ এবার যেহেতু অন্য ধর্ম থেকে আসা লোকজনকে হিন্দু ধর্মে সরাসরি গ্রহণ করা হয় না, ওদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে হিন্দু সংহতি মঞ্চ৷ তবে দেবতনু ভট্টাচার্যের কথার অস্বস্তির মধ্যেই পরিষ্কার ছিল, এই হাঙ্গামা আর অশান্তির নেতিবাচক প্রচার তাঁরা চাননি৷
২০১৫ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন...