কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়
৯ মে ২০১৩
রায়কে সামনে রেখে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে৷ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় রয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা৷
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১০ সালের ২৯শে জুলাই৷ আর তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় একই বছরের ২রা আগস্ট৷
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সাত ধরণের মানবতা বিরোধী অভিযোগ আনা হয় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে৷ ট্রাইব্যুনাল-২'এ গত ১৬ই এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ সব ধরণের কাজ শেষ হয়৷ এরপর আজ বৃহস্পতিবার রায় দেয়া হলো৷ তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-২ দুপুরে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়৷ আদালতে ১৫২ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ প্রায় ৬২ পৃষ্ঠা পড়ে শোনানো হয়৷
কামারুজ্জামান শেরপুর অঞ্চলে হত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ৷ এছাড়া, আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বরসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়৷
২০১০ সালের ২৫শে মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর, এখনও পর্যন্ত মোট চারটি মামলার রায় ঘোষণা করা হলো৷ প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক নেতা মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে পলাতক অবস্থায় মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়৷ দ্বিতীয় রায়ে জমায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তৃতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়৷ ২৮শে ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃতু্যদণ্ডের রায় ঘোষণার পর, জামায়াত শিবির সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়৷ চার দিনের তাণ্ডবে তারা দেশের ২১টি জেলায় পুলিশ স্টেশনে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়িঘর এবং উপসনালয়ে আগুন দিয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে৷ সে সময় সারা দেশে পুলিশসহ প্রায় ১০০ জন নিহত হন৷
সেই ত্রাসের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলো৷ এটি ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ রায়৷ ব়্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কর্ণেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে জানান, রায় ঘেষণার পর এবার আর তাণ্ডব সৃষ্টির কোনো সুযোগ দেয়া হবে না৷ তাই শুধু ঢাকা নয় সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ পুলিশ, ব়্যাব ছাড়াও গোয়েন্দা জাল বিস্তার করা হয়েছে৷ আর ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এবং তার আশেপাশের এলাকা তিন স্তরের নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে৷
এদিকে, দুপুরে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে কামরুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের খবর এলে সেখানে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে৷ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে৷ তবে রায় ঘোষণার পর বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকায় কয়েকটি গাড়ি পোড়ানোর খবরও পাওয়া গেছে৷