‘ধর্ম নয়, অপরাধ দেখুন'
২১ জুন ২০১৯‘মুসলিম' বুদ্ধিজীবী বলা হলেও কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা আবেদনের নিচে স্বাক্ষরকারীদের অনেকের পদবি পারসি ৷ তাতে অবশ্য চিঠির বয়ানের কোনও হেরফের হয়নি৷ কলকাতায় সাম্প্রতিক দুটি হাঙ্গামার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে শুরুতেই৷ এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর হামলা এবং সাবেক এক ‘মিস ইন্ডিয়া'র হেনস্থা৷ রাতে কাজ সেরে ওই নারী বাড়ি ফেরার সময় শহরের একটি ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে তাঁর উবার চালকের সঙ্গে একদল ছেলের বচসা হয়৷ তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিগৃহীত হন ওই নারী৷ তাঁর অভিযোগ, পুলিশও প্রথমে তাঁর অভিযোগ নথিবদ্ধ করতে অস্বীকার করে৷ ঠিক এনআরএস হাসপাতালের হামলার ঘটনায় যেমন পাহারায় থাকা পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে৷
আইন ভঙ্গের দুটি ঘটনাতেই যারা মূল অভিযুক্ত, তারা মুসলিম৷ ধর্মের কারণেই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকে বারবারই একথা বলা হয়েছে যে অপরাধীদের মুসলিম পরিচয়টিকে সামনে আনা হয়েছে৷ অনেকে বলছেন, সেই কারণেই প্রশাসন নিষ্ক্রিয়৷ এই প্রেক্ষাপটে ৫০ জন বুদ্ধিজীবী আবেদন জানালেন শুধু এ দুটি ঘটনাতেই নয় সব ক্ষেত্রেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয় শাস্তিবিধানের আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ যাতে জনগণের মনে এই ধারণা না ছড়ায় যে মুসলিম বলেই অপরাধ করেও কেউ পার পায়৷
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবদুর রউফ ডয়চে ভেলে–কে বললেন, ‘একটা রাজনৈতিক দলের তরফে এটা প্রচার করা হয়েছে, যে মুসলমানদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে৷ তাদের অপরাধীদেরও প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে৷ সেটা সত্যি কতটা, সেটা নিয়ে আমার একটু সংশয় আছে৷ কিন্তু এই মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যে চিঠিটা দিয়েছেন, ৫০ জন সই করে, এটা ঠিক করেছেন৷ এটা দরকার ছিল খুব৷ এই জন্যেই, যে, অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে কেন? ধর্ম দেখে?'
মুর্শিদাবাদের শিক্ষক নীলাঞ্জন সৈয়দ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখলেন— একজন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়ায় গাড়িতে কতগুলো লুম্পেন হামলা করেছিল৷ লুম্পেনগুলো জন্মসূত্রে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের৷ এজন্য ঐ সম্প্রদায়ের বিদ্বজ্জন প্রতিবাদ করেছেন৷ তাঁরা একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন৷ ‘লজ্জিত'৷ বাবা ছেলের বাজে কাজে লজ্জিত হন৷ এই লুম্পেনগুলোর সঙ্গে ঐ বিদ্বজ্জনদের কোন আত্মীয় সম্পর্ক নেই৷ কেবল একই কমিউনিটির, এইটুকুই মিল৷ এই বিদ্বজ্জনরা তাদের মানুষ করেননি৷ তা হলে দায়টা কোথা থেকে আসছে? এবং এই লুম্পেনগুলোর এটাই শেষ কাজ নয়৷ আরও বহু হবে৷ তখন প্রত্যেকটা কাজে তাঁরা লজ্জিত হবেন? মানুষের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে?যে, এই লুম্পেনগুলোর জন্য এই বিশেষ সম্প্রদায়ের দায় আছে?