টিকা
৮ সেপ্টেম্বর ২০১২‘ডক্টর্স উইদাউট বডার্স' এর সদস্যরা গিনির স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সহায়তায় এই টিকা অভিযানটি চালিয়েছেন৷ প্রকল্পের পরিচালক শার্ল গোদ্রি জানান, আমাদের ৩০টি টিমের সদস্যরা গড়ে প্রতিদিন ১০০০ মানুষকে টিকা দিয়েছেন৷
কলেরা এখন পর্যন্ত একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি৷ এটি ‘ভিব্রিও কলেরা' ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়৷ এর একটি লক্ষণ হল,অতিরিক্ত পেটের অসুখ বা উদরাময়৷ বার্লিনের রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ক্লাউস স্টার্ক ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কলেরা রোগটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বিশেষ করে যেসব মানুষ কিছুটা দুর্বল এবং যাদের খাওয়া দাওয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সন্তোষজনক নয়, তাদেরই কোনো সংক্রমণ হলে কলেরার মত কঠিন অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ ঠিকমত চিকিৎসা দেয়া না হলে অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে৷''
কলেরায় পান করাটা জরুরি
কলেরায় আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল পদার্থ পান করা উচিত৷ রোগীর শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করা দরকার৷ কেননা কলেরায় আক্রান্তদের দেহ থেকে প্রতি দিন ১০ থেকে ২০ লিটার তরল পদার্থ বের হয়ে যায়৷
বার্লিনের ‘ডক্টর্স উইদাউট বডার্স'এর জেবাস্টিয়ান ডিটরিশ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সংক্রমণের পর থেকে রোগের লক্ষণগুলি দেখা দেয়া পর্যন্ত, সময়টা খুব কম৷ এটা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে৷ এর ফলে দেখা দেয় অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়রিয়া সেই সাথে বমি৷ এরপর ডায়রিয়ার সাথে শুধু পানিই বের হয়৷''
কলেরা অত্যন্ত সংক্রামক এক রোগ৷ বিশেষ করে দূষিত পানির মাধ্যমেই সংক্রমিত হয় রোগটি৷ যে সব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত নয়, সেসব দেশেই এই রোগ দেখা দেয়ার ঝুঁকি বেশি৷ এসব জায়গায় নদী, পুকুর, খাল বিল বা খোলা কুয়ার পানি পান করে অনেক মানুষ৷ এছাড়া অন্যান্যভাবেও সংক্রমণ দেখা দেয়৷ ডা. ডিটরিশ'এর ভাষায়, ‘‘কলেরায় আক্রান্ত কোনো মানুষ যদি কারো সঙ্গে হাত মেলায় এবং সেই ব্যক্তি যদি খাবার তৈরি করে, তাহলে সেই খাবার খেয়েও কলেরার সংক্রমণ হতে পারে৷''
এশিয়া, আফ্রিকার অনেক দেশে কিংবা যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়া অঞ্চলগুলিতে স্বাস্থ্যকাঠামো ভাল নয়৷ তাই কোনো জায়গায় ভূমিকম্পের পর বা শরণার্থী শিবিরগুলিতে কলেরা মহামারির আকারে দেখা দেয়৷ উদাহরণ স্বরূপ হাইতির নাম করা যায়৷
টিকায় সুফল
এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে গিনিতে কলেরার ঝুঁকিপূর্ণ দুই অঞ্চলে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে৷ এই টিকা প্রচুর পানির সাথে গিলে খেতে হয়৷ এতে মানুষের শরীরে তা ভালভাবে কাজ করে৷ দ্বিতীয়বার টিকা দিতে আসাটাও খুব জরুরি৷ কেননা ভালভাবে রোগ প্রতিরোধের জন্য কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার টিকা দিতে হয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই টিকা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়৷ গণটিকা অভিযান কলেরা মহামারির আকারে দেখা দেয়ার সাথে সাথেই শুরু করা প্রয়োজন, যাতে রোগটি আর বিস্তৃত হতে না পারে৷
চিকিৎসকদের টিমটি অন্যান্য বিষয়ের দিকেও নজর দিয়েছেন৷ যেমন গৃহস্থালীর কাজকর্মে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া, দূষণমুক্ত পানির ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা, স্বাস্থ্যরক্ষার সামগ্রী বিলি করা ইত্যাদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তারা৷
তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি গিনিবাসীদের টিকা দেয়ার স্থানে আসার জন্য উদ্দীপ্ত করা৷ এজন্য চিকিৎসক টিমটির সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাইকের মাধ্যমে জানিয়ে দেন, কবে কোথায় টিকা দেয়া হবে৷ সাধারণত সহজেই সেই সব জায়গায় যাওয়া যায়৷ ডা. শার্ল গোদ্রি জানান, ‘‘যে সব অঞ্চলের মহামারি প্রতিরোধ কেন্দ্রে আমরা টিকা দিয়েছি, সেই সব জায়গায় সংক্রমণের হার একেবারে রোধ হয়েছে৷''
বাংলাদেশেও একই সমস্যা
বাংলাদেশেও দূষিত পানির মাধ্যমে কলেরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন বিদ্যুতের অপ্রতুলতা থাকে তখন অনেককেই নোংরা পানি দিয়ে গৃহস্থালীর কাজকর্ম সারতে হয়, বাধ্য হলে পানও করতে হয়৷ ফলে বেড়ে যায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা৷ ডায়রিয়ার রোগীদের মধ্যে আবার ২৫ শতাংশ কলেরার জীবাণু বহন করেন৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বিশেষ করে দূষিত পানির কারণেই ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়৷ এ ছাড়া টাইফয়েড, জন্ডিস ও চর্ম রোগসহ আরো কিছু রোগ দেখা দেয় এ কারণে৷ তাই মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপও কমে যাবে৷ উল্লেখ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক জানিয়েছেন, টিকাদানের আন্তর্জাতিক সংগঠন, ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইডেশন' বা ‘গাভি' বাংলাদেশকে ২০১৩ সাল থেকে কলেরা ও নিউমোনিয়ার দুটি টিকা দেবে৷ এর ফলে রোগ দুটিকে আয়ত্তে আনার ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ৷
প্রতিবেদন: গুডরুন হাইজে/আরবি
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন