কাটমানি ফেরতের ডাক তৃণমূল নেত্রীর
২২ জুন ২০১৯পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে তৃণমূলকে ‘ট্রিপল টি' তকমা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ যার অর্থ তৃণমূল তোলাবাজি ট্যাক্স। লোকসভায় বাজে ফলের পর কারণ খুঁজতে গিয়ে এই তোলাবাজি ট্যাক্সের বিরূপ প্রভাব টের পেয়েছে রাজ্য শাসকেরা৷
স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তৃণমূল নেতারা৷ এটাকেই বলা হয় কাটমানি৷ কোনো প্রকল্পে আয় ১০ হাজার টাকা হলে, তার একটা অংশ নেয় শাসক দলের নেতারা৷ সাধারণ মানুষের বলছেন, টাকা দিতে রাজি না হলে, প্রকল্প সুবিধা পাওয়া যায় না৷
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের এক কর্মীসভায় দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি গ্রহণের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷ কাটমানির অর্থ ফিরিয়ে দিতে নেতাদের নির্দেশ দেন মমতা৷ তিনি বলেন, ‘বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা থেকে দলের লোকেরা ২৫ শতাংশ কমিশন নিচ্ছে। সমব্যথী প্রকল্পে ২ হাজার টাকা থেকে ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। যারা টাকা নিয়েছেন, ফেরত দিতে দিন।'
এমন কথায় বিপাকে পড়েছেন পঞ্চায়েত ও পুরসভা স্তরের তৃণমূল নেতারা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় সাধারণ মানুষ জোট বেঁধে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন নেতার বাড়িতে। তাঁরা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলছেন। এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। কোথাও বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে, কোথাও ছোঁড়া হচ্ছে ইঁট-পাটকেল। এর ফলে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট বাড়ছে।
বিরোধীরা শাসক দলকে আক্রমণের এমন সুযোগ হাতছাড়া করছে না। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, " তৃণমূল নেতারা তোলা তুলছেন অনেক দিন ধরে। আগে কেন এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি মুখ্যমন্ত্রী? প্রধানমন্ত্রী যখন প্রচারে এসে এ কথা বলেছিলেন, ওদের গোঁসা হয়েছিল। "বামেদের বক্তব্য, তৃণমূল নেত্রীই কাটমানির পথ প্রশস্ত করেছেন। তাদের দাবি, একটি সভায় মমতা বলেছিলেন, ৭৫ শতাংশ টাকা দলকে দিতে হবে। বিধানসভায় সিপিএম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, " শুধু টাকা ফেরতের কথা বললেই হবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে তৃণমূল একটি তালিকা প্রকাশ করুক যাতে কোন নেতা কত টাকা নিয়েছেন তার হিসেব থাকবে।" প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, "নারদ-সারদা দুর্নীতিতে তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের দুর্নীতি শুধু নিচুতলায় আছে, এটা ভাবলে ভুল হবে।''
মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য মন্তব্যে যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গিয়েছে, নির্বাচনে তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হলে কি তা সামনে আসত? এমনই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে বিদ্বজ্জনেরা। অভিনেতা বাদশা মৈত্রের মন্তব্য, "তোলাবাজি কাল থেকে শুরু হয়নি, আগেও ছিল। অতীতে ভোটে তৃণমূল জিতেছে বলে সেটা অপরাধ ছিল না। আজ নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ায় এ নিয়ে হইচই হচ্ছে। পরিচালক অরিন্দম শীলের বক্তব্য, "আত্মসমালোচনা ও সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে তৃণমূলে। তাই একের পর এক পদক্ষেপ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাও তারই মধ্যে পড়ে।''
কাটমানি বিতর্ক তৃণমূলের বিপদ বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসু। তিনি বলেন, "তৃণমূল নেত্রী শুদ্ধিকরণের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ করে থাকতে পারেন। দলের ভাবমূর্তি ফেরানো তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু, এর ফলে এখন যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে, কয়েকমাস আগে তিনি এই কথা বললে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। যে ভোটাররা তোলাবাজির জন্য মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তাঁরা তৃণমূলকে ফের সুযোগ দিতে পারতেন মমতার দিকে তাকিয়ে।''