প্রতিবাদের নামে সহিংসতা
১৩ ডিসেম্বর ২০১৩দেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরায় প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ পুরো জেলাকে বিচ্ছিন্ন করে সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে জামায়াত-শিবির৷ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার পর সেখানে দু'জন আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ একইভাবে সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক-মহাসড়কে কাছ কেটে অবরোধ তৈরি করা হয়েছে৷ আর গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে আছেন৷ কেউ কেউ বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে গেছেন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিৃবতিতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার আশঙ্কা করে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷ আর ঢাকার মতিঝিল, ফকিরাপুল ও কমলাপুর এলাকায় হঠাত্ নাশকতা চালিয়ে গাড়ি ও দোকানপাট পোড়ানো হয়েছে শুক্রবার দুপুরের পর৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত একটি প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল হলেও তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিবাদ করছে৷ আর এটা তারা করছে বেশ কিছুদিন ধরেই৷ সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পরও তারা সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা চালায়৷ এটা বাংলাদেশ এবং সরকারের জন্য এক নতুন পরিস্থিতি৷''
তিনি জানান, সন্ত্রাসী সংগঠন সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা চালায়৷ কিন্তু জামায়াত-শিবিরের এই হামলা সবখানে৷ যা আরো ভয়ংকর৷ এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দাদের আরো সতর্ক এবং সক্রিয় হওয়া দরকার৷ কারণ তাদের হামলার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ৷
কাদের মোল্লার ফাঁসির কারণে বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতা বাড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত ইতিমধ্যেই জঙ্গি আচরণ করছে৷ এখন তারা যদি পুরোপুরি জঙ্গি হয়ে যায় সেটা তাদের ব্যাপার৷ তাই বলে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদেরতো আর ছেড়ে দেয়া যায় না৷ সরকারকেই সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি অপশক্তিকে রুখতে হবে৷''
জঙ্গি বিষয়ক গবেষক শরীফ এ কাফি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অঙ্গীকার৷ দেশের মানুষ এজন্য তাদের ভোট দিয়েছে৷ কিন্তু বিচারের ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়তে পারেনি সরকার৷ বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা প্রকাশ্যে বললেও নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে তারা আসলে এটাকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে৷ এর কারণ জামায়াত৷ বিএনপির পক্ষে জামাতের চাপ এড়ানো সম্ভব নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে না থাকলেও জামায়াত-শিবির সহিংসতা চালাচ্ছে দেশজুড়ে৷ আর এখন তাদের নেতার ফাঁসির প্রতিবাদে তারা আরো বেশি সহিংসতা চালাবে এটাই স্বাভাবিক৷ জামায়াত তার ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ এবং জনবল নিয়ে চরম প্রতিশোধ নিতে চাইবে৷''
সরকারের এই বিষয়টি জানা থাকলেও সরকারের পুলিশ, প্রশাসন বা গোয়েন্দারা সাধারণ মানুষকে রক্ষায় এখনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না বলে মনে করেন এই গবেষক৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সরকার সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে৷''
শরীফ এ কাফি বলেন, ‘‘জামায়াত-শিবির সন্ত্রাস করবে তাই যুদ্ধাপরাধের বিচার করা যাবে না এটা কোনো যুক্তি নয়৷ জামায়াত নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় একাত্তরে যেসব দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তাদের আঁতে ঘা লেগেছে৷ তাই স্বাভাবিক কারণেই তারা বিষয়টিকে সহজভাবে নেবে না৷ এই বিষয়টি সরকারকে মনে রাখতে হবে৷''
শাহেদুল আনাম খান এবং শরীফ এ কাফি দুজনই মনে করেন, জামায়াত তার সহিংস তত্পরতা নিয়ে কতদূর এগোতে পারবে তাও দেখার বিষয় আছে৷ কারণ সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর তারা যে মাত্রায় সহিংসতা চালাতে সক্ষম হয়েছিল এবার এখন পর্যন্ত তারা সেই মাত্রায় যেতে পারেনি৷ এর কারণ আগের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়েছে৷ কিন্তু যা নিয়েছে তা যথেষ্ট নয়৷