কাতারকে চরমপত্রের মেয়াদ বাড়ল
৩ জুলাই ২০১৭রবিবার মধ্যরাত্রে চরমপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর তাদের দাবিদাওয়ার মেটানোর ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার জন্য দোহাকে আরো দু'দিন সময় দিতে সম্মত হয়েছে, নয়ত উত্তরোত্তর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনা থাকবে৷
সৌদি মালিকানার আল-আরাবিয়া নিউজ চ্যানেলের বিবরণ অনুযায়ী, অপরাপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে কাতার-কে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসি থেকে সাসপেন্ড করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ ছ'টি দেশের সম্বলিত এই জোট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতার সূত্রে আবদ্ধ৷
সৌদি আরব, ইউএই, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত ও ওমান, এই ছ'টি দেশ মিলে সৃষ্ট জিসিসি যে সব দেশ ও কোম্পানির কাতারের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন আছে, তাদের উপরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করতে পারে, বলে আল-আরাবিয়া জানিয়েছে৷
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানি চরমপত্রের দাবিদাওয়া সম্পর্কে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-জাবের আল-সাবাহকে সোমবার সরকারিভাবে কাতারের উত্তর জানাবেন, বলে আল-আরাবিয়া যোগ করেছে৷
মিশর, ইউএই, বাহরাইন ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীবর্গ বুধবার কায়রোয় মিলিত হয়ে কাতারের ব্যাপারে ‘‘ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ'' নিয়ে আলোচনা করবেন৷
গত ৫ই জুন এই চারটি দেশ ঘোষণা করে যে, তারা কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও পরিবহণ সংক্রান্ত সম্পর্ক ছিন্ন করছে – তাদের অভিযোগ, কাতার সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়; এছাড়া কাতার তাদের আঞ্চলিক বৈরি ইরানের মিত্র৷ এর ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে তীব্রতম কূটনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে৷ সৌদি আরব কাতারি বিমানের সৌদি বায়ু অঞ্চল দিয়ে ওড়া নিষিদ্ধ করেছে এবং কাতারের একমাত্র ভূমি সীমান্ত রোধ করেছে – যে সীমান্ত দিয়ে কাতার খাদ্য আমদানি করে থাকে৷
গত সপ্তাহে কাতার সৌদি নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর ১৩টি দাবির তালিকা প্রকাশ করে, যার মধ্যে রয়েছে: ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হ্রাস, ইসলামি গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থনের অবসান ঘটানো এবং দোহা-ভিত্তিক সম্প্রচার কেন্দ্র আল-জাজিরা ও তার টেলিভিশন চ্যানেলগুলি বন্ধ করা৷ এই সব দাবি পূরণ করা না হলে কাতারকে তার উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের তরফ থেকে ‘‘তালাকের'' ভয় দেখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত – এবং মন্তব্য করেছে যে, এই সব দাবি নিয়ে আলাপ-আলোচনার কোনো সুযোগ নেই৷
পরে ঐ চারটি দেশ কাতারের সঙ্গে যুক্ত বলে চিহ্নিত ৫৯ জন ব্যক্তি ও ১২টি গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে৷
জার্মানির তরফ থেকে আলাপ-আলোচনার ডাক
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল সোমবার একাধিক আরব দেশ সফরে যাত্রা করেছেন – তিনি উপসাগরের কূটনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য ‘‘আন্তরিক আলাপ-আলোচনা''-র আহ্বান জানিয়েছেন৷
‘‘বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আরব উপদ্বীপের ভ্রাতৃসুলভ দেশ ও প্রতিবেশিরা একটি সংঘাতে বাঁধা পড়ে রয়েছে যা উদ্বেগের সৃষ্টি করছে'', রবিবার একটি বিবৃতিতে বলেন গাব্রিয়েল৷
‘‘আমারা কোনো পক্ষে নই৷ কিন্তু যারা সরাসরিভাবে সংশ্লিষ্ট, এই সংঘাত শুধু তাদের জন্য নয়; আমাদের, এবং আমাদের স্বার্থের উপরও এর প্রভাব পড়ছে'', বলে গাব্রিয়েল মন্তব্য করেন৷
‘‘জিসিজি-কে সহযোগিতা ও সংঘাত সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হয়ে উঠতে হবে, বলে আমাদের বিশ্বাস৷ এছাড়া আমরা কুয়েতের আমিরের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা জোরালোভাবে সমর্থন করি'' – জার্মানি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও চরমপন্থিদের অর্থসংস্থান বন্ধ করার ডাক দিচ্ছে, বলে গাব্রিয়েল যোগ করেন৷
গাব্রিয়েল তাঁর তিনদিনব্যাপী সফরে সৌদি আরব, ইউএই, কাতার ও কুয়েত সফর করছেন৷
এসি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)