1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কাজের ভবিষ্যৎ আমরাই স্থির করবো’

রল্ফ ভেংকেল/এসবি১ মে ২০১৫

১লা মে উপলক্ষ্যে জার্মানির শ্রমিক সংগঠন নিজস্ব ভূমিকা এমনভাবেই তুলে ধরেছে৷ রল্ফ ভেংকেল অবশ্য মনে করেন, ভবিষ্যতে কর্মজগতের বিকাশে অংশ নিতে পারলেই তাদের খুশি হওয়া উচিত৷

https://p.dw.com/p/1FIfW
Hannover Messe Highlights 2015
ছবি: Reuters/W. Rattay

অ্যামেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের রক্তাক্ত প্রতিবাদ-বিক্ষোভের স্মরণে গত ১২৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক সংগঠনগুলি ১লা মে দিনটিকে প্রতিবাদ ও ছুটির দিন হিসেবে পালন করে আসছে৷ শ্রমিকদের জন্য আরও মজুরি ও বাড়তি অধিকারের দাবি উচ্চারিত হয় এই দিনে৷ জার্মানিতে বহুকাল রাজনীতিকরা মে দিবস এড়িয়ে গেছেন৷ তারপর শেষ পর্যন্ত নাৎসিরা ক্ষমতায় এসে ১লা মে দিনটিকে শ্রম দিবস ঘোষণা করে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন দিনটিকে কাজে লাগাতে শ্রমিকদের কল্যাণের নানা দাবি তুলে এসেছে৷ যেমন গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি তারা কোম্পানিগুলির কাছে সপ্তাহে ৫ দিনের কাজের দাবি তুলেছিল৷ শেষ পর্যন্ত সাফল্য আসে৷ তখন শিশুর মুখের কথা তুলে ধরে স্লোগান উঠেছিলো – ‘শনিবারের দিনটা বাবা আমার'৷

শ্রম দিবসে এর চেয়ে ভালো স্লোগান শ্রমিক সংগঠনগুলি আর কখনো তুলে ধরতে পারেনি বললে চলে৷ তাদের প্রভাব সে সময়ে তুঙ্গে উঠেছিল৷ বার্লিন প্রাচীরের পতনের পরের স্লোগান কারো মনে আছে? তখন বলা হয়েছিল – ‘বিভাজন একত্র করে'৷ সেটা শুনে অবশ্য অনেকের ভ্রূকুটি দেখা গিয়েছিল৷

এবার জার্মানির শ্রমিক সংগঠনদের বার্তা হলো – ‘কাজের ভবিষ্যৎ আমরাই স্থির করবো'৷ এ যেন মরিয়া হয়ে হারানো সম্পদ আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টা৷ কারণ জার্মানিতে শ্রমিক সংগঠনগুলির দশা খ্রিষ্টান সংগঠন ও ক্রিড়া সংগঠনগুলির মতো৷ তাদের সবারই সদস্য সংখ্যা কমে চলেছে, নতুন প্রজন্মের দেখা নেই এবং সদস্যদের মধ্যে নারীদের অনুপাত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম৷ তাই শ্রমিক সংগঠনগুলি যখন অভিযোগ করে, যে মে দিবসে মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য মিছিলে অংশ না নিয়ে বিয়ার খিয়ে আরাম করাই বেশি পছন্দ করে, তখন আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই৷

এমন প্রবণতার পেছনে কারণও আছে৷ প্রথমত প্রায় ২৫ বছর ধরে জার্মানির শ্রমিক সংগঠনগুলির সদস্যসংখ্যা কমে চলেছে৷ কারণ শ্রমিকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে কাজের জায়গায় জরুরি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ও গুরুত্ব কমে গেছে৷ তার উপর প্রায় এক দশক ধরে তাদের কর্মী ছাঁটাই বন্ধ করার জন্য সংগ্রাম চালাতে হয়েছে৷ বেতন বাড়ানোর বদলে কর্মীদের সংখ্যা স্থিতিশীল রাখার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে৷ মোটকথা তাদের এমন সংযত আচরণের ফলে ধুঁকতে থাকা জার্মান অর্থনীতি ‘ইউরোপের অসুস্থ লোক'-এর তকমা ঝেড়ে ফেলে ইউরো এলাকার চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে৷

Porträt - Rolf Wenkel
রল্ফ ভেংকেল, ডয়চে ভেলেছবি: DW

এটা অবশ্যই ভালো ও সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল৷ অর্থনীতিবিদরা বলেন, এর ফলে জার্মানিতে কর্মী নিয়োগের ব্যয় কমেছে৷ ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে জার্মানি তার প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে৷ তার পরেও আমাকে বলতে হবে, যে কর্মজগতের ভবিষ্যৎ মোটেই শ্রমিক সংগঠনগুলির হাতে নেই৷ জার্মানি ও জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলিতে কর্মজগতের ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার বিবর্তনের উপর নির্ভর করছে৷ সমাজে জন্মহার কমে চলেছে, বয়স্কদের সংখ্যা বাড়ছে৷ কর্মজগতের ভবিষ্যৎ স্থির করছেন ইঞ্জিনিয়ার ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁরা ভবিষ্যতের উৎপাদন প্রক্রিয়ার নতুন রূপ দিচ্ছেন, যার পোশাকি নাম ‘ইন্ডাস্ট্রি ফোর পয়েন্ট জিরো'৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক চাকরির চরিত্র অটোম্যাটাইজেশন ও ডিজিটালাইজেশন-এর ফলে আমূল বদলে যাবে৷ অর্থাৎ কারখানার কনভেয়ার বেল্টের গুরুত্ব কমে যাবে৷ তার জায়গা নেবে এমন সব পেশা, যার জন্য চাই আরও বেশি উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ৷

এর ফলে মনে শঙ্কা জন্মাতেই পারে৷ তাহলে কি আর আমাদের চাকরি থাকবে না? আমার চাকরিই বা কতটা নিরাপদ? আমার মনে হয়, এমন প্রেক্ষাপটে শ্রমিক সংগঠনগুলি অনেকটা রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করবে, অতীতের অবস্থা যতটা সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করবে৷ কর্মজগতের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের মোটেই কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকবে না৷ বড়জোর পরোক্ষভাবে তারা এটা মেনে নেবে৷ তবে শুনতে মারাত্মক মনে হলেও সেটা তাদের জন্য হয়তো খারাপ হবে না৷ কারণ যেখানেই প্রযুক্তির উন্নতির কারণে শ্রমিকের প্রচলিত ভূমিকা ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে, কাজের চরিত্র বদলে যাচ্ছে; মানুষকে বলা হচ্ছে যে সারা জীবন ধরে তাদের পেশা বদল করে চলতে হবে – এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য তুলে ধরার অধিকার মোটেই মন্দ নয়৷ এমনকি ভবিষ্যতেও না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য