কার মাথায় বালিশ আর পর্দার আড়ালে কে?
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯আমরা রাজনীতিকদের গালাগাল করি অথচ সারাক্ষণ তাদের নিকটে যাওয়ার ফিকির করি৷ বংশে কোনো এমপি, মন্ত্রী থাকলে তিন-চার পুরুষ ধরে তার রেফারেন্স দেই৷আমরা সরকারের সব কিছু খারাপ দেখি বা খারাপ জানি৷ যেমন পুলিশ খারাপ, প্রশাসন খারাপ, সরকারি ডাক্তার খারাপ, শুধু সরকারি চাকরি ভালো৷ একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য আমাদের তরুণেরা রাজপথে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকে, জাগরণের প্রধান অংশ ব্যয় করে কোন দেশের কোন রাজধানী, কোথায় কোথায় কী হচ্ছে তা খুঁজতে আর মুখস্থ করতে৷
আমাদের একটি হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের একটি পর্দা ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে কেনার খবরের বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ এর আগে পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয় ৬ হাজার টাকা৷
প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় এ ধরনের অভিযোগে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন৷ আমার কাছে কিন্তু মনে হয়, এরকমই তো হওয়ার কথা, এমনই তো হয়ে আসছে৷
একজন রাজনীতিবিদের কাছে গিয়ে যখন মেয়ের বিয়ে বা ছেলের পরীক্ষার খবর দেই, চেয়ারম্যান বা এমপি সাহেব যখন নিতান্ত অবহেলায় দুই বা পাঁচ হাজার টাকা গুঁজে দেন আমাদের হাতে বা ট্যাকে, তখন কি আমরা জানতে চাই অনেককে দান বা খয়রাত করার টাকা তিনি কোথায় পান?
লাখ টাকার কম বেতন পাওয়া আমাদের খালাতো ভাই যখন কোটি টাকা খরচ করে আমাদের দাওয়াত দেন বা ১০/১৫ লাখের উপহার দেন বা সাহায্য করেন, তখন কি আমরা জানতে চাই, এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন?
আমরা কী এরকম, যখন আমরা ভাগ পাই বা ভাগ পাওয়ার আশায় থাকি, তখন আমরা চুপ থাকি আর যখন আমাদের কোনো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তখন আমরা হইচই করি, করি তীব্র প্রতিবাদ?
আমরা কি নিজেদের স্বার্থেই এরকম অন্ধ হয়ে থাকব? নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য বা নিজে বড় হওয়ার জন্য আমরা অন্য মানুষকে, নিজের দেশকে ঠকাব? ঠকাতে পারি৷ কিন্তু মনে রাখবেন, ঠকানো একটা অভ্যাসের মতো৷ অপরিচিত, অনাত্মীয় থেকে আপনি বন্ধু, আত্মীয়, ভাই-বোন, মা-বাবা, স্ত্রী-স্বামী, ছেলে-মেয়ে, এমনকী নিজেকেও ঠকাতে শুরু করবেন৷
আমরা হয়তো ইতিমধ্যেই তা শুরু করে দিয়েছি, আমরা দেখছি আমাদের বিচারালয়গুলো ভরে উঠছে পরষ্পরের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমায়!